শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫
একজন মোহাম্মদ আলী খান

সংগ্রাম, সততা আর ভালোবাসায় গড়া মানুষের রাজা

মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০৭:৩৬ পিএম

সংগ্রাম, সততা আর ভালোবাসায় গড়া মানুষের রাজা

কিছু মানুষ আছেন, যাদের জীবন যেন সৃষ্টিকর্তার হাতে লেখা এক অনন্য কবিতা—যেখানে প্রতিটি লাইন ভরা ত্যাগে, প্রতিটি শব্দে অটল সততার ছাপ, আর প্রতিটি বিরতিতে ভালোবাসার নীরব কান্না।
মোহাম্মদ আলী খান তাঁদেরই একজন।

যাঁর জীবনের গল্প শুধুই একটি মানুষের নয় এটি এক পরিবারের, এক স্ত্রীর, এক গ্রামের, এমনকি একটি সময়ের গল্প। এই গল্পে আছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই, আছে অশ্রুসিক্ত অপমান, আছে অবিশ্বাস্য সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো, আছে শত্রুর ষড়যন্ত্র, এবং সবকিছুর উপরে আছে একজন স্ত্রীর অবিচল সঙ্গ যা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থেকে গেছে।

শৈশব ও কৈশোর

১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি, শীতল সকালের কুয়াশায় ঢাকা ঝালকাঠির খাওখির গ্রামে জন্ম নেন মোহাম্মদ আলী খান। গ্রামের ভোরের সেই শান্ত দৃশ্য পুকুরের ধারে নারকেল গাছের নিচে জমে থাকা শিশির, দূরে ধানের জমিতে হিমেল বাতাসের দোল, আর বাঁশবাগানের ফাঁক দিয়ে ভেসে আসা মোরগের ডাক ছিল তাঁর প্রথম পৃথিবী। পিতা আশরাফ আলী খান ছিলেন পরিশ্রমী কৃষক জীবন কাটিয়েছেন মাটির গন্ধ আর ঘামে ভেজা মাঠের সঙ্গেই। মাতা সরবানু বেগম ছিলেন ঘরের প্রাণ দৃঢ়, প্রজ্ঞাবান, আর অসীম ধৈর্যের অধিকারিণী।

সাত ভাইবোনের মধ্যে মোহাম্মদ ছিলেন মেঝ। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন শান্ত, সংযমী, মিতভাষী, আর সবার প্রতি অগাধ স্নেহশীল। গ্রামের মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো যেন তাঁর স্বভাব হয়ে গিয়েছিল। পাড়ার বাচ্চাদের দেখাশোনা করা, কারও জমিতে সাহায্য করা, অসুস্থের জন্য ওষুধ আনতে যাওয়া—এসব ছিল তাঁর নিত্য কাজ।

শৈশব থেকেই প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন তিনি। তৃতীয় শ্রেণিতেই ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত ঘরের নামতা মুখস্থ বলে ফেলতে পারতেন অনায়াসে। পিতার স্বপ্ন ছিল “আমার এই ছেলে একদিন অনেক বড় হবে, শিক্ষিত হবে, সবার উপকার করবে।”
কিন্তু সেই স্বপ্নের পথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেই তাঁকে নামতে হয় জীবনের কঠিন মাঠে কারণ পরিবারের ভার এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। বৃদ্ধ পিতার অসুস্থতা, ছোট ভাইবোনদের পড়ালেখা আর সংসারের খরচ সবই তখন এক কিশোরের দায়িত্ব হয়ে গেল। কৈশোরেই তিনি শিখে গেলেন জীবনের পাঠশালায় সবচেয়ে বড় শিক্ষক হলো অভাব আর দায়িত্ব।

জীবনযুদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ ও বিয়ের গল্প

দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতেই মোহাম্মদ আলী খান যেন হঠাৎ করেই বড় হয়ে গেলেন। বয়স তখন কিশোর, কিন্তু দায়িত্বের বোঝা ছিল এক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সমান। বৃদ্ধ পিতার অসুস্থতা আর সংসারের অভাব তাঁকে থামিয়ে দিল বইয়ের পাতায়। একদিন ভোরবেলা, মা চুপচাপ হাতে এক বাটি ভাত তুলে দিলেন “বাবা, কিছু খেয়ে নে, আজ তোকে বাইরে যেতে হবে।” সেই দিনই শুরু হল তাঁর জীবনযুদ্ধের প্রথম পদক্ষেপ একটি ইটভাটায় দিনমজুরের কাজ। ভোরের কুয়াশা ভেদ করে হেঁটে যাওয়া, দিনের পর দিন রোদে-গরমে ইট বহন, ধুলায়-ধোঁয়ায় ভেজা শরীর এসবই ছিল তাঁর নতুন বাস্তবতা। কিন্তু তাঁর হাতে ছিল সততার শপথ, মনে ছিল আত্মসম্মানের দৃঢ়তা। ইটভাটার মালিকেরা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করলেন এই ছেলেটির চোখে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা আছে, যা শুধু অভাবের নয়, স্বপ্নেরও কথা বলে। ধীরে ধীরে তাঁর নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা, আর কর্মদক্ষতা সবার নজরে এলো।

বিয়ের প্রস্তাব

কয়েক বছর এভাবেই চলে গেল। ঠিক তখনই তাঁর বাবা একদিন ডেকে বললেন, “বাবা, আমার সময় তো আর বেশি নেই। আমি চাই তোমার বিয়ে দিয়ে যেতে।” মোহাম্মদ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। মনের ভেতর হিসাব কষলেন এখন তো সংসার কোনোমতে চলছে, নতুন একজন এলে সেই খরচ, সেই দায়িত্ব… আর যদি শ্বশুরবাড়ি ভালোভাবে না নেয়? তিনি বিনয়ের সাথে বললেন, “বাজান, আমাকে আরও কিছুদিন সময় দিন।” কিন্তু অভিজ্ঞ বাবা নাছোড়বান্দা। হাসিমুখে বললেন, “তোমার মায়ের বোনের মেয়ে সালেহা রূপে-গুণে অনন্যা। আমি চাই সে তোমার ঘরে আসুক।” মায়ের চোখে তখন অদ্ভুত এক আলো। সালেহার বাবা, অর্থাৎ মোহাম্মদের খালু, ছিলেন তৎকালীন জমিদারদের একজন প্রচুর জমি, ধন-সম্পদ, সম্মান। মোহাম্মদের মা নিজেও ছিলেন সবার কাছে পরিচিত পর্দানশীল ও সম্মানিত নারী। বোনের মেয়ে সালেহা যদি পুত্রবধূ হয়, তাহলে মোহাম্মদের জীবনে স্থিতি আসবে এটাই ছিল তাঁর বিশ্বাস।

