প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৮:১৫ পিএম
আমার মনে হলো আমাদের আজকের আলোচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার। আর তা হলো—আমরা এখানে কেন? আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী? আপনারা শুনেছেন আমাদের প্রিয় শায়খ সাজ্জাদ সূরা আয-যারিয়াত থেকে যে আয়াতটি তেলাওয়াত করেছেন:
“ফা-যাক্কির, ইন্নাজ-যিকরা তানফাউল মু’মিনীন”—
অর্থাৎ, হে মুহাম্মাদ, তাদের স্মরণ করিয়ে দাও, নিশ্চয়ই স্মরণ করানো মুমিনদের উপকারে আসে।
এরপর আল্লাহ বলেন:
“ওমা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লি-ইয়াবুদূন”—
আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করিনি, শুধু আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।
আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁর অনুগত বান্দা হওয়া। কিন্তু ভাই-বোনেরা, আমরা দুনিয়ার কাজে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে জীবনের আসল উদ্দেশ্য ভুলে যাই। আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
অনেক সময় আমরা অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন, বড় বাড়ি, নতুন গাড়ির পেছনে ছুটি। এভাবে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হই। কেউ চাকরির ব্যস্ততায় নামাজ বাদ দিয়ে দেয়—এটা বড় গুনাহ। কোনো বোন ক্যারিয়ারের জন্য হিজাব খুলে ফেলে—এটাও ভুল। মনে রাখতে হবে, আমাদের সৃষ্টি ইবাদতের জন্য।
ইবাদত মানে কেবল নামাজ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত নয়। প্রতিটি আমল আমরা ইবাদতে রূপান্তরিত করতে পারি।
- পিতামাতার সাথে উত্তম ব্যবহার,
- সন্তান লালন-পালন,
- স্বামী-স্ত্রীর সাথে সুন্দর আচরণ,
- ব্যবসায় সততা,
সবই ইবাদত হয়ে যায়।
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“যে নেক আমল করে, পুরুষ বা নারী, আর সে মুমিন হয়—আমি তাকে অবশ্যই একটি পবিত্র ও সুখী জীবন দান করব।”
কল্পনা করুন, যদি কোনো ধনী-ক্ষমতাশালী মানুষ সুখী জীবনের নিশ্চয়তা দেয় তবে আমরা খুশি হই। অথচ এখানে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মহান আল্লাহ। তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন সুখী জীবনের।
হাদিসে এসেছে:
“যে ব্যক্তি তার সব দুশ্চিন্তাকে আখিরাতের চিন্তায় সীমাবদ্ধ করে দেয়, আল্লাহ তার দুনিয়ার সব দুশ্চিন্তা দূর করে দেন।”
আমরা কত বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি—সন্তান, চাকরি, স্বাস্থ্য, অর্থ ইত্যাদি। আল্লাহর নির্দেশ হলো, আখিরাতকে মুখ্য করো। প্রতিটি কাজের আগে ভেবে দেখো, এটা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে কি না। যদি করে—তাহলে করো, না করলে বিরত থাকো।
আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে—আমাদের রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। যতটুকু আমাদের জন্য লেখা আছে, আমরা মৃত্যুর আগে তা অবশ্যই পাব। কিন্তু জান্নাত পাওয়া আমাদের জন্য নিশ্চিত নয়। তাই আমাদের মনোযোগ হওয়া উচিত আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা, ইবাদত করা এবং জীবনের আসল উদ্দেশ্য পূরণ করা।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতিশ্রুত সুখী জীবন পেতে চাও, তবে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য বিষয়গুলোর সাথে নিজের হৃদয়কে মিলিয়ে নাও। নিয়মিত সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করো। সালাতকে আল্লাহর সাথে বিশেষ সাক্ষাৎ হিসেবে দেখো—যেমন আমরা আপনজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ দেরি করি না, তেমনি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎও দেরি করো না।
দ্বিতীয়ত, আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখো। জীবনের প্রতিটি দুশ্চিন্তা, আশা-আকাঙ্ক্ষা দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর হাতে সমর্পণ করো। এভাবে তুমি প্রশান্তি পাবে, এবং জীবনের পথ চলায় স্পষ্টতা আসবে।
সালাত ও দোয়া শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, এগুলো হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যম। ভোরে উঠো, মন নরম রাখো, নিয়মিত সালাত আদায় করো, আর আন্তরিকভাবে দোয়া করো—যত ছোট দোয়া হোক, বিশ্বাস রাখো আল্লাহ শুনছেন।
এই দ্বৈত পদ্ধতি—সালাতের সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পৃক্ত থাকা এবং আল্লাহর উপর ভরসা করা—শুধু আধ্যাত্মিক জীবন নয়, দুনিয়াবি জীবনকেও বদলে দেয়। তোমার জীবনে আসবে সফলতা, প্রশান্তি ও স্থায়ী সুখ।
সুতরাং এই অভ্যাসগুলো আঁকড়ে ধরো এবং দেখো কিভাবে আল্লাহ তোমার জীবনকে আলোয় ভরে দেন, নিশ্চিন্ত সুখে পরিণত করেন।