প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ১০:২৪ এএম
দখলের কৌশল হিসেবে গাজা সিটিতে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী হামলা আরও জোরদার করেছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় শুধু এই সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৩৭ জন। আর পুরো উপত্যকাজুড়ে শুক্রবারে (২২ আগস্ট) নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১ জনে। এ সময়ে মোট আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫১ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালদের দেওয়া সর্বশেষ বিবৃতির বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা শনিবার (১৪ আগস্ট) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আল-জাজিরা জানায়, একটি ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার শেখ রাদওয়ানের একটি স্কুল ভবনের উপর উড়ছে, যেখানে আশপাশের বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন হয়ে দেখছেন। এর পর কোয়াডকপ্টারটি লক্ষ্যবস্তুতে একটি বিস্ফোরক ফেললে অন্তত ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ওই স্কুলে অনেক ফিলিস্তিনি তাদের অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিল।
আল-আহলি হাসপাতালের একটি চিকিৎসা সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আরও একজন নিহত হয়েছেন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি অবরোধজনিত ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে অন্তত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে একটি শিশু রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি ভেঙে তাদের সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করার পর থেকে ১০ হাজার ৭১৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৫ হাজার ৩২৪ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী মানবিক সহায়তা নিতে আসা বেসামরিক নাগরিকদের ওপরও হামলা অব্যাহত রেখেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এমন হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ১৩৩ জন আহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের মতে, ২৭ মে থেকে মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ২ হাজার ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৫ হাজার ১৯৭ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে, শুক্রবার গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়টি প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকার পাঁচ লাখের বেশি মানুষ এখন ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে।
আইপিসির দেওয়া বিবৃতির বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে , গাজা শহর ও এর আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দেইর আল-বালাহ এবং খান ইউনিস অঞ্চলও বিপর্যয়কর অবস্থায় পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে তারা।
আইপিসি তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, গাজার দুর্ভিক্ষ সম্পূর্ণরূপে মানুষের তৈরি এবং এটি প্রতিহত করা সম্ভব। বিতর্কের সময় শেষ হয়ে গেছে। দুর্ভিক্ষ উপস্থিত, এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আর কোনও বিলম্ব হলে, এমনকি কয়েক দিন দেরি হলে, দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যুর হার অগ্রহণযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পাবে।
সংস্থাটি আরও সতর্ক করে বলেছে, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
তবে ইসরায়েল আইপিসির এ মূল্যায়ন প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির সামরিক সংস্থা কো-অর্ডিনেশন অব গভর্নমেন্ট অ্যাকটিভিটিস (কোগ্যাট) দাবি করেছে, প্রতিবেদনটি মিথ্যা ও হামাসের দেওয়া আংশিক ও পক্ষপাতদুষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি।
কোগ্যাট আরও বলেছে, আইপিসি গাজায় ইসরায়েলের বিভিন্ন মানবিক প্রচেষ্টা উপেক্ষা করছে।
আইপিসি সরাসরি দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে না। তবে তাদের বিশ্লেষণকে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়ার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, সাহায্য গোষ্ঠী ও বিভিন্ন দেশের সরকারের সমন্বয়ে গঠিত এই সংস্থাটি খাদ্য নিরাপত্তার বৈশ্বিক মানদণ্ড নির্ধারণ করে থাকে।
তাদের ৫৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তাৎক্ষণিক ও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন। নাহলে গাজার দুর্ভিক্ষ আরও গভীর হয়ে প্রাণহানি বাড়বে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এর জবাবে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং গাজায় চলমান এই মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।