শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

ইসলামের আলোকে ভূতের রহস্য

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ০১:৪২ পিএম

ইসলামের আলোকে ভূতের রহস্য

ছবি: মাতৃভূমির খবর ডিজিটাল

আমরা সবাই ভূতের গল্প শুনেছি—রাতে ছায়া দেখা, ফাঁকা ঘরে অদৃশ্য কণ্ঠস্বর শোনা। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, ইসলাম অনুযায়ী ভূত কি সত্যিই আছে? আসুন কোরআন, হাদিস এবং আমাদের ক্লাসিক্যাল আলেমদের মতামতের আলোকে সত্যটা জানি।

পশ্চিমা সংস্কৃতিতে—বিশেষ করে হলিউডের সিনেমা ও টিভি শোগুলোর মাধ্যমে—ভূতকে মৃত মানুষের আত্মা হিসেবে দেখানো হয়, যারা পৃথিবীতে রয়ে গেছে কোনো অসমাপ্ত কাজ বা জীবদ্দশায় ঘটে যাওয়া কোনো ট্র্যাজেডির কারণে। ধারণা করা হয়, এ কারণে তাদের আত্মা পরবর্তী জগতে যেতে পারে না। কিন্তু এসব গল্প পুরোপুরিই কল্পকাহিনি, যার কোনো প্রমাণ নেই। ভূত শিকারিরা অনেক সময় অদ্ভুত সংকেত বা উপস্থিতির দাবি করলেও, আসলে তারা কীসের মুখোমুখি হচ্ছে বা কোথা থেকে আসছে—তা তারা নিজেরাই জানে না।

কিন্তু ইসলাম এই বিষয়ে ভিন্ন ও সরাসরি অবস্থান নেয়। ইসলামি ব্যাখ্যা পশ্চিমা কল্পকাহিনি থেকে অনেক বেশি গভীর ও পরিষ্কার।

মৃত্যুর পর আত্মা কোথায় যায়?

কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, মৃত্যু হলে মানুষের আত্মা আল্লাহর কাছে ফিরে যায়।
আল্লাহ বলেন:
প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, তারপর তোমরা আমার কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা আনকাবুত ২৯:৫৭)

ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত্যু হলে আত্মা প্রবেশ করে বরযখে—যা হলো এ দুনিয়া ও আখিরাতের মাঝের এক পর্দা। বরযখ কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তাই এই সময়ে মৃত মানুষের আত্মা পৃথিবীতে অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারে না।
আল্লাহ বলেন:
“…আর তাদের পেছনে আছে বরযখ, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত।” (সূরা মুমিনূন ২৩:১০০)

এখান থেকে প্রমাণিত হয়, মৃতদের আত্মা জীবিতদের কাছে ফিরে এসে ভয় দেখায় না।

তাহলে মানুষ কী দেখে?

আল্লাহর এক সৃষ্টিজীব হলো জিন। তারা আমাদের মতোই পৃথিবীতে বাস করে, তবে অনেক উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে, যা মানুষের চোখে অদৃশ্য। যেমন মানুষ উচ্চতর শব্দ শুনতে পারে না, তেমনি ফেরেশতা ও জিনদেরও দেখতে পায় না।

কোরআনে আল্লাহ বলেন,
তিনি জিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াহীন আগুন থেকে।” (সূরা আর-রহমান ৫৫:১৫)

জিনরা অনেক সময় নানা রূপ নিতে পারে, এমনকি মৃত আত্মীয়-স্বজনের কণ্ঠস্বর বা চেহারা নকল করতে পারে। এর ফলে অনেকেই মনে করে যে তারা ভূতের সাক্ষাৎ পেয়েছে। বাস্তবে এসব ঘটনা হলো জিনদের কার্যকলাপ, বিশেষ করে শয়তানি জিন (শয়াতিন) এর।

আল্লাহ কোরআনে বলেন:
নিশ্চয়ই শয়তান ও তার দল তোমাদের এমন জায়গা থেকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না।” (সূরা আ’রাফ ৭:২৭)

সুরক্ষা ও প্রতিরোধ

যদিও জিন আমাদের দেখতে পায়, আমরা তাদের দেখতে পারি না। তবে আমাদেরকে সুরক্ষা দিতে আল্লাহ কোরআনের বিভিন্ন আয়াত দিয়েছেন।
রাসূল শিখিয়েছেন—সকালে সূর্য ওঠার আগে এবং বিকেলে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে কোরআনের সুরক্ষার আয়াতগুলো পাঠ করলে এটি একটি আধ্যাত্মিক ঢাল তৈরি করে।

অনেক মানুষ জিনের দ্বারা আক্রান্ত বা আবিষ্ট হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তবে মনে রাখতে হবে—মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই জিনদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

ইসলামে ভূতের ধারণা নেই। মৃতদের আত্মা বরযখে অবস্থান করে এবং পৃথিবীতে ফিরে আসে না। মানুষ যাকে ভূত ভাবে, তা আসলে জিনের কার্যকলাপ।

আল্লাহ মানবজাতিকে সর্বোত্তম সৃষ্টি করেছেন, তাই ভয় নয়—বরং আল্লাহর স্মরণ ও কোরআনের আয়াত দ্বারা সুরক্ষা গ্রহণই হলো সমাধান।

 

মাতৃভূমির খবর

Link copied!