শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫
অনিরুদ্ধ অনিকেত এর কলাম

ওমরের সুশাসন ও আসিফ মাহমুদের হাঁসের মাংস

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম

ওমরের সুশাসন ও আসিফ মাহমুদের হাঁসের মাংস

শিরোনাম দিয়েই লেখা শুরু করা রীতি। তবু আজ তা সম্ভব হলো না। কারণ সাম্প্রতিক একটি ঘটনা আমাকে কলম ধরতে বাধ্য করেছে। গত মাসে গ্রামে গিয়ে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলাম। দোকানির মোবাইল থেকে ভেসে আসছিল ওয়াজের শব্দ। কণ্ঠস্বর আমার কাছে চেনা চেনা মনে হলো। দোকানি উৎসাহভরে জানালেন—এটি আল্লামা সাঈদীর বয়ান। আমি গভীর মনোযোগে শুনছিলাম। তিনি বলছিলেন হজরত ওমরের শাসনকালীন এক ঘটনা।

ওমর (রা.) জানতে পারেন মিসরের গভর্নর প্রতিদিন গোশত-রুটি খান। তিনি গভর্নরকে মদিনায় ডেকে পাঠালেন। ওমর (রা.) খাওয়ার আয়োজন করলেন—শুকনা রুটি ও জলপাই তেল। গভর্নর খেতে পারলেন না। ওমর প্রশ্ন করলেন, “তুমি প্রতিদিন গোশত খাও, কিন্তু তোমার জনগণকে কি প্রতিদিন গোশত খাওয়াতে পারো?” গভর্নর নিরুত্তর হয়ে পড়লেন। এভাবেই ওমর (রা.) শাসককে জবাবদিহিতার শিক্ষা দিলেন।

অতীতের এ ঘটনার বিপরীতে আজকের বাংলাদেশে আমরা কী দেখছি? গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে দুই হাজার শহীদ ও পঞ্চাশ হাজার আহত মানুষের রক্তের বিনিময়ে ক্ষমতা গ্রহণ করা বর্তমান সরকার কি সত্যিই ওমরের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে? উত্তর বড়ই হতাশাজনক। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের “নীলা মার্কেটের হাঁসের মাংস” ও “গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে খাবার” প্রসঙ্গ দেশজুড়ে আলোচিত। যিনি একসময় সাধারণ মানুষের খাবার খেয়ে বেড়ে উঠেছেন, আজ তিনি ফাইভ স্টার হোটেলে রাতের খাবার খাচ্ছেন।

মানুষ ভেবেছিল, ২০২৪–এর জুলাই বিপ্লবের পর নতুন সরকার ওমরের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—ব্যক্তিস্বার্থ, আত্মীয়করণ ও আঞ্চলিকীকরণের ফলে অনেক উপদেষ্টা বিতর্কিত হয়েছেন। তারা যেন পূর্বতন আওয়ামী শাসনেরই উত্তরসূরি। অথচ জনগণ কেন জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল? ফ্যাসিবাদের দুঃশাসন, বৈষম্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে।

পূর্বতন আমলে নির্বাচন ছিল প্রহসন, বিচারব্যবস্থা ছিল দলীয়করণে জর্জরিত, অর্থনীতি দুর্বৃত্তায়নে আক্রান্ত। আর আজ? নতুন সরকারের মধ্যে আবারও পুরনো অসুখের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কেবল হাঁসের মাংস বা ওয়েস্টিনের রাতের খাবারই মূল ইস্যু নয়—বরং এটি ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও বিচ্যুতির প্রতীক।

মানুষ শাসকের ভোগ-বিলাস চায় না। তারা চায় ন্যায়, সমতা ও জবাবদিহিতা। ওমরের শাসন আমাদের শিখিয়েছে—শাসক জনগণের মতো খাবে, জনগণের মতো চলবে। আজ সেই নীতি আমরা কতটা মানতে পারছি, সেটাই বড় প্রশ্ন।

লেখক: রাজনীতি বিশ্লেষক

মাতৃভূমির খবর

Link copied!