শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

টুপি ছাড়া কি নামাজ হবে?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০২:১৩ পিএম

টুপি ছাড়া কি নামাজ হবে?

মুসলমান তার ধর্মের প্রতীক বহন করবে এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীতে অনেক ধর্ম-বর্ণের মানুষ বসবাস করে। সবারই একেকটি প্রতীক থাকে। মুসলমানকে আলাদা করা যায় মাথার টুপির মাধ্যমে। টুপি নিছক প্রতীক প্রকাশক অনুষঙ্গই নয়, এটা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতও বটে। আল্লাহর রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম গুরুত্বের সঙ্গে টুপি পরেছেন। হজরত হাসান বিন মেহরান থেকে বর্ণিত, একজন সাহাবি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর দস্তরখানে বসে খাবার খেয়েছি এবং তাঁর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি। (আল ইসাবাহ : ৪/৩৩৯)। 

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি পাগড়ি ছিল, যা তিনি আলি (রা.)-কে পরিয়েছিলেন। তিনি পাগড়ি পরতেন এবং পাগড়ির নিচে টুপি পরতেন। তিনি কখনো পাগড়ি ছাড়া টুপি পরতেন। কখনো টুপি ছাড়াও পাগড়ি পরতেন। (যাদুল মাআদ : ১/১৩৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মতো সাহাবায়ে কেরামও টুপি পরেছেন। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, তারা (সাহাবায়ে কেরাম গরমের কারণে) পাগড়ি বা টুপির ওপর সেজদা করতেন (বুখারি)। হাসান বসরি (রহ.) অনেক বড় মনীষী তাবেয়ি ছিলেন, যিনি অনেক সাহাবিকে দেখেছেন এবং তাদের সাহচর্য গ্রহণ করেছেন। সুলাইমান ইবনে আবু আবদুল্লাহ বলেন, আমি প্রথম সারির মুহাজিরদের দেখেছি—তারা কালো, সাদা, লাল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি রঙের সুতির পাগড়ি পরতেন। তারা পাগড়ির কাপড় মাথায় রেখে তার ওপর টুপি রাখতেন। এরপর তার ওপর পাগড়ি ঘুরিয়ে পরতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১২/৫৪৫)

ইসলামে পোশাকের সৌন্দর্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নামাজের সময় তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করো’ (সুরা আরাফ : ৩১)। আর ইসলামের শিয়ার বা প্রতীক টুপি অবশ্যই সুন্দর পোশাক। হজরত যুহাইর (রহ.) বলেন, আমি প্রখ্যাত তাবেয়ি আবু ইসহাক সাবিয়িকে দেখেছি, তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ পড়েছেন। তিনি মাটি থেকে টুপি উঠিয়ে মাথায় পরেছেন (তাবাকাতে ইবনে সাদ : ৬/৩১৪)। তাই ফুকাহায়ে কেরাম নামাজে টুপি পরা সুন্নত বলেছেন এবং অবহেলা করে টুপি না পরে নামাজ পড়াকে মাকরুহ বলেছেন, যদিও নামাজ আদায় হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার : ১/৬৪০)

প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী গায়ের অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে মানানসই টুপি পরিধান করা প্রয়োজন। অনেক দাম দিয়ে পায়ের জুতা কেনা গেলেও দুঃখজনকভাবে অনেকেই টুপির জন্য বরাদ্দ রাখেন সামান্য পয়সা। মসজিদের সামনে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে টুপি কিনতে দেখা যায় সামর্থ্যবান অনেক মানুষকেও। বছর বা সপ্তাহজুড়ে খবর না রেখে ঈদ বা জুমার নামাজে যাওয়ার আগে টুপি খোঁজাখুঁজি করা ইসলামের এই নিদর্শন জাতীয় পোশাকের প্রতি ধনী-গরিব সবার জন্যই চরম অবহেলার নামান্তর। সামর্থ্যবানদের জন্য তিলাপড়া, ছেঁড়া-ফাটা যেনতেন টুপি পকেটে রাখা, নামাজে দাঁড়ানোর আগে ফুঁ দিয়ে কোনোরকম মাথায় লাগানো নিন্দনীয় ও রুচিহীন ব্যাপার। যে পোশাক পরে কোনো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যেতে বিবেকে বাধে, মান-সম্মানের প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়, সে পোশাক পরে নামাজে দাঁড়িয়ে কীভাবে মহান স্রষ্টা আল্লাহর সামনে হাজিরা দেওয়া সম্ভব হবে? 

মাতৃভূমির খবর

Link copied!