শহিদুল ইসলাম খোকন
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ০৭:১২ পিএম
বাংলাদেশে অবস্থিত ফিলিপাইন দূতাবাস সেলিব্রিটি শেফ টমি মিয়া, এমবিই-এর সহযোগিতায় গতকাল (০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর গুলশান-২ এর হোটেল অ্যারিস্টোক্র্যাট ইন-এ এক নেটওয়ার্কিং ডিনারের আয়োজন করে। কূটনৈতিক মহল, ব্যবসা ও হসপিটালিটি সেক্টরের অংশীদার এবং ফিলিপাইনের বন্ধুদের উপস্থিতিতে আয়োজিত এই সন্ধ্যা রূপ নেয় কূটনৈতিক রন্ধনশৈলী ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের এক উজ্জ্বল আসরে। স্বাগত বক্তব্যে ফিলিপাইন রাষ্ট্রদূত নীনা পি. কাইংলেট উল্লেখ করেন, খাবার একটি সার্বজনীন ভাষা যা সীমান্ত ও সংস্কৃতির গণ্ডি অতিক্রম করে মানুষকে একত্রিত করে। তিনি বলেন, একসাথে খাবার ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়া গভীর হয়, আর সেটিই হলো সংস্কৃতি বিনিময়ের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ উপায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি কৃষক, খেতমজুর ও জেলেদের মর্যাদা উন্নীত করার আহ্বান জানান, যারা দেশের রন্ধন ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, খাবার শুধু স্বাদ নয়—এটি একটি সংস্কৃতির প্রতিফলন, আর এর পেছনের মানুষের গল্পকেও সম্মানিত করতে হবে।
সন্ধ্যার অন্যতম আকর্ষণ ছিল ফিলিপাইনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার — চিকেন অ্যাডোবো — এর লাইভ রান্নার প্রদর্শনী। দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আর্থার ব্লাস অতিথিদের সামনে রসুন, ভিনেগার ও সয়াসসের সুবাস ছড়িয়ে তৈরি করেন এ ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা পরে পরিবেশন করা হয় স্বাদ গ্রহণের জন্য।
শেফ টমি মিয়া নিজস্ব সৃজনশীলতায় অ্যাডোবোর আধুনিক সংস্করণ—অ্যাডোবো চিকেন টাকো বাইটস—প্রস্তুত করেন, যা অতিথিদের চমকিত করে তোলে। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এই মেলবন্ধন অতিথিদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা পায় এবং “culinary diplomacy”-এর আসল অর্থকেই তুলে ধরে।
ডিনারের মেন্যুতে আরও ছিল বৈচিত্র্যময় এশীয় খাবার: বাংলাদেশের মিনি ফুচকা কাপস, থাই চিকেন সাতায় ললিপপস, জাপানি রেইনবো সুশি কন্স, ভিয়েতনামের মিনি গোই কুয়ন কাপস, শ্রীলঙ্কান ফিশ কাটলেট ক্রোস্টিনি, মালয়েশিয়ান মিনি রুটি কানাই রোলস এবং ইন্দোনেশিয়ার সাতেই লিলিত স্কিউয়ার্স — যা অতিথিদের সামনে এক অনন্য ভোজন উৎসবের আয়োজন করে।
খাবারের পাশাপাশি অতিথিরা উপভোগ করেন বুয়ান নং উইকা (জাতীয় ভাষা মাস) উপলক্ষে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবেশিত অরিজিনাল পিলিপিনো মিউজিক (ওপিএম)। সেখানে পরিবেশিত হয় জনপ্রিয় ফিলিপিনো গান — তালা (তারকা), মিনসাং মিনাহাল আই আকো (একদিন আমাকে ভালোবাসা হয়েছিল), পাংআকো সা’ইও (তোমার প্রতি আমার অঙ্গীকার) এবং সুমায়াও সুমুনোদ (নাচো ও অনুসরণ করো)। সুর ও গানের আবহ পুরো অনুষ্ঠানে এক উষ্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং অতিথিদের ফিলিপাইনের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
এই নেটওয়ার্কিং ডিনার শুধু একটি কূটনৈতিক আয়োজনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি ছিল আসন্ন টেস্ট এশিয়া ফেস্টিভ্যাল ২০২৫-এর (২০–২১ নভেম্বর, সিলেট) পূর্ব আয়োজন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়।
মাতৃভূমির খবর