বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

অর্থনীতি কোন পথে? বাজারের অস্থিরতা ও সাধারণ মানুষের দুঃশ্চিন্তা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৫, ১২:১৬ এএম

অর্থনীতি কোন পথে? বাজারের অস্থিরতা ও সাধারণ মানুষের দুঃশ্চিন্তা

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক অস্বস্তিকর বাস্তবতার মুখোমুখি। বৈশ্বিক অস্থিরতা, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যহীনতা এবং অভ্যন্তরীণ নীতিগত দুর্বলতা মিলিয়ে বাজারে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য প্রতিদিনই নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, শাকসবজি থেকে শুরু করে প্রতিটি খাতেই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি মানুষের জীবনযাত্রাকে দুঃসহ করে তুলেছে। মাস শেষে পরিবারের আয় ও ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গিয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণি প্রায় হিমশিম খাচ্ছে।

ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানি নির্ভর অর্থনীতি আরও চাপে পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মজুতদারি ও বাজার সিন্ডিকেটের কৃত্রিম সংকট। বাজারে গিয়ে ভোক্তারা দেখছে—প্রতিদিনই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, অথচ আয় একই জায়গায় রয়ে গেছে। দিনমজুর, শ্রমিক, বেসরকারি চাকরিজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাপন এক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

এই অস্থিরতা শুধু দৈনন্দিন জীবনের বোঝা নয়, বরং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দ্বিধায় পড়ছে, রেমিট্যান্স প্রবাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, ব্যাংকিং খাত দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও অনিয়মে আস্থার সংকটে পড়ছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতির ভিত্তি নড়বড়ে হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ রয়ে গেছে।

অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন স্বচ্ছ নীতি ও শক্তিশালী বাস্তবায়ন। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। নিত্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি ও শিল্পখাতকে আরও উৎসাহিত করে উৎপাদন বাড়ানো জরুরি, যাতে আমদানিনির্ভরতা কিছুটা হলেও কমে আসে। একই সঙ্গে জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন, কারণ এই খাতের ব্যয় পুরো অর্থনীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

অন্যদিকে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে কর্মসংস্থান বাড়ানো, বেতন কাঠামো পুনর্বিবেচনা এবং সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করতে হবে। মজুরি না বাড়লে এবং সামাজিক নিরাপত্তা না বাড়ালে সাধারণ মানুষ এই অস্থিরতা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাবে না।

বাংলাদেশের ইতিহাসে অর্থনীতি অনেক বড় সংকট অতিক্রম করেছে। যুদ্ধোত্তর দারিদ্র্য, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ—সব সময়ই এই জাতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবারও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব, যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ভুল নীতি ও দুর্বল বাস্তবায়ন চলতে থাকলে এর খেসারত দিতে হবে গোটা জাতিকে।

আজ সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করছে—অর্থনীতি কোন পথে যাচ্ছে? এই প্রশ্ন শুধু অর্থনীতিবিদ বা নীতিনির্ধারকদের কাছে নয়, প্রতিটি পরিবারের জন্য বাস্তব এক দুশ্চিন্তা। বাজারে যাওয়া প্রতিটি মানুষ এখন উত্তর খুঁজছে—কবে আসবে স্বস্তি, কবে তারা ন্যায্যমূল্যে জীবনযাত্রা চালাতে পারবে।

অর্থনীতির এই অস্থিরতা কাটাতে হলে এখনই কার্যকর ও জনবান্ধব পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ একটি দেশের অর্থনীতি শুধু সংখ্যার খেলা নয়, বরং কোটি মানুষের জীবনযাত্রার প্রতিফলন।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!