প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল—শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ১৯৮০ সালের ১৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন আজ অতিক্রম করল সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ৪৫ বছর। চার দশকের বেশি সময়ের এই যাত্রা কেবল একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নয়, বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার এক অনন্য অধ্যায়।
ভোর থেকে নেতাকর্মীর ঢল:
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সূচনা হয় ভোর থেকেই। রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচির শুরু হয়। এরপর ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা ছুটে আসেন জিয়া উদ্যানে। সকাল ১০টায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিলে তাঁকে স্মরণ করা হয়।
রিজভীর আবেগঘন আহ্বান:
এদিনের প্রধান অতিথি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দল শহীদ জিয়ার স্বপ্ন থেকে জন্ম নিয়েছিল। আজ ৪৫ বছর পরও এই সংগঠন গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার অগ্রসেনা। কোনো স্বৈরাচার, কোনো অন্যায় আমাদের পথ রুদ্ধ করতে পারবে না। শহীদ জিয়ার আদর্শই আমাদের পথের আলো। তার আবেগঘন কণ্ঠ যেন নতুন প্রজন্মকে আহ্বান জানাল অবিচল প্রতিরোধে, গণতন্ত্র রক্ষার অঙ্গীকারে।
তারেক রহমানের বার্তা আগামী দিনের নেতৃত্ব:
দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা। লন্ডন থেকে ভিডিও বার্তায় যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দল প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে। সেই ত্যাগ আজও অব্যাহত রাখতে হবে। আগামী দিনের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার নেতৃত্ব দেবে এই সংগঠন।
দেশজুড়ে কর্মসূচি ও জনসম্পৃক্ততা:
ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রতিটি জেলা ও মহানগরে শোভাযাত্রা, র্যালি, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, দুস্থদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ এবং ফলদ ও বনজ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত হয়। আগামীকাল উপজেলা ও থানা পর্যায়েও এসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
ইতিহাসে ত্যাগ ও সংগ্রামের সাক্ষর:
স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিটি পদক্ষেপ ইতিহাসের অংশ। নব্বইয়ের গণআন্দোলন, ২০১৩ সালের আন্দোলন, ২০১৮ সালের নির্বাচন কিংবা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রতিরোধ—সবখানেই এই সংগঠনের কর্মীরা ছিলেন সাহসী সৈনিক।
বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের ভয়াল গণআন্দোলনে অসংখ্য নেতাকর্মী ও ছাত্র জনতা রক্ত দিয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন। ঢাকার রাজপথ থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামে ছাত্ররা বুক পেতে দিয়েছে গুলির সামনে। মায়েরা হারিয়েছেন সন্তান, পরিবার হারিয়েছে প্রিয়জন। সেই আত্মত্যাগই আজ স্বেচ্ছাসেবক দলের সংগ্রামী ইতিহাসকে আরও দৃঢ় করেছে এবং বাংলাদেশকে নতুন করে স্বৈরাচারমুক্তির পথে অগ্রসর করেছে।
নতুন প্রজন্মের প্রতি শপথ:
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শেষ প্রহরে সংগঠনের সভাপতি এম এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা দেন, ৪৫ বছর পূর্তির এই দিনে আমরা শপথ নিচ্ছি—যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করে হলেও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা হবে। শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা নতুন প্রজন্মকে সংগঠিত করব, জনগণের অধিকার আদায় করব।
শেষকথা:
স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫ বছরের পথচলা কেবল একটি সংগঠনের কাহিনি নয়—এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনেরই এক উজ্জ্বল অধ্যায়। শহীদ জিয়ার স্বপ্ন, তারেক রহমানের নেতৃত্ব ও রুহুল কবির রিজভীর মতো নেতাদের দৃঢ় আহ্বান এবং হাজারো কর্মীর আত্মত্যাগে আজও এই সংগঠন সংগ্রামের অগ্রভাগে।