প্রস্তাবের অপমান

অবশেষে মোহাম্মদ রাজি হলেন। বাবা মিষ্টি নিয়ে গেলেন প্রায় তিন-চার কিলোমিটার দূরের মগর গ্রামে, সালেহার বাবার কাছে। তাঁর মনে দৃঢ় বিশ্বাস “আমার ছেলে লাখে একটা; এখন হয়তো আয় কম, কিন্তু একদিন সে অনেক বড় হবে।” কিন্তু প্রস্তাবের জবাব এল বজ্রাঘাতের মতো। সালেহার বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন “আমার সোনার টুকরা মেয়েকে চালচুলোহীন ছেলের কাছে দেব? আমার সাহায্যে তোমার সংসার চলে—এটা ভুলে গেছ?”
এ শুধু না বলা নয়, এটি ছিল প্রকাশ্য অপমান। ঘরের সবাই শোনার মতো উচ্চস্বরে কথা বললেন, এবং শেষমেশ তাড়িয়ে দিলেন মোহাম্মদের বাবাকে। ঘোষণা দিলেন আজ থেকে সব সম্পর্ক শেষ, আর কোনো সাহায্য নয়।

অপমান থেকে প্রতিজ্ঞা

বাড়ি ফিরে বাবার মুখের কষ্ট দেখে মোহাম্মদের বুক ভেঙে গেল। তিনি কিছু বললেন না, শুধু বাবার হাত চেপে ধরলেন। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন “একদিন আমি এমন হবো, যাতে কেউ আমার পরিবারের দিকে অপমানের চোখে তাকাতে না পারে।” কিছুদিনের মধ্যে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যস্থতায় অবশেষে সালেহার বাবা রাজি হলেন। কিন্তু বিয়ের দিনও কণ্ঠে রইল তীব্র বিষ “আমার সবচেয়ে আদরের মেয়েটাকে আমি নিজ হাতে সাগরে ভাসিয়ে দিলাম।” মোহাম্মদ সেই মুহূর্তে কারও দিকে তাকালেন না। শুধু মাটির দিকে চোখ রেখে মনে মনে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বললেন “এই মেয়ে আমার জীবনের সঙ্গী আমি তাকে কষ্টে রাখব না।”

শৈশব বধূ সালেহা

মাত্র ১২ বছরের কিশোরী সালেহা তখনও বুঝে উঠতে পারেননি সংসার বা জীবনের অর্থ। নতুন ঘরে পা রাখতেই দেখলেন মাথা গোঁজার মতো একটি ছনের চালা দেওয়া ছোট্ট ঘর। তবুও হাসিমুখে, ধীরে ধীরে নিজের জীবনটাকে মানিয়ে নিতে লাগলেন। তাঁর আগমনের কিছুদিনের মধ্যেই যেন মোহাম্মদের জীবনে এক আশ্চর্য বরকত নেমে এলো। একদিন স্বামীর হাত ধরে বললেন “চিন্তা করবেন না, আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। আমি আছি আপনার সাথে। ইনশাআল্লাহ সব বিপদ কেটে যাবে।” সেই হাত ধরা ছিল শুধু ভালোবাসা নয় ছিল এক আজীবন লড়াইয়ের অঙ্গীকার।

সংসারের প্রথম ঝড় ও সালেহার অবিচল সঙ্গ

বিয়ের পর কিছুদিন যেন শান্তিতে কেটেছিল। সংসার ছিল ছোট, কিন্তু ভালোবাসায় পূর্ণ। সালেহা খুব দ্রুত বুঝে ফেলেছিলেন এই সংসারের শক্তি ও দুর্বলতা দুটোই তাঁর স্বামী। তাই তিনি সবসময় হাসিমুখে, সাহস জোগানো কথায় মোহাম্মদের ক্লান্তি মুছে দিতেন। কিন্তু সুখ বেশিদিন স্থায়ী হলো না। একদিন ভোরে খবর এল মোহাম্মদের বাবা মারা গেছেন। খবর শুনে যেন মুহূর্তে ভেঙে পড়ল পৃথিবী। দৌড়ে বাড়িতে এসে দেখলেন, আঙিনায় অশ্রু আর কান্নার স্রোত, আর এর মাঝেই এক প্রতিবেশী ঘরের ছনের চালা টেনে খুলছে কারণ তাঁর দাবি, “তোমার বাবা আমার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল, চালাটা আমি নিয়ে যাচ্ছি।” এ দৃশ্য দেখে মোহাম্মদের বুকের ভেতর ক্ষোভ, অপমান আর শোক একসাথে জ্বলে উঠল। কিন্তু শোকের মাঝেও প্রতিবেশীকে থামানোর মতো সামর্থ্য তখন তাঁর ছিল না। বাড়ির এক এক চাচা মধ্যস্থতা করে বললেন, “কিছুদিন সময় দাও, টাকা ফেরত দিলে চালা ফেরত পাবে।” চালাটা থেকে গেল, কিন্তু সেদিন বাবার দাফনের সময় মোহাম্মদ মনে মনে শপথ নিলেন এভাবে অপমানের জীবন আর নয়।


