বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

কুরআনের আলো থেকে ও লেভেল শ্রেষ্ঠত্ব: এক রত্নগর্ভা মায়ের গল্প

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৫, ০৯:৫৭ পিএম

কুরআনের আলো থেকে ও লেভেল শ্রেষ্ঠত্ব: এক রত্নগর্ভা মায়ের গল্প

ছবি: হাফেযা আয়েশা চিশতী

দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামিক ইংলিশ মিডিয়াম এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ইতিহাসে যুক্ত হলো এক অনন্য অধ্যায়। স্কুলের শিক্ষার্থী হাফেযা আয়েশা চিশতী (আইডি: ২০১৬৪০১) জুন ২০২৫ এডেক্সেল আইজিসিএসই পরীক্ষায় অর্জন করেছে অভূতপূর্ব সাফল্য—পাঁচটি ৯ (যা সর্বোচ্চ ডিস্টিংশন, A* এরও ওপরে) এবং চারটি A*। এই অসাধারণ সাফল্য শুধু একজন শিক্ষার্থীর নয়; এটি একটি পরিবারের সংগ্রামের কাহিনি, এক মায়ের অদম্য ধৈর্য, ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি।

এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে বর্তমানে প্রায় একশ’র মতো হাফেয ও হাফেযা রয়েছেন। কিন্তু এদের মধ্যে প্রথম যে শিক্ষার্থী পূর্ণ কুরআন হিফয সম্পন্ন করে স্কুল ও পরিবারকে গর্বিত করেছিল, সে হলো আয়েশা চিশতী। অতি অল্প বয়সে কুরআনের আলো হৃদয়ে ধারণ করে সে আজ এক দৃষ্টান্ত। কুরআনের হিফয শেষ করার পরও সে থেমে থাকেনি; কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং আন্তর্জাতিক পরীক্ষায়ও প্রমাণ করেছে তার মেধা ও নিষ্ঠা।

আয়েশার সাফল্যের পেছনে আছেন এক নিঃস্বার্থ, ত্যাগী, রত্নগর্ভা মা। শুধু আয়েশাই নয়, তাঁর আরও দুই ছেলে এবং এক মেয়ে এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে কুরআনের হিফয সম্পন্ন করেছে এবং বর্তমানে এই স্কুলেই অধ্যয়ন করছে। চার সন্তানকেই হাফেয বানানো কোনো সাধারণ বিষয় নয়। দিনের পর দিন সন্তানদের স্কুলে আনা–নেওয়া, শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, রাত জেগে পড়াশোনার খোঁজখবর নেওয়া, প্রতিটি ভুল ধৈর্য ধরে সংশোধন করা—সবই এই মায়ের জীবনসংগ্রামের অংশ ছিল। তিনি জানতেন, হিফয শুধু মুখস্থ করার নাম নয়; এটি এক মহৎ সাধনা, এক মূল্যবান আমানত। সন্তানদের ক্লান্তি, কান্না কিংবা অস্থিরতা—সব তিনি ধৈর্য দিয়ে সামলেছেন। নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়েছেন, কিন্তু সন্তানদের স্বপ্নকে জ্বলজ্বল করতে দিয়েছেন। তাঁর চোখের পানিই ছিল অনুপ্রেরণা, তাঁর ভালোবাসার দোয়াই ছিল শক্তি।

এ প্রসঙ্গে আয়েশা চিশতীর মা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমি প্রথমেই শুকরিয়া জানাই আমার রবকে, যিনি আমার সন্তানদের কুরআনের হিফয সম্পন্ন করার তাওফিক দিয়েছেন এবং আজকে এই সাফল্যের সম্মান আমাদের দিয়েছেন। আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব স্কুল আনিসুর রহমান সোহাগ স্যারকে, যিনি সবসময় আমাদের পাশে থেকেছেন এবং আমাদের সন্তানদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও ইসলামি পরিবেশ নিশ্চিত করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ স্কুলের ম্যানেজমেন্ট, ভাইস প্রিন্সিপাল, প্রতিটি শিক্ষকের প্রতি, যারা পরিশ্রম ও ভালোবাসা দিয়ে আয়েশাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আজকের এই অর্জন শুধু আমার পরিবারের নয়, বরং পুরো এভেরোজ পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল।”

এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল শুরু থেকেই বিশ্বমানের শিক্ষা ও ইসলামি আদর্শের সমন্বয় ঘটাতে সচেষ্ট। প্রতি সেশনে এই স্কুল থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী ওয়ার্ল্ড হাইয়েস্ট, কান্ট্রি হাইয়েস্ট অর্জন করছে। ইতিমধ্যেই বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১-১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫টিতে এভেরোজের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই আয়েশা সাফল্য পেয়েছে। তবে এর বিশেষত্ব হলো—সে প্রথমে কুরআনকে আঁকড়ে ধরেছে, তারপর একাডেমিক উৎকর্ষতায় প্রমাণ করেছে তার মেধা। এই সমন্বয় এক বিরল ব্যাপার, যা নিঃসন্দেহে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।

আয়েশার পরিবার বিশ্বের সামনে এক আদর্শ পরিবার। যেখানে মা–বাবা সন্তানদের প্রতি শুধু দায়িত্বই পালন করেননি, বরং তাঁদের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আর বাবার নিরব সমর্থন মিলেই গড়ে উঠেছে একটি আলোকিত পরিবার। তাঁদের জীবনের এই সংগ্রাম প্রমাণ করে—সন্তান লালন-পালনে মা–বাবার ভূমিকা কতটা অপরিসীম।

এ প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব স্কুল মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগ বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, আয়েশা চিশতীর এই অসাধারণ অর্জন এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কুরআনের হিফয সম্পন্ন করার পর আবারও একাডেমিক পরীক্ষায় বিশ্বমানের ফলাফল এনে সে প্রমাণ করেছে, সঠিক দিকনির্দেশনা ও প্রচেষ্টা থাকলে আমাদের শিক্ষার্থীরা যেকোনো উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। এ সাফল্যের কৃতিত্ব আয়েশা, তার মা–বাবা, এবং আমাদের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকদের। আমরা বিশ্বাস করি, আয়েশার মতো শিক্ষার্থীরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে আলোকিত করবে।”

এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী আয়েশা চিশতীর এই সাফল্য তাঁর মায়ের অশ্রু, ত্যাগ, ধৈর্য ও দো‘আর ফল। তিন সন্তানকে হাফেয বানানো এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক শিক্ষাব্যবস্থায় সেরা অর্জন—এমন উদাহরণ বিরল। এটি শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্য এক গর্বের বিষয়। এক রত্নগর্ভা মায়ের হাতে গড়ে ওঠা এই সন্তান আমাদের সামনে প্রমাণ করে দিয়েছে, বিশ্বাস, ত্যাগ আর ভালোবাসা থাকলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!