শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

কোরআনের নিরাময়শক্তি: বিজ্ঞানীদের বিস্ময়

মনিকা সোহাগ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ০১:১৭ পিএম

কোরআনের নিরাময়শক্তি: বিজ্ঞানীদের বিস্ময়

ছবি: মাতৃভূমির খবর ডিজিটাল

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের মস্তিষ্কে কোরআন এমন প্রভাব ফেলে যা তারা আগে কল্পনাও করেননি। এক গবেষণায় ১৫০০ জন অংশগ্রহণকারীর উদ্বেগের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। দেখা যায়, কোরআন শোনার পর তাদের মধ্যে এক বিরাট পরিবর্তন ঘটে। উদ্বেগের মাত্রা নাটকীয়ভাবে কমে যায়, অংশগ্রহণকারীরা হয়ে ওঠেন শান্ত ও স্বস্তিদায়ক।

আমরা অনেকেই ব্যক্তিগত জীবনে এটি অনুভব করি। দুঃখ, দুশ্চিন্তা বা চাপের মুহূর্তে কোরআন তিলাওয়াত শোনার পর মন শান্ত হয়ে আসে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা এই অভিজ্ঞতাকে এখন প্রমাণ দিয়ে সমর্থন করছে।

গবেষকরা জানান, কোরআন শোনার ফলে মস্তিষ্কে আলফা ওয়েভ বেড়ে যায়। এ ধরনের তরঙ্গ মানুষকে শান্ত, মনোযোগী ও একাগ্র করে। আরেকটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের দুই সপ্তাহ ধরে নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করতে বলা হয়। তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিষণ্ণতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি শুধু মানসিক প্রশান্তিই নয়; বরং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কোরআন কার্যকর বিকল্প হতে পারে।

বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ উদ্বেগ ও বিষণ্ণতায় ভুগছে। বিষণ্ণতা শুধু মানসিক নয়, শারীরিকভাবেও ভয়াবহ ক্ষতি করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি স্মৃতি, পরিকল্পনা, বিচারবোধ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী মস্তিষ্কের অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ডাক্তাররা দেখেছেন, নতুন ওষুধ অনেক সময় স্নায়ুকোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করলেও এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুরুতর হতে পারে।

অন্যদিকে, কোরআন শোনার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বরং এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি প্রদান করে।

এ বিষয়ে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি আরও পরিষ্কার। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন—
যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে কষ্টময়। (সূরা ত্বাহা, ১২৪)

অভিনেতা জিম ক্যারিও একবার বলেছিলেন, ডিপ্রেশন আসলে Deep Rest—অর্থাৎ গভীর বিশ্রাম—যা মানুষের আত্মা চায়। ইসলাম বলছে, সেই বিশ্রাম আসে স্রষ্টার স্মরণে, আর তার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম কোরআন।

আন্তর্জাতিক এক জরিপে ১৩২ দেশ ও ১,৪০,০০০ মানুষের জীবনমান ও সুখ নিয়ে গবেষণা করা হয়। ধনী দেশগুলোতে বিলাসিতা থাকলেও আত্মহত্যা ও হতাশার হার বেশি। অপরদিকে অপেক্ষাকৃত কম আরামদায়ক জীবনে থাকা মানুষ, যারা জীবনের উদ্দেশ্যকে গুরুত্ব দেয়, তারা অনেক বেশি শান্ত ও সহনশীল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থবহ জীবনের সাথে সুখের যোগসূত্র স্পষ্ট। আর আল্লাহর বাণী এই সত্যকে প্রতিফলিত করে—
যে আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে, সে কখনো পথ হারাবে না, কখনো দুর্বিষহ হবে না। (সূরা ত্বাহা, ১২৩)

বিজ্ঞান ও কোরআনের বাণী একই সত্যকে সামনে আনছে—মানুষের প্রকৃত প্রশান্তি স্রষ্টার স্মরণেই নিহিত। আধুনিক ওষুধ যেখানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়, সেখানে কোরআন শোনা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ, সহজলভ্য এবং পরীক্ষিত উপায়।

অতএব, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তির কার্যকর পথ হচ্ছে কোরআনের দিকে ফিরে আসা।

 

মাতৃভূমির খবর

Link copied!