জমি হারানোর বেদনা আর ৪০ বছরের অপেক্ষা

বাবার দাফনের কয়েকদিন পরই যেন আকাশ ভেঙে পড়ল তাঁর মাথায়। এক চাচা এসে নির্লিপ্ত মুখে বললেন “তোমার বাবার যতটুকু সম্পদ ছিল, সবই আমার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন এমনকি তুমি যে ঘরে থাকো, সেই জমিটাও।” শুনে মোহাম্মদ আলী খান যেন জমে গেলেন। বুকের ভেতর চাপা হাহাকার, চোখ ভরে উঠছে জল, অথচ মুখ দিয়ে একটি শব্দও বের হচ্ছে না। যে ঘরে জন্মেছেন, যে মাটিতে শৈশব কেটেছে সেই জায়গা অন্যের দখলে চলে গেছে ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছিল। তখন আগের সেই সমঝোতাকারী চাচা ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে সান্ত্বনা দিলেন “ওরা জাল দলিল করেছে। ভয় পাস না একদিন সব তুই ফেরত পাবি।” এই সান্ত্বনাতেই তিনি ভরসা খুঁজলেন। অনুরোধ করলেন “কিছুদিন থাকতে দাও। টাকা ফেরত দিতে পারলে অংশ ফিরিয়ে দিও, না হলে আমি চলে যাব।” এভাবেই শুরু হলো তাঁর নতুন সংগ্রাম ঘরবাড়ি হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে, প্রতিটি দিন নতুন করে বাঁচার চেষ্টা। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার রহমত আর মানুষের জীবনের অদ্ভুত মোড়ের সাক্ষী হলো এই গল্প।

চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় কেটে গেল একের পর এক রাজনৈতিক ঝড়, মামলা-হামলা, দুঃখ-কষ্ট, হারানো আর ফিরে পাওয়ার গল্প জমা হলো তাঁর জীবনে। তারপর একদিন, বয়সের ঢালু পথে দাঁড়িয়ে সেই একই চাচা তাঁর দরজায় এসে দাঁড়ালেন। চোখে একধরনের অনুতাপ, কণ্ঠে কাঁপুনি “তুমি তোমার জমি বুঝে নাও। আমার ভুল হয়েছিল।” মুহূর্তটি যেন সময় থমকে গেল। যে জমির জন্য তাঁর বুকের ভেতর এতদিন ব্যথা জমে ছিল, যে জমির প্রতিটি কণার সাথে শৈশবের হাসি-কান্না মিশে আছে—সেই জমি তিনি ফিরে পেলেন। প্রায় দুই একর জমি তিনি নিজ হাতে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে গেলেন সেই চাচা। এ যেন শুধু জমি ফেরত পাওয়া নয়—এটা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর সততা, ধৈর্য আর সৎ পথে থাকার পুরস্কার। মোহাম্মদ আলী খান সেদিন শুধু জমি ফেরত পাননি ফেরত পেয়েছিলেন নিজের মর্যাদা, নিজের শেকড়, আর নিজের জীবনের এক হারানো অধ্যায়।

সালেহার অটল হাতধরা

এই সব অপমান, শোক, আর অনিশ্চয়তার দিনে সালেহা ছিলেন তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি। প্রতিদিন সকালে রান্না সেরে স্বামীর সামনে এক কাপ গরম চা রেখে বলতেন “আপনি শুধু চেষ্টা চালিয়ে যান, আল্লাহ আমাদের জন্য দরজা খুলে দেবেন।” তাঁর হাতের রান্না শুধু সংসারেই নয়, পুরো এলাকায় সুনাম কুড়িয়েছিল। মগর ইউনিয়নে তখন প্রায় সবাই বলত “মোহাম্মদের বউয়ের হাতের ভাত না খাওয়া মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।” সালেহার এই অবিচল সমর্থনই ছিল মোহাম্মদের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা। তাঁর সেই হাসিমুখ, সাহসী কথা, আর পরিশ্রমী মনোভাব ধীরে ধীরে মোহাম্মদের জীবনে আনতে শুরু করল আশার আলো। উন্নতির পথে শ্রমিক থেকে নেতৃত্বে বাবার মৃত্যু, জমি হারানোর অপমান, আর সংসারের টানাপোড়েন সবকিছুর মাঝেও মোহাম্মদ আলী খান ভেঙে পড়েননি। প্রতিদিন ভোরে যখন গ্রামের মাঠে কুয়াশা ভাসত, তখনই তিনি কাজের সন্ধানে বেরিয়ে যেতেন। হাতে থাকত সালেহার দেওয়া গরম ভাতের গামলা আর এক গ্লাস পানি। সালেহা প্রতিদিন বিদায় দেওয়ার সময় একটিই কথা বলতেন “আপনি শুধু হাল ছাড়বেন না। আল্লাহ আপনার জন্য সহজ করে দেবেন।” এই কথাগুলো যেন মোহাম্মদের বুকে বর্মের মতো শক্তি জোগাত।

প্রথম উন্নতি

যেখানে তিনি সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন, সেখানেই একদিন তাঁর সততা ও কর্মদক্ষতা মালিকের নজরে এল। একদিন মালিক তাঁকে ডেকে বললেন, “তুমি শুধু কাজ করো না, তুমি অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করো। আমি চাই তুমি এখন ম্যানেজারের দায়িত্ব নাও।” এটি ছিল জীবনের প্রথম বড় পদোন্নতি। ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর মোহাম্মদ শুধু নিজের উন্নতির কথা ভাবেননি তিনি চেষ্টা করতেন সব শ্রমিকের ভালো থাকার জন্য। কারও অসুখ হলে টাকা দিতেন, কারও বাড়িতে সমস্যা হলে ছুটি দিতেন, এমনকি নিজের হাতে খাবার পৌঁছে দিতেন।

শীর্ষ দায়িত্বে পৌঁছানো

সততা, পরিশ্রম ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে মালিক খুব অল্প সময়েই তাঁকে পুরো গ্রুপ অব বিজনেসের দায়িত্ব অর্পণ করলেন। এমনকি ঘোষণা করলেন “এখন থেকে ব্যবসার লাভে তোমারও অংশ থাকবে।” এটি শুধু আর্থিক স্বচ্ছলতার দরজা উন্মুক্ত করল না, বরং সমাজে তাঁর মর্যাদাকে আকাশচুম্বী করে তুলল। গ্রাম থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে জেলা সব জায়গায় তাঁর নাম সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হতে লাগল। ক্রমে তিনি নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিষ্ঠা করেন সান ব্রিকস, এমএসপি ব্রিকস, সোহাগ স-মিল ও রাইস মিল। আমিরাবাদ বাজারে গড়ে তোলেন অসংখ্য দোকানঘর। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন এলাকার অন্যতম প্রভাবশালী ও সফল ব্যবসায়ী কিন্তু সাফল্যের শিখরে থেকেও রয়ে যান আগের মতোই সাধারণ ও মানুষের আপনজন।

