প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ১০:৪১ এএম
ইসরায়েলি সেনাদের ভয়াবহ বোমা হামলায় ফিলিস্তিনের সবচেয়ে বড় নগরী গাজা সিটি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। প্রাণভয়ে শহর ছেড়ে দক্ষিণমুখী হচ্ছেন হাজারো ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন চলমান সংঘাতকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলও এর নিন্দা জানাচ্ছে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) একদিনেই ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৯১ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পালানোর সময় উপকূলীয় সড়কে একদল মানুষের গাড়িতে সরাসরি হামলা চালানো হয়। সেদিনই অন্তত ১৭টি আবাসিক ভবন ধসে পড়েছে। এর মধ্যে পূর্ব গাজার তুফফাহ এলাকার আইবাকি মসজিদ লক্ষ্য করে বিমান হামলার ঘটনাও ঘটে।
শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন মানুষ
‘গাজা জ্বলছে’-ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজের এমন বক্তব্যের পর থেকেই আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। আসবাবপত্র বোঝাই গাড়ি, গাধার গাড়ি কিংবা হাতে সামান্য মালপত্র নিয়ে মানুষজন আল-রাশিদ সড়ক ধরে দক্ষিণে ছুটছেন। কিন্তু সেখানেও নিরাপদ আশ্রয়ের নিশ্চয়তা নেই।
প্রথমদিকে অনেক বাসিন্দা ইসরায়েলের দখল পরিকল্পনার মুখেও শহর না ছাড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। তবে বহুতল ভবন ও অবকাঠামো নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া অবিরাম বোমাবর্ষণের পর যাদের সামর্থ্য আছে তারাই শহর ছাড়ছেন।
ভয়াবহ অস্ত্র ব্যবহার
গাজার সরকারি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা শুধু আকাশপথেই নয়, উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে বিস্ফোরক বোঝাই রোবট ব্যবহার করছে। মানবাধিকার সংগঠন ইউরোমেড মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ১৫টি এমন রোবট মোতায়েন করা হয়েছে, প্রতিটি দিয়ে প্রায় ২০টি করে বাড়ি ধ্বংস করা সম্ভব।
বাস্তুচ্যুত মানুষের ভিড়
ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ গাজা সিটি ছেড়েছেন। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সমান সংখ্যক মানুষ শহরের কেন্দ্র ও পশ্চিম অংশে আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি হিসেবে ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ সম্পূর্ণভাবে শহর ছেড়েছেন।
অন্যদিকে, দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ ও খান ইউনিসের অতিরিক্ত ভিড় ও হামলার কারণে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ আবার উল্টো পথে গাজা সিটিতে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।
দীর্ঘ অভিযান
মঙ্গলবার ভোর থেকে গাজাজুড়ে অন্তত ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মেডিকেল সূত্র জানায়। এদিকে ইসরায়েলি সেনারা প্রকাশ করেছে ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যানবাহন নিয়ে শহরে প্রবেশের ফুটেজ। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এফি ডেফ্রিন বলেছেন, ‘গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে যত সময়ই লাগুক, অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব এ হামলাকে ‘ভয়ঙ্কর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।