শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫
উদ্যোক্তা সংকট

বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ঝুঁকি ও প্রতিরোধ কৌশল কী হওয়া উচিত?

জীবন সালেহিন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ১১:৪৬ এএম

বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ঝুঁকি ও প্রতিরোধ কৌশল কী হওয়া উচিত?

ছবি: মাতৃভূমির খবর ডিজিটাল

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাত সবসময়ই প্রাণশক্তির মতো কাজ করেছে। শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানি—সবখানেই উদ্যোক্তাদের সাহসী পদক্ষেপ আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা এক অদৃশ্য সংকটের মুখোমুখি—উদ্যোক্তা সংকট

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা নতুন উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করছে। প্রথমত, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও নীতির অস্থিরতা ব্যবসায়িক পরিবেশকে অনিশ্চিত করে তুলছে। বিনিয়োগকারী জানেন না, আগামী ছয় মাস বা এক বছরের মধ্যে কোন আইন কার্যকর হবে, কিংবা করনীতিতে কী পরিবর্তন আসবে। এই অনিশ্চয়তা ঝুঁকিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

দ্বিতীয়ত, অবকাঠামোগত ঘাটতি বিনিয়োগে বড় বাধা। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় দুর্বলতা প্রকল্প বাস্তবায়নকে দীর্ঘায়িত করে এবং খরচ বাড়ায়। অনেক উদ্যোক্তা টিকে থাকার আগে হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

তৃতীয়ত, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণপ্রাপ্তি প্রক্রিয়া এখনও জটিল ও সীমিত। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে ঋণ পান না। ফলে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তবতার সামনে ভেঙে পড়ে।

এই প্রেক্ষাপটে প্রতিরোধ কৌশল খুঁজে বের করাই জরুরি। প্রথমত, নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসাবান্ধব আইন প্রণয়ন এবং করনীতি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নির্ধারণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে বিনিয়োগ ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

তৃতীয়ত, অর্থায়নের সহজলভ্যতা বাড়াতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শর্ত সহজ করতে হবে। প্রযুক্তি-ভিত্তিক উদ্যোগে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড গড়ে তোলা জরুরি। চতুর্থত, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি ও প্রভাব খাটানোর সংস্কৃতি বন্ধ না হলে উদ্যোক্তার আস্থা ফিরবে না।

সবশেষে, আমাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় উদ্যোক্তা তৈরি করার দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় ও টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানে উদ্যোক্তা উন্নয়ন কোর্স চালু করলে তরুণ প্রজন্ম শুধু চাকরি খুঁজবে না, নিজেরাও কর্মসংস্থানের স্রষ্টা হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি নির্ভর করছে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির ওপর। সংকট যত গভীরই হোক, প্রতিরোধ কৌশল কার্যকর হলে আবারও উদ্যোক্তা-চেতনা ফিরে আসবে। কারণ, এই দেশের মানুষ চ্যালেঞ্জ নিতে জানে, সংকট ভেঙে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে জানে।

লেখক: গবেষক ও সামাজিক চিন্তক

মাতৃভূমির খবর

Link copied!