সাফল্যের পেছনের হাত

এই সাফল্যের আসল কৃতিত্ব যে কার, তা নিয়ে মোহাম্মদের কখনো সন্দেহ ছিল না সেটি সালেহা। সালেহা শুধু স্ত্রী নন—তিনি ছিলেন একজন সহযোদ্ধা, যিনি প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে স্বামীর পাশে থেকেছেন। তার হাতের রান্না ছিল শুধু স্বামীর পেট ভরানোর জন্য নয়, ছিল অসংখ্য অতিথি, শ্রমিক, দরিদ্র মানুষের জন্য উন্মুক্ত। এলাকায় একটি প্রবাদ হয়ে গিয়েছিল “মগর ইউনিয়নে মোহাম্মদের ঘরে ভাত না খেয়ে কেউ ফেরে না।” মানুষের সুখ-দুঃখে মোহাম্মদ ও সালেহা দু’জনই ছুটে যেতেন। কেউ সাহায্য চেয়ে এসে খালি হাতে ফিরেছে এমন ঘটনা ছিল না।

সময় নিজের সাক্ষী

জীবনের চক্রে একদিন সেই প্রতিবেশী যিনি বাবার মৃত্যুর পর ঘরের চালা খুলে নিতে চেয়েছিলেন নিজের পাওনা বুঝে নিয়ে উল্টো মোহাম্মদের অধীনে কাজ শুরু করলেন। বছরের পর বছর তিনি মোহাম্মদের ঘরে কাজ করলেন। সময় যেন নিজেই সাক্ষী হয়ে রইল মানুষের চরিত্র ও ভাগ্য কিভাবে বদলায়, যখন কারও জীবনে সততা ও পরিশ্রম থাকে। রাজনীতিতে প্রথম পদক্ষেপ ও মানুষের ভালোবাসা তখন তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ব্যবসায়িক সাফল্য, সততা, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মনোভাব তাঁকে গ্রাম থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে জেলা পর্যায়ে পরিচিত করে তুলেছে। যেখানেই যেতেন, মানুষ হাসিমুখে সম্ভাষণ জানাত, বলত “মোহাম্মদ ভাই, আপনি থাকলে আমরা নির্ভয়ে থাকতে পারি।” এমন সময়ে একদিন কয়েকজন প্রবীণ গ্রামবাসী ও নিকট আত্মীয় বাড়িতে এলেন। বসার ঘরে চা-নাশতার পর তাঁরা সরাসরি বললেন “আমরা চাই আপনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে দাঁড়ান।” মোহাম্মদ প্রথমে চুপ করে রইলেন। রাজনীতিতে তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল না, আর ক্ষমতার খেলায় তিনি ছিলেন একেবারেই নতুন। কিন্তু মানুষ যখন বলে“আমরা আপনার উপর আস্থা রাখি” তখন তা শুধু আমন্ত্রণ নয়, তা হয়ে ওঠে দায়িত্ব। স্ত্রীর সাথে বিষয়টি আলোচনা করলেন। সালেহা হাসিমুখে বললেন “মানুষের ভালোবাসা হারাতে নেই। চেষ্টা করুন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনাকে সফল করবেন।”

প্রথম নির্বাচন

তবুও তিনি চেয়ারম্যান নয়, মেম্বার পদে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন শুধু শিখতে ও অভিজ্ঞতা নিতে। তৎকালীন মগর ইউনিয়ন ছিল বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ইউনিয়ন, আর সেই সময়ে  মেম্বারদের জন্য ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল পুরো ইউনিয়নের মানুষের। প্রথম নির্বাচনে যা ঘটল, তা ছিল অভূতপূর্ব চেয়ারম্যানের সমান ভোট পেয়ে এক নম্বর মেম্বার নির্বাচিত হলেন। মানুষের ভালোবাসা যেন ভোটের বাক্স ভরে দিয়েছিল। কয়েক মাসের মধ্যেই তৎকালীন চেয়ারম্যান জেলে গেলেন। সরকারি নিয়মে মোহাম্মদ আলী খানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলো।

