শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫

ফিরআউনের টেকনোলজি বনাম আধুনিক এআই

জীবন সালেহিন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২৫, ০৮:৫০ পিএম

ফিরআউনের টেকনোলজি বনাম আধুনিক এআই

ছবি: মাতৃভূমির খবর ডিজিটাল

মানুষের ইতিহাসে প্রযুক্তি কেবল আধুনিক যুগের আবিষ্কার নয়। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন—
“তোমরা কি দেখনি, তোমাদের আগে কত জাতিকে ধ্বংস করেছি—যারা তোমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী ছিল এবং পৃথিবীতে প্রযুক্তি ও নির্মাণে অগ্রসর ছিল?” (সুরা গাফির, ৪০:৮২)।
এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে ফেরাউনের যুগেও উন্নত প্রযুক্তি ছিল। আজকের আধুনিক Artificial Intelligence (AI)-এর সাথে যদি সেই সময়ের টেকনোলজির তুলনা করি, তাহলে অবাক হতে হয়—সভ্যতা, শক্তি ও জ্ঞানের দিক থেকে দুটি সময় একে অপরের প্রতিবিম্ব হয়ে দাঁড়ায়।

ফিরআউনের আমলের টেকনোলজি

স্থাপত্য ও প্রকৌশল

ফেরাউনের সভ্যতার সবচেয়ে বড় নিদর্শন হলো পিরামিড। কয়েক টন ওজনের পাথর কীভাবে ২০–৩০ তলা উঁচুতে নিখুঁতভাবে বসানো হলো—এখনো রহস্য। তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল, র‌্যাম্প ও লিভার প্রযুক্তি, এমনকি জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাথে স্থাপত্যের সামঞ্জস্য আজও বিস্ময়কর।

চিকিৎসা ও সংরক্ষণ

তারা মমি তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিল, যেখানে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মৃতদেহ হাজার বছর অক্ষত থাকে। সেই সময়েই দাঁতের চিকিৎসা, শল্যবিদ্যা ও ভেষজ চিকিৎসা চালু ছিল।

গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান

পিরামিড নির্মাণে যে গণিত ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি আধুনিক জ্যামিতি ও পিথাগোরাসের সূত্রের পূর্বাভাস। রাতের আকাশের নক্ষত্র দেখে তারা ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল এবং কৃষিকাজ পরিচালনা করত।

প্রতীকী প্রযুক্তি

আবাইডোস মন্দিরের খোদাইয়ে হেলিকপ্টার, সাবমেরিনের মতো প্রতীক পাওয়া যায়। অনেক গবেষক বলেন এগুলো কেবল প্রতীকী বা লেখার ওভারল্যাপ, কিন্তু অন্যরা মনে করেন—এগুলোই প্রমাণ করে ফেরাউনের যুগে উন্নত প্রযুক্তির ধারণা ছিল।

আধুনিক এআই-এর প্রযুক্তি

গণনাশক্তি ও ডেটা বিশ্লেষণ

আজকের AI সেকেন্ডের মধ্যে কোটি কোটি তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারে। চিকিৎসা, শিক্ষা, অর্থনীতি—সব ক্ষেত্রে এটি নতুন বিপ্লব ঘটাচ্ছে।

ভার্চুয়াল নিয়ন্ত্রণ

AI এখন মানুষের জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ করছে—নিউজ ফিড সাজানো, ভিডিও সাজেস্ট করা, বিজ্ঞাপন টার্গেট করা। এক ধরনের মাইন্ড কন্ট্রোলই বলা যায়।

সামরিক প্রযুক্তি

ড্রোন, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, surveillance system—সবই AI দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অনেকেই এটিকে “নতুন যুগের যুদ্ধাস্ত্র” বলছে।

হলিউডের পূর্বাভাস

১৯৬৮ সালের 2001: A Space Odyssey ছবিতে HAL 9000 নামের AI কম্পিউটার, ১৯৮৪ সালের Terminator ছবিতে Skynet—এসবই প্রমাণ করে, বহু আগে থেকেই AI-র ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

মিল ও অমিল

মিল

  • ফিরআউনের সভ্যতা ও আধুনিক AI—দুটোই প্রযুক্তির চরম শিখর।

  • উভয় ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি মানুষের ভোগবিলাস ও ক্ষমতার হাতিয়ার।

  • উভয়ের মাঝেই মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরানোর প্রবণতা দেখা যায়।

অমিল

  • ফিরআউনের প্রযুক্তি ছিল স্থাপত্য ও পদার্থনির্ভর; আধুনিক AI তথ্য ও মস্তিষ্কনির্ভর।

  • ফেরাউনের প্রযুক্তি ছিল দৃশ্যমান নিদর্শন (পিরামিড, মন্দির), AI অদৃশ্য—কিন্তু মানুষের চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণে বেশি কার্যকর।

আল্লাহ বলেন:
“বলুন, হে আল্লাহ! আপনি রাজ্য দান করেন যাকে ইচ্ছা, কেড়ে নেন যার কাছ থেকে ইচ্ছা।” (সুরা আলে ইমরান, ৩:২৬)।

ফেরাউনের প্রযুক্তি তাকে রক্ষা করতে পারেনি। আজকের AI-ও যদি আল্লাহর আইন অমান্য করে মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়, তবে এর পরিণতিও ধ্বংসাত্মক হবে।

রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যখন তোমরা সুদে লিপ্ত হবে, কৃষিকাজে মগ্ন হবে এবং জিহাদ ত্যাগ করবে, তখন আল্লাহ তোমাদের উপর অপমান চাপাবেন।” (আবু দাউদ)

এখানে বোঝা যায়, দুনিয়ার প্রযুক্তি নয়—আল্লাহর প্রতি আনুগত্যই সভ্যতার স্থায়িত্ব নির্ধারণ করে।

ফেরাউনের প্রযুক্তি ও আধুনিক AI—উভয়ই মানুষের ইতিহাসে সভ্যতার শক্তি ও উন্নতির প্রতীক। কিন্তু একটি মিল সবসময় একই থেকেছে: প্রযুক্তি মানুষকে রক্ষা করতে পারেনি, ঈমানই করেছে।
ফেরাউন ধ্বংস হয়েছিল, তার পিরামিড আজও নিদর্শন। আধুনিক AI-ও যদি আল্লাহর হুকুম ছাড়া ব্যবহৃত হয়, তবে তা মানবতার জন্য ফিতনা ছাড়া আর কিছু নয়।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!