মনিকা সোহাগ
প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৪:০৪ পিএম
আমাদের জীবনে বারবার এমন পরিস্থিতি আসে যেখানে আমাদের সঠিকের পথে হাঁটার সুযোগ থাকে, অথচ আমরা নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে সেই পথ এড়িয়ে যাই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, শেষ বিচারে আমরা আমাদের কাজ ও কর্মের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করব। কুরআনে আল্লাহ তাআলা সূরা আল-বাকারায় বলেন—
“তোমরা হয়তো কোনো কিছু অপছন্দ কর অথচ সেটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার তোমরা কোনো কিছু ভালোবাসো অথচ সেটাই তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।”
আমাদের জ্ঞান সীমিত, মহাসাগরের তুলনায় একটি বিন্দুর মতো। আর আল্লাহ তাআলার জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে। তাই অনেক সময় আমরা যে পরিকল্পনা করি, আল্লাহ তাআলার পরিকল্পনার সঙ্গে তা মিলে যায়। যেমন— তুমি ঠিক করেছো একটি কলেজে ভর্তি হবে, আর আল্লাহও তোমাকে সেখানে সুযোগ দিয়েছেন। আবার অনেক সময় তুমি একটি চাকরিতে দীর্ঘদিন থাকতে চাও, কিন্তু ছয় মাসের মধ্যেই চাকরি হারাও। তুমি হয়তো সেরা আবেদন করেছো, কিন্তু ভর্তি হয়নি। অথচ অন্য কেউ কম যোগ্য হয়েও ভর্তি হয়েছে। এ সবই আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ।
আল্লাহ বলেন, “ইনশাআল্লাহ” বলা শিখো, আর ভুলে গেলে তোমার প্রভুকে স্মরণ করো এবং বলো— হয়তো আমার প্রভু আমাকে সঠিক পথে আরও ভালো কিছু দিকে পরিচালিত করবেন।”
আমরা চেষ্টা করব, পরিকল্পনা করব, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন কেবল আল্লাহ। প্রতিদিন পৃথিবীতে হাজারো মানুষ কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়। যখন তা অন্যের জীবনে ঘটে, আমরা সহজে মেনে নিই। কিন্তু যখন নিজ জীবনে ঘটে, তখন বলি—“কেন সবসময় আমার সাথেই এমন হয়?” তখন আমরা নিজেদের শিকার ভাবতে শুরু করি। অথচ সত্য হলো, বিশ্ব আমাদের ভাগ্য ঠিক করে না— একমাত্র আল্লাহই আমাদের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেছেন, জন্মের আগেই।
কুরআনে এসেছে: “তিনি আসমান ও জমিনের সবকিছু জানেন। সবই একটি কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। আর তা আল্লাহর জন্য সহজ।”
আল্লাহর পরিকল্পনার প্রতি আস্থা (তাওয়াক্কুল)
আমরা কিভাবে শিখব সবসময় আল্লাহর পরিকল্পনার প্রতি আস্থা রাখতে? প্রথমেই নিজেকে মনে করিয়ে দাও কেন তুমি আল্লাহতে বিশ্বাস করো, কেন ইসলাম গ্রহণ করেছো। এই উপলব্ধি তোমাকে দৃঢ় করবে। আল্লাহ কখনও এমন কোনো পরীক্ষা দেন না যা তুমি সহ্য করতে পারবে না। তাই ধৈর্য ধরো, হাল ছেড়ো না।
তাওয়াক্কুল মানে শুধু মুখে ভরসা করা নয়। এটি হলো সক্রিয় বিশ্বাস। যেমন, একবার এক বেদুইন তার উটকে বেঁধে না রেখে বলল—“আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করেছি।” তখন রাসূল ﷺ বললেন: “তুমি আগে উটকে বেঁধে রাখো, তারপর আল্লাহর ওপর ভরসা করো।”
অর্থাৎ আল্লাহর ওপর ভরসা মানে বসে থাকা নয়— বরং নিজে চেষ্টা করা, এরপর আল্লাহর সাহায্যের অপেক্ষা করা।
আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহই রিজিকদাতা, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা বসে থাকব। আমাদের পরিশ্রম করতে হবে, চেষ্টা করতে হবে। রোগ থেকে বাঁচতে যেমন সাবধানতা নিতে হয়, তেমনি জীবনের সবক্ষেত্রেই কাজ করতে হবে।
তাওয়াক্কুলের ফল
তাওয়াক্কুল আমাদের মনে শান্তি আনে। জীবনের প্রতিটি দুশ্চিন্তা কমে যায়। কারণ তখন আমরা জানি—আমরা চেষ্টা করেছি, এখন ফল আল্লাহর হাতে। তিনি যেটাই নির্ধারণ করবেন সেটাই কল্যাণ।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেছেন:
“তাওয়াক্কুলের ফল হলো আল্লাহর ফয়সালাকে কবুল করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর হাতে তার কাজগুলো ছেড়ে দেয় এবং যা পায় তাতে সন্তুষ্ট থাকে— সেও প্রকৃত তাওয়াক্কুলকারী।”
আমাদের কর্তব্য হলো চেষ্টা করা, পরিকল্পনা করা, পরিশ্রম করা। তারপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখা আল্লাহর ওপর। ফলাফল যাই হোক না কেন, সেটাই আমাদের জন্য সর্বোত্তম।
মাতৃভূমির খবর