গরিবের বন্ধু চেয়ারম্যান

চেয়ারম্যান হওয়া শুধু একটি পদ নয় এটি দায়িত্ব, ত্যাগ এবং মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়ার এক কঠিন পরীক্ষা। মোহাম্মদ আলী খানের কাছে এটি ছিল ঠিক তেমনই ক্ষমতার চেয়েও বড় ছিল মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা। চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর কার্যকালে ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষ তাঁকে দেখেছে একজন অভিভাবকের মতো। তাঁর ঘর যেন ছিল একটি উন্মুক্ত দরবার যেখানে ধনী-গরিব, ছোট-বড়, সবাই সমানভাবে প্রবেশ করত। দিন হোক বা রাত, উৎসব হোক বা দুঃসময় ২৪ ঘণ্টা তাঁর ঘরের দরজা খোলা থাকত মানুষের জন্য। এত বড় সেবার কাজ একা সম্ভব হতো না যদি না পাশে থাকতেন তাঁর প্রাণপ্রিয় সহধর্মিণী সালেহা। তিনি ছিলেন স্বামীর সত্যিকারের সহযোদ্ধা যিনি রান্নাঘর থেকে শুরু করে অতিথি আপ্যায়ন, অসুস্থ মানুষকে সেবা দেওয়া, প্রয়োজনমতো নগদ টাকা ধার দেওয়া সবকিছু নিজের হাতে করতেন। অনেক সময় দেখা যেত, রাত দুইটা বাজে দূর গ্রাম থেকে কেউ দৌড়ে এসেছে অসুস্থ সন্তানের জন্য সাহায্য চাইতে। সালেহা বিন্দুমাত্র বিরক্ত না হয়ে সঙ্গে সঙ্গে খাবার তৈরি করে, কাপড় গুছিয়ে, টাকা হাতে দিয়ে তাদের বিদায় করতেন। গ্রামের গরিব কৃষক, দিনমজুর, বিধবা নারী, অসহায় বৃদ্ধ যাদের কারও পক্ষে সরকারি দপ্তরে গিয়ে আবেদন করা সম্ভব ছিল না—তাদের হয়ে চেয়ারম্যান নিজেই সব কাজ করে দিতেন। তিনি কখনও মানুষকে কেবল প্রতিশ্রুতিতে আটকে রাখতেন না; নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী তাৎক্ষণিক সাহায্য করতেন। তাঁর এই মানবিকতার জন্য ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ তাঁকে এক বিশেষ উপাধি দিল “গরিবের বন্ধু”। এই উপাধি কেবল প্রশংসা নয়, ছিল এক গভীর ভালোবাসার স্বীকৃতি। এলাকার বৃদ্ধরা আজও বলেন “চেয়ারম্যান সাহেবের ঘরে গিয়েছিলাম খালি হাতে, ফিরেছি ভরা মনে।” তাঁর বসার ঘরের এক কোণে সবসময় রাখা থাকত চালের বস্তা, ডাল, লবণ, তেল যাতে কেউ সাহায্যের জন্য এলে সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেওয়া যায়। কেউ হয়তো এসেছেন চিকিৎসার জন্য টাকা নিতে, কেউ সন্তানের বিয়ের খরচের জন্য, কেউ আবার স্কুলের ফি দিতে না পেরে। চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী খান তাদের একবারও হতাশ করেননি, যতটুকু পেরেছেন দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন “মানুষের দুঃখে পাশে দাঁড়ানোই আমার রাজনীতি, আমার ইবাদত।” আর তাঁর স্ত্রী সালেহা বিশ্বাস করতেন “মানুষকে খাওয়ানোই আমার সুখ।” এই অসাধারণ দম্পতির সেবামূলক জীবনধারা ইউনিয়নের মানুষের কাছে এক জীবন্ত উদাহরণ হয়ে রইল যেখানে ক্ষমতা ছিল না শাসনের হাতিয়ার, বরং ভালোবাসা আর সহযোগিতার অবিরাম উৎস।

উন্নয়নের স্বপ্ন

দায়িত্ব হাতে নিয়েই তিনি শুরু করলেন উন্নয়ন পরিকল্পনা। গ্রামের রাস্তা মেরামত, স্কুল-মাদ্রাসার উন্নয়ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা সব কিছুতেই তিনি ছিলেন সরাসরি উপস্থিত। মানুষ বলত “আমাদের চেয়ারম্যান শুধু কাগজে-কলমে নেই, তিনি মাঠে থাকেন।” তাঁর সততা ও নিরলস পরিশ্রমের খবর পৌঁছে গেল জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত। তৎকালীন জাতীয় পার্টির এমপি জুলফিকার আলী ভুট্টো নিজেই তাঁকে দলে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। এলাকাবাসীর পরামর্শে উন্নয়নের স্বার্থে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে ইউনিয়ন সভাপতির দায়িত্ব নিলেন।

আরও দুইবার বিপুল জয়

পরবর্তী দুই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন। তাঁর জয় শুধু ভোটের সংখ্যা দিয়ে নয়, মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে মাপা হতো। গ্রামে, বাজারে, চায়ের দোকানে সবখানেই তাঁর নামে আলোচনা হতো, আর মানুষ বলত “চেয়ারম্যান সাহেব থাকলে অন্যায় করার সাহস কেউ পায় না।” রাজনীতির ঈর্ষা, ষড়যন্ত্র ও পতনের পথ সাফল্য যেমন আলো আনে, তেমনি তার ছায়ায় লুকিয়ে থাকে অন্ধকার। মোহাম্মদ আলী খান তখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে তাঁর নেতৃত্বে ইউনিয়নে শান্তি, উন্নয়ন, এবং সুশাসন ফিরে এসেছে। মানুষ বলত “মোহাম্মদ চেয়ারম্যান থাকলে অন্যায়ের কোনো ঠাঁই নেই।” কিন্তু এই জনপ্রিয়তাই হয়ে উঠল তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের আগুনের খোরাক।

ঈর্ষার জন্ম

কিছু খারাপ ও লোভী ব্যক্তি, যারা একসময় তাঁর ছায়ায় দাঁড়িয়ে রাজনীতির স্বাদ পেয়েছিল, এখন মনে মনে ভয় পেতে লাগল “এই জনপ্রিয়তায় যদি আরও কয়েক বছর চলে, তাহলে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ানোর স্বপ্ন আমাদের জন্য চিরদিনের মতো শেষ।” এভাবে ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে জমে উঠল ঈর্ষা ও শত্রুতা। যারা একসময় তাঁর বাসায় বাজার করে দিত, বিপদে এগিয়ে আসত, তারাই আড়ালে তাঁকে নিয়ে কটু কথা বলতে শুরু করল।

রাজনৈতিক পালাবদল

২০০০ সালে জাতীয় পার্টির এমপি জুলফিকার আলী ভুট্টো মারা গেলে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথেই তাঁর প্রতি শুরু হলো নতুন চাপ। আমির হোসেন আমু সরাসরি বললেন “আমাদের দলে যোগ দিন, না হলে আপনার অনেক ক্ষতি হবে।” প্রথমে মোহাম্মদ আলী খান বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করলেন। কিন্তু চাপ বেড়েই চলল প্রশাসনিক ভয়, রাজনৈতিক হুমকি, এবং প্রতিপক্ষদের সক্রিয় সহযোগিতা আমুকে আরও সাহস দিল।

চাপের রাজনীতি ও বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত

অবশেষে, উন্নয়ন কাজ থমকে যাওয়ার আশঙ্কায় এবং জনগণের স্বার্থে তিনি বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন। তাঁকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হলো। কিন্তু সমস্যা ছিল তিনি দলের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য যেসব অনৈতিক পদ্ধতি চালু ছিল, তিনি সেগুলোতে রাজি হতেন না। ফলে দলীয় ভেতরেও তৈরি হলো অসন্তোষ।

ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত রূপ

২০১৩ সাল মোহাম্মদ আলী খানের জীবনের এক মোড় পরিবর্তনের বছর। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দায়িত্ব, মানুষের জন্য নিরলস কাজ, এবং নানান চাপের মধ্যে থেকেও তিনি কখনো পিছু হটেননি। কিন্তু ধীরে ধীরে চারপাশের রাজনৈতিক পরিবেশ বদলে যাচ্ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা রূপ নিচ্ছিল প্রতিহিংসায়, মতের অমিল রূপ নিচ্ছিল শত্রুতায়। দলের ভেতরের ক্ষমতার লড়াই, প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র আর অবিরাম মানসিক চাপে তিনি বুঝলেন এ পথ আর শান্তির নয়। মনের গভীরে ছিল একটি আকাঙ্ক্ষা আল্লাহর ঘরে গিয়ে শান্তি খোঁজা, জীবনের হিসাব-নিকাশ নিজের রবের কাছে তুলে ধরা। তাই একদিন তিনি দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেন “আমি সবকিছু ছেড়ে দিচ্ছি। আল্লাহর ঘরে যাচ্ছি।” সভাপতির পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে তিনি পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন মক্কার পথে। ভেবেছিলেন, কিছুদিনের জন্য হলেও দুনিয়ার কলহ থেকে মুক্তি পাবেন, মন শান্ত হবে, আত্মা নতুন করে শক্তি পাবে। কিন্তু ঠিক এই সময়টাই হয়ে উঠল তাঁর জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অধ্যায়ের শুরু। তাঁর দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষরা অপেক্ষায় ছিল এমন একটি মুহূর্তের যখন তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াবেন, আর তারা সুযোগ নেবে। এবং সেই সময়েই শুরু হলো ষড়যন্ত্রের জাল বোনা। একটার পর একটা মিথ্যা মামলা তাঁর নামে দায়ের করা হলো। এসব মামলার অভিযোগ ছিল কল্পনাতীত যেন তাঁকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। আরও নির্মম ছিল এই যে, মামলার জালে শুধু তাঁকেই নয় তাঁর পরিবারকেও টেনে আনা হলো। প্রিয় সহধর্মিণী সালেহা, যিনি সারা জীবন স্বামীর পাশে থেকে মানুষের সেবা করেছেন, তাকেও অপমানজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হলো। ছোট ছেলে, তখনো কলেজের ছাত্র, তাকেও এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হলো। প্রশাসনিক হয়রানি, পুলিশের তলব, মিথ্যা সাক্ষী সব মিলিয়ে যেন এক অবিরাম দুঃস্বপ্ন। মানুষ যাকে একদিন “গরিবের বন্ধু” বলে ডাকত, সেই মানুষটিকে এখন কিছু কুচক্রী শক্তি অপরাধী হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সত্যের আলো যতই ঢেকে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেন, এলাকার সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় ঢাল। তিনি অনেক পরে একবার বলেছিলেন “রাজনীতি আমার জন্য ছিল মানুষের সেবা করার পথ। কিন্তু যখন দেখলাম এ পথ মানুষের ক্ষতি করার অস্ত্র হয়ে যাচ্ছে, তখনই আমি সরে আসি। তবে তারা চায়নি আমি সম্মানের সাথে বিদায় নেই তারা চেয়েছিল আমাকে ভেঙে দিতে, মুছে ফেলতে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে, আমি টিকে আছি।”

পরিবারে আঘাত

সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্ত ছিল তাঁর ছোট ছেলে তখন বিএম কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। রাজনৈতিক হয়রানির কারণে তাঁকে এলাকা ছাড়তে হলো, স্বপ্ন থমকে গেল মাঝপথে। মোহাম্মদ আলী খান পরবর্তীতে বলেছিলেন “আমি আমার জীবনে অনেক আঘাত সহ্য করেছি, কিন্তু সন্তানের চোখে ভয় আর অসহায়তা দেখার মুহূর্ত ছিল সবচেয়ে বেদনাদায়ক।”

মিথ্যার শৃঙ্খল ভেঙে ফেরা

জীবনে মোহাম্মদ আলী খানকে যে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, তা ছিল এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের মতো। একাধিক মিথ্যা মামলা তাঁর কাঁধে ঝুলছে প্রতিটি মামলাই ছিল তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা ধ্বংস করার জন্য তৈরি। কোর্ট, থানার হাজিরা, আইনজীবীর অফিস, কাগজপত্রের পাহাড় দিন যেন এক অনন্ত দৌড়ের মধ্যে কেটে যাচ্ছিল। কখনো সকাল সকাল আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে দুপুর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, কখনো আবার ভোরে বের হয়ে জেলা শহর থেকে ফিরে আসতে হতো রাত করে। প্রতিটি দিন তাঁর এবং তাঁর পরিবারের জন্য ছিল অস্থিরতার আর্তনাদ একদিকে আইনি লড়াই, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের কুৎসা, গুজব, অপমান। সবচেয়ে কষ্টদায়ক ছিল অর্থনৈতিক চাপ। আইনজীবীর ফি, মামলার খরচ, যাতায়াত, নথিপত্র সব মিলিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা এই লড়াই তাঁকে প্রায় নিঃস্ব করে ফেলল। যে মানুষটি একসময় শত শত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন, গরিবদের ঘরে চাল-ডাল পৌঁছে দিয়েছেন, সেই মানুষটিকেই এখন নিজের সংসার চালাতে হিসাব কষে চলতে হচ্ছিল। তবুও তিনি ভেঙে পড়েননি। প্রতিটি নামাজে হাত তুলে আল্লাহর কাছে শুধু একটি প্রার্থনা করতেন “হে আল্লাহ, যদি আমি নির্দোষ হই, তাহলে আমাকে মানুষের সামনে সত্যের সাথে মুক্তি দাও।” সময় গড়াল, বছর পেরোল। ধীরে ধীরে প্রতিটি মামলার শুনানিতে সত্য প্রকাশিত হতে লাগল প্রমাণ হলো, সব অভিযোগ ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল। একদিন সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত এলো আদালত একে একে সব মামলা থেকে তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দিল। গভীর শ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি কেবল বললেন “আলহামদুলিল্লাহ!” কিন্তু এই মুক্তির আনন্দেও লুকিয়ে ছিল বেদনা। মামলা মোকাবেলায় তাঁর যা কিছু ছিল, প্রায় সবই শেষ হয়ে গেছে। তবুও তিনি বলতেন “টাকা-পয়সা আবার আসবে, কিন্তু সততা আর সম্মান যদি হারিয়ে যেত, তাহলে আর কিছুই ফিরত না।” এভাবে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং নিজের সততার জোরে তিনি ফিরে পেলেন তাঁর সম্মান, মর্যাদা এবং মানুষের আস্থা। যদিও জীবনের অনেক কিছু হারিয়েছেন, কিন্তু মানুষের হৃদয়ে তাঁর জায়গা অটুট রইল আর সেটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় জয়।

