মনিকা সোহাগ
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৬:১৮ পিএম
মানুষের কল্পনা সীমিত। আমরা যতই জান্নাতের বর্ণনা শুনি—অক্ষয় বাগান, দুধ ও মধুর নহর, চিরন্তন শান্তি, দুঃখবিহীন জীবন—তবুও এগুলো কেবল বস্তুগত আনন্দের ছবি। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত এসব কিছু নয়। সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার মহামহিম মুখমণ্ডল দর্শনের সৌভাগ্য।
কুরআনে আল্লাহ বলেন— “যারা সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে ‘হুসনা’ (জান্নাত) এবং আরও বেশি কিছু।” (সূরা ইউনুস: ২৬) রাসূলুল্লাহ ﷺ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘হুসনা’ হলো জান্নাত এবং ‘ওয়া যিয়াদাহ’ অর্থাৎ অতিরিক্ত অনুগ্রহ হলো আল্লাহর মুখমণ্ডল দর্শন। জান্নাতবাসীরা যখন পরিপূর্ণ সুখ-শান্তিতে নিমগ্ন থাকবে, তখন আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন—“হে আমার বান্দারা, তোমরা কি সন্তুষ্ট?” তারা বলবে—“হে আল্লাহ, আমরা কীভাবে অসন্তুষ্ট হব? আপনি তো আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন!” তখন আল্লাহ তাদের থেকে পর্দা সরিয়ে দেবেন। আর তারা আল্লাহর মহিমাময় মুখমণ্ডল দেখবে। সে মুহূর্তে তাদের প্রাপ্তির আনন্দ আর কোনো নিয়ামতের সঙ্গে তুলনীয় হবে না।
এই দুনিয়ায় আল্লাহর মুখমণ্ডল কেউই দেখতে পারে না। মুসা (আঃ) আল্লাহকে দেখার আবেদন করেছিলেন। আল্লাহ তাকে বলেছিলেন—“তুমি আমাকে দেখতে সক্ষম হবে না।” (সূরা আ’রাফ: ১৪৩) কারণ আল্লাহর সৌন্দর্য, নূর এবং মহিমা এতটাই অপরিসীম যে এই পার্থিব জীবন তা ধারণ করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—“আল্লাহর একটি পর্দা রয়েছে, যা নূর দ্বারা আচ্ছাদিত। যদি সেই পর্দা সরিয়ে নেওয়া হয়, তবে তাঁর মুখমণ্ডলের নূর আসমান-জমিনের সবকিছু ধ্বংস করে দেবে।” (সহীহ মুসলিম) অতএব, আমাদের জন্য আল্লাহর পর্দা দয়া। তাঁর মুখমণ্ডল এমন এক সৌন্দর্য, যা দুনিয়ার চোখ সহ্য করতে পারে না। জান্নাতেই প্রথমবার সেই পর্দা উঠবে, আর তখন মুমিনেরা অর্জন করবে সেই অনুপম নিয়ামত।
কুরআনে বলা হয়েছে— “সেদিন কিছু মুখমণ্ডল উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান হবে। তারা তাদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে।” (সূরা ক্বিয়ামাহ: ২২-২৩) অতএব, জান্নাতে আল্লাহর মুখমণ্ডল দর্শনের সময় মুমিনদের মুখমণ্ডল আলোকিত হবে। সেই নূর তাদের অন্তরে এমন প্রশান্তি দেবে, যা দুনিয়ার কোনো সুখের সঙ্গে তুলনা হয় না। কুরআন ও হাদিসে আল্লাহর মুখমণ্ডলকে বর্ণনা করা হয়েছে “জালাল ও ইকরাম”-এর মুখমণ্ডল হিসেবে। জালাল অর্থ মহিমা, গরিমা, ভীতি ও মর্যাদা। আর ইকরাম অর্থ মহৎ সম্মান, অনন্য মর্যাদা ও দয়া। অতএব, যে বান্দা আল্লাহর মুখমণ্ডল দেখবে, সে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হবে। এর চেয়ে বড় সম্মান বা আনন্দ আর কিছু নেই।
যদিও দুনিয়ায় আমরা আল্লাহকে দেখতে পারি না, তবে কুরআন জানাচ্ছে—আমাদের আমল, ধৈর্য, ব্যয়, সৎকাজ সবকিছু আসলে আল্লাহর মুখমণ্ডল দেখার প্রস্তুতি। যে দান করে, আল্লাহ বলেন সে দান করছে “আমার মুখমণ্ডল দেখার আশায়।” যে আত্মীয়ের হক আদায় করে, যে কষ্টে ধৈর্য ধরে, সবই হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দর্শন লাভের উপায়।
জান্নাতের বাগান, নহর, অমর সুখ—এসব নিঃসন্দেহে মহা নিয়ামত। কিন্তু এর চেয়েও বড় নিয়ামত হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার মুখমণ্ডল দর্শন। সেই দর্শন এমন এক সম্মান, যা মানুষের কল্পনার বাইরে। আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য তাই কেবল জান্নাত পাওয়া নয়, বরং জান্নাতের সবচেয়ে বড় পুরস্কার—আল্লাহর মুখমণ্ডল দর্শনের যোগ্যতা অর্জন করা। এজন্য দরকার নেক আমল, ধৈর্য, ত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি অবিচল আনুগত্য। মুমিনদের জন্য তাই সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হতে পারে—“হে আল্লাহ, আমাদেরকে জান্নাত দিন, আর জান্নাতে আপনার মুখমণ্ডল দর্শনের সৌভাগ্য দান করুন।”
মাতৃভূমির খবর