প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০১:২৯ পিএম
বাংলাদেশ এক ভয়াবহ বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গত এক বছরে ৬৩৭ জন মানুষ লিঞ্চিং বা গণপিটুনিতে নিহত—এমন তথ্য শুধু সংখ্যার হিসেব নয়, বরং রাষ্ট্রের আইনের শাসনের ভেঙে পড়ার এক মর্মান্তিক চিত্র।
শেখ হাসিনার পতনের পর মানুষ ভেবেছিল একটি নতুন সকাল আসবে, গণতন্ত্র ফিরে আসবে, জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখছি—আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুর্বল, বিচারব্যবস্থা অনিশ্চিত, আর হতাশাগ্রস্ত জনগণ নিজেরাই ন্যায়বিচারের ভার তুলে নিচ্ছে। এর ফল হচ্ছে ভয়ঙ্কর—জনতার বিচার এখন অনেক সময় নিষ্ঠুর প্রতিশোধে পরিণত হচ্ছে, যেখানে অপরাধী-নিরপরাধ কেউই সুরক্ষিত নয়।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দমননীতি ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ভেঙে গেছে। পুলিশ ও প্রশাসনের ভঙ্গুরতা মানুষের মনে আস্থার সংকট তৈরি করেছে। সামাজিক ক্ষোভ, দারিদ্র্য ও হতাশা মিলে সাধারণ মানুষ ক্ষণিকের উত্তেজনায় অপরাধীর শাস্তি নিজেরাই দিতে চাইছে।
এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তবে বাংলাদেশ দ্রুতই আইনের শাসনহীন একটি অরাজক সমাজে পরিণত হবে। গণপিটুনি কখনো ন্যায়বিচার হতে পারে না; এটি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সহিংসতাকে বৈধতা দেয়। আজ অপরাধীকে মারা হচ্ছে, কাল হয়তো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে, পরশু হয়তো ব্যক্তিগত শত্রুকে। এই চক্র চলতে থাকলে কোনো নাগরিকই নিরাপদ থাকবে না।
এখন জরুরি হলো আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। কমিউনিটি পুলিশিং শক্তিশালী করতে হবে, যাতে জনগণ আইনের আওতায় থেকেই অভিযোগ জানাতে পারে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল কার্যকর করতে হবে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে অপরাধী শাস্তি পায়। একই সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে—গণপিটুনি ন্যায়বিচার নয়, বরং এটি আরেকটি অপরাধ।
গণপিটুনি কখনো জনগণের শক্তি নয়, এটি দুর্বল রাষ্ট্রের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের বর্তমান অরাজক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কেবল রাজনীতি নয়, বরং বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন ও সমাজকে একসাথে দায়িত্ব নিতে হবে। আইনের শাসনই হলো গণতন্ত্রের আত্মা। জনতার হাতে বিচার নয়, রাষ্ট্রের হাতে ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনাই এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।