রাজনীতি থেকে নির্বাসন

প্রতিপক্ষ ও ক্ষমতাসীনরা তাঁকে আর কোনো নির্বাচনে দাঁড়াতে দিল না। শুভাকাঙ্ক্ষীরা টাকা দিলেও প্রচারণার অনুমতি দেওয়া হতো না। প্রশাসনিকভাবে হয়রানি, সামাজিক অপমান সবই তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে। তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পর ইউনিয়নে শুরু হলো অব্যবস্থা অন্যায়, দুর্নীতি, মাদক, জুয়ার দৌরাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। মানুষ তখন বুঝতে পারল “আমাদের প্রকৃত অভিভাবককে হারিয়েছি।”

জনতার ডাক ও প্রত্যাবর্তন

সময় মানুষের অনেক কিছু কেড়ে নেয় ক্ষমতা, পদ, সম্মান কিন্তু যদি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া যায়, সেটি কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। মোহাম্মদ আলী খান রাজনীতির মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও, মানুষের মনে তাঁর আসন অটুট ছিল। অন্যায়ের চরম বিস্তার তাঁকে সরানোর পর মগর ইউনিয়নের দৃশ্যপট বদলে গেল। যেখানে একসময় উন্নয়ন, ন্যায়বিচার, এবং মানুষের নিরাপত্তা ছিল, সেখানে জায়গা নিল অব্যবস্থা, দুর্নীতি, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজি, প্রভাবশালীদের বেপরোয়া আচরণ। এমনকি রাতের বেলা অনেকেই ভয়ে ঘর থেকে বের হতো না। মানুষ মুখে মুখে বলত “আমাদের চেয়ারম্যান থাকলে এসব হতো না।”

জনতার নিজস্ব সিদ্ধান্ত

ধীরে ধীরে এই ক্ষোভ মানুষের মধ্যে এক ধরনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি করল যেভাবেই হোক, তাঁকে আবারও নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনতে হবে।২০২২ সালের জেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে মগর ও ভৈরবপাশা ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ একত্র হলো। তারা ঘোষণা করল “আমরা কোনো দলের প্রার্থী চাই না, আমরা চাই আমাদের চেয়ারম্যান।” তাঁরা নিজেরাই তাঁকে জনতার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিলেন। কেউ টাকা দিল, কেউ পোস্টার ছাপাল, কেউ প্রচারণায় দিনরাত ঘুরল কিন্তু সবটাই মানুষের ভালোবাসা থেকে, কোনো রাজনৈতিক দলের চাপ বা লোভ থেকে নয়। মোহাম্মদ আলী খান বিপুল ভোটে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলেন। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক বিজয় ছিল না, এটি ছিল মানুষের ভালোবাসা, আস্থা, আর কৃতজ্ঞতার প্রতীক।

আবারও সেবার পথে

পদে বসার পর আগের মতোই শুরু করলেন মানুষের জন্য কাজ রাস্তা মেরামত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, অসহায়দের জন্য সহায়তা, যুবকদের মাদকমুক্ত রাখতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। মানুষ বলত “চেয়ারম্যান নেই, কিন্তু আমাদের অভিভাবক ফিরে এসেছে।” কিন্তু সুখ দীর্ঘস্থায়ী হলো না, এই প্রত্যাবর্তনের মাঝেই তাঁর জীবনে নেমে এলো এক এমন বেদনা, যা কোনো রাজনৈতিক পরাজয়ের চেয়েও গভীর প্রাণপ্রিয় স্ত্রী সালেহা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। এই মৃত্যু যেন তাঁর জীবন থেকে আলো কেড়ে নিল। তিনি একবার বলেছিলেন “মানুষের ভালোবাসায় আমি আবার রাজনীতিতে ফিরেছি, কিন্তু আমার জীবনের ভালোবাসা আর কখনো ফিরে আসবে না।”

প্রাণপ্রিয় সঙ্গিনী হারানোর শোক

২০২২ সালের এক ম্লান ভোর, মোহাম্মদ আলী খান তখনও জানতেন না, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত দরজায় কড়া নাড়ছে। হাসপাতালের সাদা চাদরে ঢাকা বিছানায় তাঁর জীবনের সঙ্গী, সহযোদ্ধা, জীবনসাথী সালেহা শুয়ে আছেন শ্বাসপ্রশ্বাস ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে। যে নারী কিশোর বয়সে তাঁর ঘরে এসেছিলেন, যিনি রোদ-বৃষ্টি-ঝড় একসাথে পাড়ি দিয়েছেন, তিনিই আজ তাঁকে ছেড়ে চিরতরে চলে যাওয়ার প্রস্তুতিতে। ডাক্তার ধীরে ধীরে এসে বললেন “আমরা চেষ্টা করছি… কিন্তু প্রস্তুত থাকুন।” কয়েক দিন হাসপাতালে থাকার পরে মহান আল্লাহর ডাকে সালেহা পাড়ি জমালেন ওপারে।

