প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫, ১০:৪২ পিএম
ইসরায়েলের যুদ্ধযন্ত্র যতটা শক্তিশালী, তার একটি বড় কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অকুণ্ঠ সমর্থন। অস্ত্র, অর্থ, কূটনীতি—সব দিক থেকে ওয়াশিংটন ছিল তেল আভিভের সবচেয়ে বড় ভরসা। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বারবার ভেটো ব্যবহার, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়ানো, এমনকি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সত্ত্বেও তাকে কূটনৈতিক অভ্যর্থনা—সবই প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলের বৈশ্বিক অবস্থান কতটা দুর্বল হতো।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—যদি আগামীকালই যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন বন্ধ করে দেয়, তবে কী ঘটবে?
আল জাজিরায় প্রকাশিত “What if… the US stopped supporting Israel tomorrow?” শিরোনামের বিশ্লেষণধর্মী লেখায় সাংবাদিক Simon Speakman Cordall চারজন বিশেষজ্ঞের মতামতের আলোকে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। নিচে তার আলোচনার সারাংশ ও আমাদের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে কী ঘটবে?
Ori Goldberg (ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিজ্ঞানী) বলছেন—মার্কিন ছাতা সরলে ইসরায়েল দ্রুত আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হবে। ইউরোপসহ পশ্চিমা অনেক দেশ, যারা এতদিন আমেরিকার কারণে ইসরায়েলের পক্ষে ছিল, তারা হয়তো নিষেধাজ্ঞা বা জাতিসংঘের অধ্যায়-৭ এর আওতায় পদক্ষেপ নিতে পারে।
আঞ্চলিক প্রভাব
HA Hellyer (Royal United Service Institute) মনে করেন, ইসরায়েলকে তৎক্ষণাৎ আক্রমণ করবে না আরব রাষ্ট্রগুলো। বরং মার্কিন সমর্থন না থাকলে ইসরায়েল বাধ্য হবে আলোচনার পথে যেতে।
অর্থনীতি ও সামরিক সরবরাহ
Ori Goldberg-এর মতে, মার্কিন সহায়তা বন্ধ হলে প্রতিরক্ষা শিল্প বড় ধাক্কা খাবে। উচ্চপ্রযুক্তি ও সামরিক গবেষণা নির্ভরশীলতা ইসরায়েলকে বিপাকে ফেলবে।
Hamze Attar (প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক) বলেন, ইসরায়েল এক বছর যুদ্ধ চালাতে পারবে, কিন্তু তার পর অস্ত্র ও অর্থের ঘাটতিতে সবকিছু থমকে যাবে।
রাজনীতি
Daniel Levy (সাবেক ইসরায়েলি সরকার উপদেষ্টা) বলছেন, মার্কিন সমর্থন হারালে ইসরায়েলের ডানপন্থী রাজনীতিতে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন নাও আসতে পারে, তবে বিশ্বমঞ্চে বৈধতা হারাবে তারা।
গাজা ও পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন সহায়তা না থাকলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও দ্রুত বুঝবে—যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। তখন তারা যুদ্ধবিরতির পথে বাধ্য হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের পতনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
Simon Speakman Cordall তার প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন—মার্কিন সমর্থন ইসরায়েলের কাছে “জীবনরক্ষাকারী অক্সিজেন”। এই সমর্থন না থাকলে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হতে হবে, যুদ্ধ থামাতে হবে, এবং অবশেষে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র স্বীকৃতির পথ আরও সহজ হতে পারে।
আমেরিকার নীতিগত অবস্থানই ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রধান শক্তি। ইতিহাস প্রমাণ করে, সাম্রাজ্যবাদী সমর্থন ভেঙে গেলে দমননীতি টেকে না। ফিলিস্তিনের ন্যায্য রাষ্ট্রস্বপ্ন দেরিতে হলেও পূর্ণতা পাবে—শুধু সময় আর বৈশ্বিক নৈতিক সাহসের অপেক্ষা।