বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাজনীতি, শিক্ষা ও নিরাপত্তা—বাংলাদেশের সংকট ও সম্ভাবনা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫, ০৫:৩০ পিএম

রাজনীতি, শিক্ষা ও নিরাপত্তা—বাংলাদেশের সংকট ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশ আজ এক বহুমাত্রিক বাস্তবতার মুখোমুখি। একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনকালীন অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে ড্রপআউটের উদ্বেগজনক চিত্র এবং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতা আমাদের জাতীয় ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলছে। এই বাস্তবতার মাঝেই আবার আন্তর্জাতিক পরিসরে জলবায়ু ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, যা আমাদের জন্য আশার আলো জ্বালায়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি স্পষ্ট করে বলেছেন—আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনই দেশের জন্য একমাত্র বৈধ ও গণতান্ত্রিক পথ। এটি শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়, বরং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপরিহার্য শর্ত। এ নির্বাচনের সুষ্ঠু আয়োজনের দায়িত্ব কেবল একটি পক্ষের নয়; রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী—সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। ব্যর্থতা মানে হবে আরও অস্থিরতা, যা গোটা জাতির জন্য ক্ষতিকর।

অন্যদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন সংকেত উদ্বেগজনক। প্রাথমিক স্তরে ড্রপআউটের হার বেড়ে যাওয়া শুধু শিক্ষার গুণগত মানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, এটি আমাদের সামাজিক কাঠামোকেও নড়বড়ে করছে। বিশেষত ছেলেদের বিদ্যালয় ত্যাগের প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অন্ধকার ইঙ্গিত। অর্থনৈতিক চাপ, প্রযুক্তি আসক্তি, শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ—সবকিছুর সমন্বয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এর ফল দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ হতে পারে।

সম্প্রতি নানা অপরাধ ও সহিংস ঘটনার কারণে সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। “কেউই নিরাপদ নয়”—এই ধারণা যদি সামাজিক বাস্তবতায় পরিণত হয়, তবে তা রাষ্ট্র ও সমাজকে ভয়াবহ সঙ্কটে ফেলবে। অপরাধ দমনে কঠোর আইন প্রয়োগ যেমন জরুরি, তেমনি দরকার রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও সামাজিক নৈতিকতার চর্চা। নিরাপত্তাহীনতা দূর না হলে দেশের উন্নয়ন ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কঠিন হবে।

তবুও আশার কথা আছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক কার্বন মার্কেটে প্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে। সঠিক নীতি সহায়তা ও পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ নিশ্চিত করা গেলে প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার আয় সম্ভব। এটি শুধু অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে না, বাংলাদেশকে বৈশ্বিক জলবায়ু নেতৃত্বেও এগিয়ে নেবে।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে। সংকট ও সম্ভাবনার এ বাস্তবতায় বেছে নিতে হবে দায়বদ্ধতার পথ। নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে আয়োজন, শিক্ষায় টেকসই সংস্কার, নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং জলবায়ুবান্ধব উন্নয়ন—এই চার ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ এগোতে পারবে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!