একসাথে পার হওয়া পথের স্মৃতি

সেই মুহূর্তে তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠল প্রথম বিয়ের দিন, অপমানের পরও লাজুক হাসিতে তাঁর ঘরে পা রাখা সালেহা। অভাবের সংসারে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত তাঁকে উৎসাহ দেওয়ার সেই দৃঢ় কণ্ঠ “চিন্তা করবেন না, আল্লাহ আমাদের জন্য ভালো কিছু রেখেছেন।” অসুস্থ হলেও রাত জেগে অসহায়দের জন্য ভাত রান্না করা তাঁর মমতাময় হাত। রাজনৈতিক চাপ, মিথ্যা মামলা, অপমানের দিনে সবাই যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তখন একমাত্র তাঁর স্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো সেই চোখ। এই সব স্মৃতি যেন মুহূর্তেই হৃদয়ে ছুরি চালিয়ে গেল।

শেষ জীবনের নীরবতা

দাফনের দিন মগর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ এলেন কারণ এই সালেহার রান্না খায়নি, বা তাঁর সাহায্য নেয়নি, এমন মানুষ বিরল ছিল। কবরের মাটিতে প্রথম মুঠো মাটি ফেলতে গিয়ে তাঁর হাত কেঁপে উঠল। মনে হলো এই মাটির নিচে তাঁর অর্ধেক জীবন চলে যাচ্ছে। এরপর থেকে প্রতিটি সকালই যেন এক অনন্ত শূন্যতা নিয়ে শুরু হয়। প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে তিনি স্ত্রীর কবরের কাছে যান, হাত তুলে দোয়া করেন চোখের জল অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় কবরের পাশে বসে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, নিজের সঙ্গে কথা বলেন রাজনীতি থেকে সরে এসে তিনি এখন একদম সাধারণ জীবন কাটান। প্রতিদিন কবর জিয়ারত, গ্রামে শিশুদের মাথায় হাত রেখে দোয়া, পুরনো সহযোদ্ধাদের সাথে মাঝে মাঝে দেখা, আর দীর্ঘ সময় ধরে স্ত্রীর স্মৃতি রোমন্থন একটি স্বপ্ন, একটি প্রার্থনা তাঁর জীবনের শেষ প্রার্থনা খুব সরল একটি বাংলাদেশ, যেখানে রাজনীতি হবে ভালোবাসার, প্রতিযোগিতা হবে সততার, আর কোনো সালেহা অভাব-অপমানে দিন কাটাবে না। তিনি জানেন, তাঁর জীবনের পথ শেষের দিকে, কিন্তু আজও তিনি প্রতিদিন সেই সঙ্গিনীর জন্য দোয়া করেন, যিনি ছিলেন তাঁর সাফল্যের নীরব নির্মাতা।

মোহাম্মদ আলী খান শতবর্ষে একবার জন্মানো সেই বিরল মানুষ, যার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল মানুষের জন্য, ন্যায়ের জন্য, ভালোবাসার জন্য। প্রায় ৭৪ বছরের দীর্ঘ পথচলায় তিনি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি, কখনো স্বার্থ বা লোভ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁর একমাত্র ধন ছিল মানুষের ভালোবাসা, আর একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল সবার মঙ্গল। আজও যখন গ্রামের মাটিতে শিশুরা খেলায় মেতে ওঠে, চায়ের আড্ডায় মানুষ ন্যায়ের কথা বলে, কিংবা কোনো অসহায় হাত সাহায্যের জন্য বাড়িয়ে আসে সেই মুহূর্তে নিঃশব্দে উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। তিনি কেবল একজন মানুষ নন; তিনি এক জীবন্ত ইতিহাস, এক আলোকবর্তিকা, এক অনন্ত অনুপ্রেরণা।

জীবনের নানা সময়ে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন হয়েও তিনি কখনো কারও ক্ষতি করেননি—এমনকি তাঁর শত্রুরাও তাঁর কাছে সবসময় নিরাপদ ছিল। রাজনীতির তিক্ত বাস্তবতায় যেখানে প্রতিশোধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিত্যসঙ্গী, সেখানে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম—ন্যায়, মানবিকতা ও সহনশীলতার এক অনন্য উদাহরণ। জীবনে বহুবার সুযোগ এসেছিল আরও বড় নেতা হওয়ার, উচ্চ আসনে পৌঁছানোর। কিন্তু নিজের ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে, নিজের মাটি ও শেকড় থেকে দূরে সরে যাওয়া তিনি কখনো মেনে নেননি। তাঁর জন্য ক্ষমতার চেয়ে মূল্যবান ছিল গ্রামের ধুলোমাখা পথ, কৃষকের ঘামভেজা হাসি, আর অসহায় মানুষের কৃতজ্ঞ চোখের দৃষ্টি। প্রচলিত আছে জীবনের সমস্ত আয়, সম্পদ, সামর্থ্য তিনি মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। নিজের জন্য কিছু না রেখে, মানুষের মাঝেই কাটিয়েছেন আজীবন। তাঁর এখনও একটাই প্রার্থনা “আমার শেষ নিশ্বাস যেন এই মাটির মানুষদের মাঝেই হয়।”

পরিশেষে

যতদিন এই বাংলার আকাশের নিচে মানুষ ন্যায়ের স্বপ্ন দেখবে, ততদিন তাঁর জন্য ভালোবাসা ও দোয়ার ধারা অবিরাম বয়ে যাবে। আর সেই ধারায় তিনি থাকবেন অনুভূতিতে চিরকাল। তিনি অসংখ্য স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ অসংখ্য জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সংস্কারক। শিক্ষা, ন্যায় ও মানবসেবার প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অবদান এত গভীর ও বিস্তৃত যে, একটি প্রবন্ধে তার সম্পূর্ণ চিত্র আঁকা সম্ভব নয়। তাই এই অনন্ত জীবনগাথাকে অসমাপ্ত রেখেই সমাপ্তি টানতে হচ্ছে একজন মোহাম্মদ আলী খান, সংগ্রাম, সততা ও ভালোবাসায় গড়া মানুষের রাজা যিনি যতদিন এই মাটিতে ন্যায় ও মানবতার খোঁজে মানুষ বেঁচে থাকবে, ততদিন বেঁচে থাকবেন ভালোবাসা ও দোয়ার অক্ষয় স্রোতে।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!