শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫

মাত্র পাঁচ বছরে কীভাবে জীবন বদলাবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ১২:১৪ পিএম

মাত্র পাঁচ বছরে কীভাবে জীবন বদলাবেন

ছবি: মাতৃভূমির খবর ডিজিটাল

আমাদের সবার ভেতরেই ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আছে। কেউ চায় বাড়ি-গাড়ি, কেউ চায় আর্থিক স্বাধীনতা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মাত্র পাঁচ বছরে কি সত্যিই জীবন বদলে ফেলা সম্ভব? ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদিনই নানা রকম ভিডিও আসে, যেখানে বলা হয় অল্প সময়েই ধনী হওয়ার গোপন সূত্র আছে। এসব ভিডিও অনেক সময় “শর্টকাট” বা “কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট”-এর জাদু দেখিয়ে মানুষকে স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে—জীবনে প্রকৃত পরিবর্তন আসে কঠোর পরিশ্রম, ধারাবাহিকতা আর সঠিক মানসিকতার মাধ্যমে।

এই প্রসঙ্গে একটি গল্প বেশ শিক্ষণীয়। দুই বন্ধু—রাজু ও নাইম। দুজনেরই বড় হওয়ার স্বপ্ন আছে। কিন্তু চরিত্রগত পার্থক্য বিশাল। রাজু ধৈর্যশীল, বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করে এবং শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে কাজ করে। অন্যদিকে নাইম অধৈর্য, শর্টকাট খোঁজে এবং দ্রুত হতাশ হয়ে পড়ে। একদিন নাইম ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখে ভীষণ উত্তেজিত হয়। ভিডিওতে বলা হয়েছিল—মাত্র পাঁচ বছর ইনভেস্টমেন্ট করলেই আজীবন আরামে থাকা যাবে। নাইম ভাবে, সে গুপ্তধন পেয়ে গেছে। কিন্তু রাজু তাকে বোঝায়, এই ধরণের গল্প আসলে বিনিয়োগ কোম্পানির প্রচার—যেখানে সম্ভাব্য লাভ দেখানো হয়, ঝুঁকি গোপন রাখা হয়। শেয়ারবাজার বা মিউচুয়াল ফান্ড সবসময় নির্দিষ্ট হারে রিটার্ন দেয় না। কখনো লস হয়, কখনো বাজার ধসে পড়ে। তাই শর্টকাট ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়া বিপজ্জনক।

তাহলে মাত্র পাঁচ বছরে সফলতার রহস্য কী? আসল উত্তর পাওয়া যায় বাস্তব জীবনের অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষদের গল্পে। যেমন—আমেরিকান বাস্কেটবল খেলোয়াড় বিল ব্র্যাডলি। তিনি ছিলেন একেবারেই দুর্বল খেলোয়াড়। দৌড়াতে পারতেন না, শুটিং খারাপ ছিল, এমনকি টিম থেকেও বাদ পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হার মানেননি। বরং প্রতিদিন সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি অতিরিক্ত প্র্যাকটিস করে গেছেন। ছুটি, উৎসব—কোনো দিন বিরতি নেননি। ধীরে ধীরে দুর্বলতা কাটিয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড়ে পরিণত হন। মাত্র পাঁচ বছরের ভেতরে তিনি দারিদ্র্য জয় করে জাতীয় দলে জায়গা পান, অলিম্পিক গোল্ড জেতেন এবং পরবর্তীতে এনবিএ চ্যাম্পিয়ন হন।

একইভাবে ভারতের অরুণিমা সিনহার গল্পও অবিশ্বাস্য। ডাকাতদের হামলায় তিনি চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে পা হারান। একজন জাতীয় ভলিবল খেলোয়াড়ের জন্য এটি ছিল জীবনের শেষ কথা। কিন্তু অরুণিমা হাল ছাড়েননি। বরং মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখেন। পা হারিয়েও তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। শুধু এভারেস্টই নয়, বিশ্বের সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ চূড়া জয় করেছেন।

এই গল্পগুলো প্রমাণ করে—পাঁচ বছর সময় যথেষ্ট, যদি কারও ভেতরে জ্বলন্ত ইচ্ছাশক্তি (burning desire), সঠিক পরিকল্পনা এবং অটল ধারাবাহিকতা থাকে।

সফলতার জন্য বিশেষজ্ঞরা তিনটি সূত্রকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। প্রথমত, বার্নিং ডিজায়ার—নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অন্তরের আগুন থাকা চাই। দ্বিতীয়ত, স্পষ্ট পরিকল্পনা—আপনি আসলে কী চান, কত সময়ের মধ্যে তা অর্জন করতে চান, এবং প্রতিদিন কোন কাজগুলো করবেন—এসব কাগজে লিখে রাখা। তৃতীয়ত, ধারাবাহিকতা ও পরিশ্রম—ছোট ছোট পদক্ষেপে এগোতে থাকুন। যেমন গ্রিক কিংবদন্তি মাইলো প্রতিদিন ছোট একটি বলশিশুকে কাঁধে নিতেন, আর শিশুটি বড় হতে হতে তিনিও শক্তিশালী হয়ে উঠলেন। ধারাবাহিক অনুশীলনের ফলেই তিনি অতিমানবিক শক্তি অর্জন করেছিলেন।

আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য এ শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউটিউব বা ফেসবুকের শর্টকাট ভিডিও দেখে মুহূর্তের মধ্যে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখা সহজ, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সাফল্য আসে ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম ও নিরবচ্ছিন্ন উন্নতির মাধ্যমে। মাত্র পাঁচ বছর মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে আর্থিক স্বাধীনতা ও সফলতা অর্জন করা সম্ভব, তবে সেটি কোনো ম্যাজিক নয়—এটি বিজ্ঞানের মতোই নির্ভুল একটি নিয়ম।

তাই, যদি সত্যিই পাঁচ বছরে জীবন বদলাতে চান, তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন। লক্ষ্য ঠিক করুন, লিখে ফেলুন, পরিকল্পনা করুন এবং প্রতিদিন অন্তত একটি করে পদক্ষেপ নিন। সাফল্য আসতে দেরি হবে, কিন্তু যখন আসবে, তখন তা স্থায়ী ও অর্থবহ হবে।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!