কালিয়াকৈরে হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা

এক সময় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ডোবা-নালায় এবং খালেবিলে  জাতীয় ফুল শাপলার সমারোহ ছিল দেখার মতো। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ের নিচু জমিতে এমনিতেই জন্মাত প্রচুর পরিমাণে শাপলা-শালুক ও ঢ্যাপ নামের ফুল।  কিন্তু কালের বিবর্তনে  হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল। আর তার সঙ্গে বিপন্নের পথে জলাভূমির ফল 'ঢ্যাপ'।

সকালে কালিয়াকৈর উপজেলার ঢোলসমুদ্র গ্রামের রাজা যশোপালের খনন করার দিঘিতে অল্প কিছু সংখ্যক শাপলা ফুল দেখা মিলে। দূর দেখে লাল রংয়ের ফুল ফুটতে দেখে অনেকেরই দৃষ্টিখোচর হয়। শাপলা ফুল যেন আগের মত আর দেখা মিলে না। তাই শাপলা ফুল ফুটতে দেখে অনেকেই এসে ফুলটির ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

তবে বর্তমানে গ্রাম-বাংলায় বিভিন্ন খালে-বিলে অতিরিক্ত পুকুর খনন, কৃষি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ, অতি মাত্রায় নিচু জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন বিলুপ্তির পথে শাপলাফুল ও ঢ্যাপ। শাপলার ফলকেই 'ঢ্যাপ' বলা হয়। কিছু আঞ্চলিক নামে 'ভেট' বলা হয়। এক সময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ শাপলা ফুলের ডাঁটা তরকারি হিসেবে রান্না করে খেতেন । শুধু তাই নয়, এই 'ঢ্যাপ' আমাশয়, বদহজম এবং রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য বেশ কার্যকরী বলেও প্রচলিত রয়েছে গ্রামে। কিন্তু 'শাপলা ফল' বা 'ঢ্যাপ' প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। মাঝে-মধ্যে কালিয়াকৈরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারগুলোতে 'ঢ্যাপ' বিক্রি করতে দেখা যায়।  এক সময় অসংখ্য খাল-বিলে শাপলা ফুল পাওয়া যেত বেশি। এসব খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে শাপলা ফুল ফুটত। এতে পাওয়া যেত প্রচুর পরিমাণে ঢ্যাপ। কিন্তু আস্তে আস্তে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল-বিল। তার সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল ও ঢ্যাপ।

শাপলার ফল বা ঢ্যাপ দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খই ভাজা হয়। যেটি গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কাছে 'ঢ্যাপের খই' নামে পরিচিত। এ ঢ্যাপের মধ্যে অসংখ্য বীজদানা থাকে। এসব বীজদানা রোদে শুকিয়ে চাল তৈরি করা হয়। ঢ্যাপের পুষ্টিকর চাল থেকে তৈরি করা হয় খই ও নাড়ু। খালবিল ও জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংসের কারণে সুস্বাদু ঢ্যাপ বিলুপ্তি হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন।

শাপলা ফুল তুলতে আসা এক মিলি আক্তার নামে এক তরুণী বলেন, আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা। যা শৈশবের এক নরম অনুভূতির নাম। বর্ষার পানিতে ভাসা শাপলার দিকে তাকিয়ে অনেকেই প্রথমবার প্রকৃতির সৌন্দর্য বুঝতে শেখে। গ্রামবাংলার জলে ভরা মাঠ, পুকুর কিংবা বিল—সেখানে শাপলা ফুল ফুটে থাকে নিঃশব্দে, কিন্তু চোখে-মনে গেঁথে যায় গহীনভাবে। অনেক সময় মায়েরা শাপলার ডাটা দিয়ে ভর্তা বানাতেন, সেসব খেতে এখনো জিভে জল আসে। তবে এখন শাপলা ফুল দেখা মিলে না। দুই একটি জায়গায় কিছু পরিমাণে শাপলা দেখা যায়।

কৃষক হযরত আলী বলেন, 'যখন অভাব দেখা দিত তখন আমরা শাপলার ভেট দিয়ে ভাত ও খই বানিয়ে খেতাম। কিন্তু এখন তো এগুলো দেখাই যায় না। বর্তমানে দেশে বাড়তি জনগণের চাপের কারণে আবাদী জমি ভরাট করে বাড়ি, পুকুর, মাছের ঘের বানানোর ফলে বিলের পরিমাণ কমে গেছে। যার ফলে শাপলা জন্মানোর জায়গাও কমে আসছে। সে কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে জাতীয় ফুল শাপলা ও ঢ্যাপ।'

মুন্না নামে একজন পথচারী বলেন, জাতীয় ফুল শাপলা আগের মত দেখা যায় না। এই ফুলের অস্তিত্ব দরে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।