শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫
ইস্তিগফারের শক্তি

আল্লাহর দিকে ফিরে আসার সহজতম পথ

মনিকা সোহাগ

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম

আল্লাহর দিকে ফিরে আসার সহজতম পথ

“আস্তাগফিরুল্লাহ”—এই ছোট্ট শব্দটির ভেতরে লুকিয়ে আছে বিশাল এক শক্তি। ইস্তিগফার মানে শুধু গুনাহ মাফ চাওয়া নয়; এর গভীরে আছে ঢেকে দেওয়া, সুরক্ষা দেওয়া এবং পরিণতি থেকে মুক্তি পাওয়া। একজন বান্দা যখন আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন সে আল্লাহর কাছে দোয়া করে—“হে আল্লাহ, আমার গুনাহ ঢেকে দিন, এর ক্ষতি থেকে আমাকে রক্ষা করুন।”

গুনাহ ও তার পরিণতি

মানুষ ভুল করে, গুনাহ করে। কোরআন-হাদিস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে—গুনাহর পরিণতি দুনিয়াতেই বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট বা বিভিন্ন বিপর্যয় হিসেবে ফিরে আসে। তবে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, তওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমেই এসব বিপদ দূর হয়।

আল্লাহর গাফফার সত্তা

আল্লাহকে বলা হয় আল-গাফফার—অর্থাৎ তিনি ক্ষমাকারী, ঢেকে দেওয়া ও পরিণতি থেকেও রক্ষা করেন। গুনাহ যত বড়ই হোক, আন্তরিক তওবা বান্দাকে নতুন জীবনের পথে নিয়ে যায়। এমনকি কেউ যদি একই গুনাহ বারবারও করে, আর প্রতিবারই আল্লাহর কাছে ফিরে এসে বলে: রব্বিগফিরলী ধাম্বীহে আমার রব, আমার গুনাহ মাফ করে দিন, আল্লাহ তাআলা তাঁর এই বিশ্বাস ও আন্তরিকতার কারণে তাকে ক্ষমা করেন।

রাসূলুল্লাহ নিজেও প্রতিদিন একশোবার পর্যন্ত ইস্তিগফার করতেন, যদিও তিনি আমাদের মতো গুনাহ করতেন না। তাঁর এই অভ্যাস আমাদের জন্য শিক্ষা—সবসময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

ইস্তিগফারের বরকত

কুরআনে প্রতিশ্রুতি এসেছে, ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহ দুনিয়ায়ও বরকত দান করেন।

  • আকাশ থেকে বারবার বৃষ্টি বর্ষণ,
  • ধন-সম্পদ বৃদ্ধি,
  • সন্তান-সন্ততি দান,
  • সবুজ বাগান ও নদী দান।

ইস্তিগফারের দরজা খুলে দিলে বরকতের ধারা জীবনে নেমে আসে—শান্তি, প্রশান্তি ও দুনিয়াবি সমৃদ্ধি।

কেন সহজ?

আল্লাহর দিকে ফিরে আসা কখনোই জটিল কিছু নয়। বক্তারা বলেন—“এক সেকেন্ডে, এক মুহূর্তে তুমি আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে পারো।” আল্লাহ বান্দাদের জন্য এ পথ এতটাই সহজ করেছেন যে শুধু আন্তরিকভাবে বলতে হবে:
আস্তাগফিরুল্লাহ, হে আল্লাহ! আমার এই গুনাহ মাফ করে দিন।

আল্লাহর নামগুলোর ভেতরে আছে আল-আফু (মাফকারী), আল-গফ্ফার (অত্যধিক ক্ষমাকারী), আর-রহীম (পরম দয়ালু)। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আর তাঁর কাছে এটি কোনো কঠিন কাজ নয়।

হাদিসের শিক্ষা

রাসূল বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন:
হে আদম সন্তান! যতক্ষণ তুমি আমার কাছে দোয়া করবে, আমার কাছে আশা রাখবে, আমি তোমাকে মাফ করবতুমি যা-ই করো না কেন।

এ হাদিস আমাদের শিখিয়ে দেয়, আল্লাহর ক্ষমার জন্য কোনো গুনাহই বড় নয়।

অভ্যাসে পরিণত করা

ইস্তিগফারকে অভ্যাসে পরিণত করলে আল্লাহর প্রতিশ্রুত বরকত নেমে আসে—

  • অন্তরে শান্তি ও প্রশান্তি,
  • দুনিয়াবি বরকত,
  • আখিরাতে মুক্তি।

ইস্তিগফার মানুষের জীবনের সবচেয়ে সহজ কিন্তু সবচেয়ে শক্তিশালী আমল। এক মুহূর্তে এটি বান্দাকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়, গুনাহ থেকে মুক্তি দেয়, আর বরকতের দরজা খুলে দেয়।

আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি—

  • আমাদের গুনাহ যেন তিনি মাফ করে দেন,
  • আমাদেরকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেন,
  • আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করেন,
  • এবং যেন তিনি আমাদেরকে হিসাব-নিকাশ ও শাস্তি ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করান।

 

মাতৃভূমির খবর

Link copied!