প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
৬০ বছর বয়সী মোর সিং পেশায় একজন কৃষক। জীবনে কোনোদিন স্কুলে যাননি তিনি। কিন্তু নিজের বাড়িটি গ্রামের স্কুলকে দিয়ে দেওয়ার নিঃস্বার্থ কাজের জন্য তিনি এখন স্থানীয় নায়ক। ভারি বর্ষণে স্কুল ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। তার সাধারণ দুই কক্ষের বাড়িতেই এখন প্রায় ৫০-৬০ শিক্ষার্থী নিয়ে একটি উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু হয়েছে।
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজস্থান রাজ্যের পাহাড়ি গ্রাম পিপলোডির কৃষক মোর সিং স্কুলের জন্য নিজের বাড়ি দান করে অপ্রত্যাশিতভাবেই আলোচনায় উঠে এসেছেন।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে রাজ্য সরকার তার এ মহৎ উদ্যোগের জন্য আর্থিক সহায়তা হিসেবে তাকে ২ লাখ রুপি প্রদান করেছে। রাজ্য আবহাওয়া কেন্দ্র জানিয়েছে, রাজস্থান এ বছর জুলাই মাসে গত ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত দেখেছে— যা মোট ২৮৫ মিলিমিটার। গত ২৫ জুলাই পিপলোডির একটি শ্রেণিকক্ষের ছাদ ধসে পড়ে সাত শিশুর মৃত্যু হয় ও আহত হয় আরও ২১ জন। এরপর বিদ্যালয়টি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
ঘটনার দুই দিন পর মোর সিং ও তার পরিবার বাড়ি ছেড়ে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি একটি অস্থায়ী ঝুপড়িতে চলে যান। সেটি তাদের বাড়ির কয়েক মিটার দূরে।
এটি ‘আদর্শ বাসস্থান নয়’ স্বীকার করে শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য তিনি স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করতেও প্রস্তুত বলে জানান সিং।
তিনি বিবিসিকে বলেন, আমি যদি দ্রুত এই সিদ্ধান্ত না নিতাম, অনেক শিশু স্কুল ছেড়ে দিত। পাশের গ্রামে একটি স্কুল আছে, কিন্তু সেখানে পৌঁছতে পাহাড়ি পথে দুই কিলোমিটার হাঁটতে হয়। বড়রা হয়তো পারত, কিন্তু ছোটরা নয়।
তিন বছর ধরে বাড়িটি তৈরি করেছিলেন তিনি, আর পরিবারের সঙ্গে সেখানে থাকছিলেন গত ১৩ বছর ধরে।
২৫ জুলাইয়ের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রাজস্থানের নাজুক স্কুল অবকাঠামোর চিত্র সামনে নিয়ে আসে।
সাম্প্রতিক এক সরকারি জরিপ বলছে, রাজ্যের অন্তত পাঁচ হাজার ৬০০ স্কুল ভগ্নপ্রায় অবস্থায় আছে।
মোর সিং তার বাড়ি স্কুলে পরিণত করার পর রাজ্য সরকার পিপলোডিকে একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় ‘আদর্শ গ্রাম’ ঘোষণা করেছে। স্থানীয় কর্মকর্তা অজয় সিং রাঠোর বিবিসিকে জানান, এ ঘোষণার ফলে নতুন স্কুল, খেলার মাঠ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও অন্যান্য সুবিধার জন্য অতিরিক্ত তহবিল আসবে। তবে তিনি সতর্ক করেন, নতুন স্কুল নির্মাণে আরো অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে।
পিপলোডি গ্রামে প্রায় ৯০টি পরিবার বাস করে, যাদের বেশিরভাগই আদিবাসী। মোর সিং বলেন, আমরা দরিদ্র জনগোষ্ঠী, কোনো উন্নয়নই প্রায় দেখিনি। তাই এই শিশুদের স্কুলে যাওয়া, শিক্ষা গ্রহণ করা ও নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তার এ মহৎ কাজ তাকে স্থানীয় খ্যাতিমান ব্যাক্তিতে পরিণত করেছে। রাম দয়ালের মেয়ে ২৫ জুলাই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল ও এখন মোর সিংয়ের বাড়িতেই পড়াশোনা করছে।
তিনি বলেন, তিনি পুরো গ্রামের নায়ক। আরেক বাসিন্দা রাম কুমার বলেন, তিনি যদি নিজের বাড়ি স্কুলের জন্য না দিতেন, অনেক শিশু স্কুল ছেড়ে দিত। আমরা সবাই তার এ উদ্যোগের প্রশংসা করি।