প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ১১:২৯ এএম
বাংলাদেশ আবারও নির্বাচনের প্রহর গুনছে। নির্বাচন কমিশন আজ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনের পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত। অন্তর্বর্তী সরকারও প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রশাসনিক দিক থেকে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই—এই নির্বাচন কি সত্যিই অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে?
রাজনীতির মাঠে চিত্র একেবারেই উল্টো। বিএনপি যেকোনোভাবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায়। দীর্ঘ দেড় দশকের ক্ষমতার খরা কাটানোর এ সুযোগ হাতছাড়া করতে তারা রাজি নয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে, সংস্কার, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। একদিকে বিএনপির তাড়াহুড়া, অন্যদিকে জামায়াত-এনসিপির অনড় অবস্থান—ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়া যেন অনৈক্যের জালে আটকে যাচ্ছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এ সংকট নিরসনে চেষ্টা করছে। তারা সংলাপ করছে, খসড়ায় সংশোধনী আনছে, দলগুলোর মতামত সমন্বয় করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—রাজনীতিতে পারস্পরিক অবিশ্বাস এতটাই প্রবল যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিএনপি আশ্বস্ত করতে পারছে না যে ক্ষমতায় এলে তারা প্রতিশোধ নেবে না, আবার জামায়াত-এনসিপিও নিশ্চিন্ত হতে পারছে না যে তাদের অর্জিত অবস্থান টিকে থাকবে।
এদিকে সংস্কার প্রসঙ্গও দ্বিধান্বিত করছে মানুষকে। সমকাল বলছে, জনপ্রশাসন সংস্কারে সরকার কম গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বাস্তবায়নে ঝুঁকছে। অথচ দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসনের জবাবদিহি বা রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা—এসব জরুরি ইস্যু পিছনে পড়ে আছে। এমন অবস্থায় নির্বাচনকে ঘিরে জনগণের আস্থা বাড়ার বদলে সন্দেহই বাড়ছে।
অন্যদিকে যুগান্তর বলছে, ডাকসুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে তরুণ প্রজন্ম সরব হয়েছে। দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভোটের দাবিতে আন্দোলন করছে। এটাই প্রমাণ করে—মানুষ এখনো ভোটাধিকার চায়, গণতন্ত্র চায়। তরুণদের এই প্রত্যাশাই জাতীয় রাজনীতির জন্য বড় বার্তা।
আমরা মনে করি, নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ বা প্রশাসনিক প্রস্তুতির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত। নির্বাচন যদি অনৈক্য, অবিশ্বাস আর শর্তের জালে জড়িয়ে পড়ে, তবে সেটি হবে আরেকটি ব্যর্থ আয়োজন। দলগুলোর এখন দরকার পারস্পরিক শ্রদ্ধা, নমনীয়তা এবং আস্থা। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—গণতন্ত্রে স্থায়ী সমাধান কখনো একক আধিপত্যে হয়নি; সবসময় হয়েছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে।
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনের প্রশ্ন নয়, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষারও প্রশ্ন। এ নির্বাচন যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে অচলাবস্থা দীর্ঘ হবে, আর সুযোগ পাবে অপশক্তি। তাই এখনই দরকার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও ঐক্যের রাজনীতি।