বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

১ ঘন্টায় ৪ ঘন্টার পড়া শেষ করার উপায়

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৯:৩৪ পিএম

১ ঘন্টায় ৪ ঘন্টার পড়া শেষ করার উপায়

ছবি: মাতৃভূমির খবর ডিজিটাল

বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অভিযোগ করে—ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়াশোনা করলেও তা মনে থাকে না। অন্যদিকে কেউ কেউ মাত্র এক ঘণ্টায় এমনভাবে পড়াশোনা করে যে চার ঘণ্টার সমান কাজ শেষ করে ফেলে। প্রশ্ন জাগে, এটা কি ভাগ্য নাকি যাদু? আসলে এটি কোনো যাদু নয়, বরং বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা কিছু কার্যকর অভ্যাস।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যখন মস্তিষ্কে অতিরিক্ত ডোপামিন প্রবাহিত হয় (যেমন ঘুম থেকে উঠে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করলে), তখন সাধারণ কাজগুলো—বিশেষত পড়াশোনা—গুরুত্ব হারায়। তাই সফল শিক্ষার্থীরা পড়া শুরুর আগে নিজেদের ‘মানসিক মাঠ’ তৈরি করে। মাত্র এক মিনিট নীরবে বসে থাকা, শ্বাস-প্রশ্বাসে মনোযোগ দেওয়া, এবং মনে মনে বলা—“এটা আমার সময়”—মস্তিষ্ককে পড়াশোনার জন্য প্রস্তুত করে তোলে।

পড়াকে গল্পে রূপান্তর করার কৌশলও অত্যন্ত কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, ইতিহাস মুখস্থ না করে শিক্ষার্থী যদি নিজেকে ১৯৪৭ সালের একজন সাংবাদিক কল্পনা করে, তবে ঘটনার বর্ণনা ও অনুভূতি তার মনে অনেক গভীরভাবে গেঁথে যায়। একইভাবে ইংরেজির কম্প্রিহেনশন পড়তে গিয়ে প্রশ্নকে পরীক্ষক নয়, বরং ছোট ভাইয়ের জিজ্ঞাসা হিসেবে ধরলে উত্তর অনেক সহজে গুছিয়ে বলা যায়।

শিক্ষার আরেকটি কৌশল হলো—‘অ্যাক্টিভ রিকল’। অর্থাৎ পড়তে পড়তেই কাউকে বোঝানোর মতো করে ব্যাখ্যা করা। এমনকি সামনে কেউ না থাকলেও একটি চেয়ার বা দেয়ালকে শ্রোতা বানানো যেতে পারে। এতে নিজের কণ্ঠস্বরই শিক্ষার্থীকে শেখার গতি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

বিরক্তি জয় করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। সাধারণত সবাই তখনই পড়াশোনা করে যখন মন চায়। কিন্তু যারা প্রকৃত অর্থে সফল, তারা মন চাইলেও না চাইলেও পড়ার অভ্যাস বজায় রাখে। মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এই অভ্যাস এক ঘণ্টার পড়াকে চার ঘণ্টার সমান ফলপ্রসূ করে তোলে।

এছাড়া বিজ্ঞানীরা বলেন, মাথায় জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় চিন্তাই পড়ার পথে বড় বাধা। সমাধান? একটি কাগজে সব চিন্তা লিখে ফেলে দেওয়া। এতে মস্তিষ্ক খালি হয়ে যায়, আর পড়াশোনা স্পষ্টভাবে মনে থাকে।

শেখাকে খেলায় রূপান্তর করাও একটি কার্যকর কৌশল। গণিতকে গেমের লেভেল ধরা যায়—আজকের লক্ষ্য একটি ফর্মুলা আয়ত্ত করা মানে ‘লেভেল ওয়ান’ সম্পন্ন করা। আবার শব্দগুলোকে গান বানিয়ে মুখস্থ করলে তা দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কে থেকে যায়।

মূলত, পড়াশোনা মুখস্থ করার প্রতিযোগিতা নয়; এটি জীবনের আলো জ্বালানোর খেলা। প্রতিটি অধ্যায় মস্তিষ্কের নতুন এক অংশকে জাগিয়ে তোলে। যারা এক ঘণ্টায় চার ঘণ্টার সমান শিখে ফেলে, তারা সময় খরচ করে না, বরং সময়কে বিনিয়োগ করে।

শেষ কথা হলো—এক ঘণ্টা মানে কেবল ষাট মিনিট নয়। সঠিক মনোযোগ, সঠিক পদ্ধতি আর সঠিক মানসিকতা দিয়ে পড়লে সেই এক ঘণ্টাই চার ঘণ্টার সমান হয়ে যায়।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!