শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫

ইনফ্লেশন, পিরামিড আর বিশ্ব রাজনীতি—সব প্রশ্নের উত্তর একটাই

মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২৫, ০৯:১৩ পিএম

ইনফ্লেশন, পিরামিড আর বিশ্ব রাজনীতি—সব প্রশ্নের উত্তর একটাই

মানবসভ্যতার ইতিহাসে কিছু প্রশ্ন বারবার ফিরে আসে। আমাদের পকেটে টাকার ভ্যালু কেন কমে যায়? ফেরাউনের মতো শক্তিশালী সভ্যতা কেন ধ্বংস হয়ে যায়? আর কেন একের পর এক সুপার পাওয়ার আসে এবং আবার পতন ঘটে? প্রথম দেখায় এগুলো আলাদা আলাদা প্রশ্ন মনে হলেও, গভীরে তাকালে বোঝা যায়—আসলে সব প্রশ্নের উত্তর একটাই।

আজকের দুনিয়ায় আমরা ইনফ্লেশন নামক অদৃশ্য ডাকাতির শিকার হচ্ছি। ২০১৮ সালে ব্যাংকে রাখা এক লাখ টাকা পাঁচ বছর পরে কাগজে সমান থাকে, কিন্তু বাজারে তার মূল্য অর্ধেক হয়ে যায়। টাকাটা কোথায় হারাল? হারাল না—আপনার পকেট থেকে ধীরে ধীরে সরে গেল কর্পোরেট, ব্যাংক আর ক্ষমতাশালীদের হাতে। কুরআনে আল্লাহ স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, “আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বৃদ্ধি করেন।” (আল-বাকারাহ ২:২৭৬)। সুদভিত্তিক এ ব্যবস্থাই আমাদের সম্পদ গিলে নিচ্ছে, অথচ আমরা তা টেরও পাই না।

ইতিহাসে চোখ ফেরালে আরও স্পষ্ট হয়। ফেরাউনের সভ্যতা ছিল প্রযুক্তির শিখরে। কয়েক হাজার টন পাথর দিয়ে নির্মিত পিরামিড আজও প্রকৌশলীদের বিস্মিত করে। চিকিৎসা, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান—সবখানেই তাদের অগ্রগতি ছিল। কিন্তু তবু তারা টিকতে পারেনি। কেন? কারণ সভ্যতার ভিত্তি প্রযুক্তি নয়, ঈমান। আল্লাহ বললেন, “তোমরা কি দেখনি, তোমাদের আগে কত জাতিকে ধ্বংস করেছি—যারা তোমাদের চেয়ে শক্তিশালী ও প্রযুক্তিতে অগ্রসর ছিল?” (গাফির ৪০:৮২)। ফেরাউনের পতন তাই আমাদের জন্য সতর্কবার্তা—ঈমান ছাড়া টেকনোলজি কোনো সভ্যতাকে বাঁচাতে পারে না।

আজকের বিশ্ব রাজনীতিও সেই একই শিক্ষা দেয়। একদিন ব্রিটিশরা দাপট দেখিয়েছে, গত শতকে আমেরিকা সবার শীর্ষে উঠেছে, আর এখন বলা হচ্ছে চীন নতুন শক্তি হয়ে আসছে। কিন্তু এ খেলা আসলে মানুষের হাতে নয়। আল্লাহর ইচ্ছাতেই এক জাতি থেকে অন্য জাতিতে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়। তিনি বলেন, “হে আল্লাহ! আপনি রাজ্য দান করেন যাকে ইচ্ছা, কেড়ে নেন যার কাছ থেকে ইচ্ছা।” (আলে ইমরান ৩:২৬)। আধুনিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও শক্তির এই নাটক আসলে এক শয়তানি সিস্টেমের হাতিয়ার, যেখানে মুনাফা, সুদ আর শোষণই মূল চালিকাশক্তি।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, ইনফ্লেশন, পিরামিড আর বিশ্ব রাজনীতি—এগুলো আলাদা কোনো ঘটনা নয়। তিনটি মিলে একটিই সত্য প্রমাণ করে: আল্লাহর আইন ছাড়া গড়ে ওঠা যেকোনো ব্যবস্থা টেকে না। তা মানুষকে শোষণ করে, ধ্বংস করে, বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেয়।

অন্যদিকে, ইসলামি অর্থনীতিতে সুদমুক্ত লেনদেন মানুষকে মুক্ত রাখে; ঈমানভিত্তিক সভ্যতা টেকসই উন্নয়ন আনে; আর ন্যায়নিষ্ঠ রাজনীতি আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠা করে। এ তিনের সমন্বয়েই মানবতার মুক্তি নিহিত।

আজ আমাদের সামনে দুটি পথ। একদিকে শয়তানি সিস্টেমের দাসত্ব, যেখানে অর্থনীতি, প্রযুক্তি আর রাজনীতি মিলেমিশে মানুষকে অমানবিক করে তুলছে। অন্যদিকে আল্লাহর হুকুমের প্রতি আনুগত্য, যা সভ্যতাকে রক্ষা করে, মানুষের মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়। ইতিহাস সাক্ষী—ফেরাউনের পতন হয়েছে, আমেরিকা কিংবা চীনও অমর নয়। শেষ পর্যন্ত বিজয় মুমিনদেরই হবে।

আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, “নিশ্চয়ই আমি ও আমার রাসূলগণ জয়ী হব।” (মুজাদিলা ৫৮:২১)।
আমাদের কাজ শুধু একটি—ঈমানের উপর দৃঢ় থাকা এবং আল্লাহর সিস্টেমকে আঁকড়ে ধরা। তাহলেই সব প্রশ্নের উত্তর সহজ হয়ে যাবে।


লেখকঃ গবেষক ও বিশ্লেষক

মাতৃভূমির খবর

Link copied!