প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম
নেপালে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেন-জি বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নের জের ধরে পদত্যাগ করলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। এর আগে বিক্ষোভকারীরা তার ব্যক্তিগত বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করেন।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন বলে তার সচিবালয় এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে।
বিবৃতিতে কেপি শর্মা বলেন, বর্তমান সংকটের সাংবিধানিক সমাধানের পথ প্রশস্ত করার জন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন।
এর আগে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে সহিংসতায় অন্তত ১৯ জন নিহত হওয়ার পর আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে।
সোমবার পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনার পর আন্দোলনকারীরা কারফিউ ভেঙে মন্ত্রী-নেতাদের বাসভবনে ভাঙচুর চালান এবং অগ্নিসংযোগ করেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও পানি সরবরাহমন্ত্রী একে একে পদত্যাগ করেন। পরে আন্দোলনরত জেনারেশন জি নেতাদের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রীও পদত্যাগে বাধ্য হন।
এর আগে গত সপ্তাহে অলির সরকার নতুন বিধিনিষেধ না মানার অভিযোগে ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয়। তবে নিয়ম মানায় টিকটকসহ পাঁচটি অ্যাপ চালু ছিল।
হঠাৎ এ সিদ্ধান্তে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রবাসে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাজধানীসহ সাতটি শহরে হাজারো মানুষ রাজপথে বিক্ষোভে অংশ নেন। সোমবার কাঠমান্ডুতে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনী লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করে। একপর্যায়ে গুলি ছুড়লে নিহত হন অন্তত ১৯ জন, যার মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয় রাজধানীতেই।
যদিও মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সরকার, তবে হতাহতের ঘটনায় বিক্ষোভ সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। শুরু থেকেই বিক্ষোভকারীরা শুধু নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা নয়, দুর্নীতিবিরোধী শ্লোগানও দেন, যা সরকারের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে।
এদিকে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (টিআইএ) সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে কার্যকর হয় এ সিদ্ধান্ত।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোটেশ্বরের কাছে ধোঁয়ার কারণে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। টিআইএ-এর মহাব্যবস্থাপক হংস রাজ পান্ডে বলেন, “বিমানবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করা হয়নি, তবে নিরাপত্তা ও অন্যান্য কারণে ফ্লাইট চলছে না।”
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, চলাচলে জটিলতার কারণে ক্রু সদস্যরা সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারছেন না। এ কারণে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী বিমান উড্ডয়ন সম্ভব হচ্ছে না।
অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে বুদ্ধ এয়ারসহ সব স্থানীয় বিমান সংস্থা তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে।