সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পুরুষদের কালো রঙে চুল রাঙানো কি বৈধ?

মনিকা সোহাগ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ১১:৩৯ পিএম

পুরুষদের কালো রঙে চুল রাঙানো কি বৈধ?

ছবি: মাতৃভূমির খবর ডিজিটাল

ইসলামে পুরুষদের কালো রঙে চুল রাঙানো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলেমদের মধ্যে ভিন্নমত বিদ্যমান। নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি স্পষ্ট—ইসলামী শরীয়তে মহিলাদের যেকোনো রঙে চুল রাঙানো বৈধ। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে কালো রঙ ব্যবহারের বিষয়ে মতভেদ দেখা যায়।

চুল রাঙানোর সুন্নাহ

রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবিদের সাদা চুল রাঙাতে উৎসাহিত করেছেন। সেই যুগে সাধারণত হেনা (মেহেদি) ব্যবহার করা হতো, যা লালচে-কমলা রঙ এনে দিত। তবে হেনা ব্যবহার করা ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নয়, বরং এটি চিকিৎসা ও সৌন্দর্যের দৃষ্টিকোণ থেকেও করা হতো।

কালো রঙ নিয়ে ভিন্নমত

হানাফি, মালিকি ও হাম্বলি মাযহাব: অধিকাংশ আলেম মনে করেন, কালো রঙে চুল রাঙানো মাকরূহ (অপছন্দনীয়)। আবার এদের মধ্যেই কেউ কেউ একে মুবাহ (অনুমোদিত/নিরপেক্ষ) বলেছেন।

শাফেয়ী মাযহাব: এরা একে হারাম (নিষিদ্ধ) বলে মত দেন।
 

হাদিসের দলিল

১. আবু কুহাফার ঘটনা: মক্কা বিজয়ের সময় হযরত আবু বকর (রা.)-এর পিতা আবু কুহাফার মাথা-দাড়ি একেবারে সাদা হয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবিদের বললেন, “তার চুল রাঙিয়ে দাও, তবে কালো রঙ এড়িয়ে চলো।” শাফেয়ী আলেমরা এ হাদিসের ভিত্তিতে কালোকে হারাম বলেছেন। অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমরা বলেন, এখানে উদ্দেশ্য ছিল বয়স্ক ব্যক্তিকে বিদ্রূপ ও উপহাস থেকে বাঁচানো।

২. খারেজিদের বর্ণনা: এক হাদিসে রাসূল ﷺ বলেছেন, ভবিষ্যতে একদল লোক আসবে যারা মাথা কামাবে এবং কালো রঙে চুল রাঙাবে। কিছু আলেম মনে করেন, এর মানে কালো রঙ হারাম। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে, এটি কেবল তাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা, কোনো বিধান নয়।
 

সাহাবিদের ব্যবহার

হযরত হাসান (রা.), হযরত হুসাইন (রা.), সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.), উকবা ইবনে আমির (রা.) প্রমুখ সাহাবি কালো রঙে চুল রাঙাতেন। এমনকি কবিতায়ও এসেছে, কালো রঙ লাগানোর পর সাদা চুলের গোড়া দ্রুত প্রকাশ পেত।
 

বর্তমান সময়ে প্রয়োগ

যাদের পেশাগত কারণে পরিপাটি থাকা জরুরি, তারা প্রয়োজনে কালো ব্যবহার করতে পারেন।

অনেক আলেম বলেন, প্রয়োজন ছাড়া এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম, তবে একে গুনাহ বলা যায় না।

সবচেয়ে নিরাপদ হলো, কালো এড়িয়ে অন্য কোনো মাটিরঙা বা প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করা।

কালো রঙে চুল রাঙানোকে হারাম বলা একমাত্র সংখ্যালঘু মতবাদ, আর সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম এটিকে মাকরূহ বা মুবাহ বলেছেন। তাই এ বিষয়ে কাউকে নিন্দা করা বা গুনাহগার বলা ভুল। প্রত্যেক মুসলিম তার অনুসৃত মাযহাব ও আলেমদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী আমল করতে পারে।

 

মাতৃভূমির খবর

Link copied!