শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

ভবিষ্যতের চাকরির বাজার, অটোমেশন ও এআই যুগে শিক্ষার্থীদের করণীয়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০১:১৭ পিএম

ভবিষ্যতের চাকরির বাজার, অটোমেশন ও এআই যুগে শিক্ষার্থীদের করণীয়

ছবি: মাতৃভূমির খবর ডিজিটাল

বিশ্বজুড়ে চাকরির বাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। প্রযুক্তি, বিশেষ করে অটোমেশনকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) আজ বহু শিল্পখাতের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। যে কাজগুলো আগে মানুষ করত, এখন তার অনেকটাই করছে মেশিন, রোবট বা বুদ্ধিমান সফটওয়্যার। ব্যাংকিং থেকে শুরু করে চিকিৎসা, পরিবহন থেকে সাংবাদিকতা—সব জায়গায়ই এ পরিবর্তনের প্রভাব দৃশ্যমান। প্রশ্ন হলো, এই অটোমেশন ও এআই যুগে আমাদের শিক্ষার্থীদের করণীয় কী?

অটোমেশন ও এআই কীভাবে চাকরির বাজার বদলাচ্ছে

  • পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ মেশিনের হাতে: ডাটা এন্ট্রি, কাস্টমার সাপোর্ট, অ্যাকাউন্টিংয়ের মতো কাজগুলো দ্রুত অটোমেটেড হয়ে যাচ্ছে।
  • উৎপাদনশীল শিল্পে রোবটের ব্যবহার: গার্মেন্টস, গাড়ি তৈরি, এমনকি কৃষিতেও রোবটের ব্যবহার বাড়ছে।
  • নতুন চাকরির সৃষ্টি: যদিও কিছু কাজ হারিয়ে যাচ্ছে, তবে AI ও প্রযুক্তি-নির্ভর নতুন খাত যেমন ডাটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং, সাইবার সিকিউরিটি, রোবোটিক্সে প্রচুর নতুন চাকরি তৈরি হচ্ছে।
  • দক্ষতার ধরণ বদলাচ্ছে: কেবল ডিগ্রি নয়, এখন প্রয়োজন সমাধান দক্ষতা, সৃজনশীলতা, প্রযুক্তি ব্যবহার ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের প্রায় ৮ কোটি চাকরি হারিয়ে যাবে, তবে একই সময়ে প্রায় ৯ কোটি নতুন চাকরি তৈরি হবে, যার বেশিরভাগই প্রযুক্তি-নির্ভর। অর্থাৎ কাজ হারাবে, কিন্তু সুযোগও তৈরি হবে—যারা প্রস্তুত তাদের জন্য।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত গার্মেন্টস, কৃষি ও প্রবাসী আয়ে নির্ভরশীল। ইতিমধ্যেই গার্মেন্টস শিল্পে আধুনিক মেশিনের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে অনেক নিম্নদক্ষ কাজ মেশিন নিয়ে নেবে।
তবে একইসঙ্গে বাংলাদেশের তরুণরা ফ্রিল্যান্সিং, আইটি সার্ভিস, ডিজিটাল মার্কেটিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে নতুন বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করছে। সঠিক প্রস্তুতি নিলে এআই যুগে বাংলাদেশের তরুণরাই হতে পারে মূল চালিকাশক্তি।

শিক্ষার্থীদের করণীয়

১. ডিজিটাল স্কিলে দক্ষ হওয়া

  • প্রোগ্রামিং, ডাটা অ্যানালাইসিস, মেশিন লার্নিং, এআই টুলস ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
  • Coursera, Udemy, edX-এর মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিয়মিত শেখা যেতে পারে।

২. সৃজনশীলতা ও সমালোচনামূলক চিন্তায় জোর দেওয়া

  • মেশিন নিয়মিত কাজ করতে পারে, কিন্তু নতুন চিন্তা, উদ্ভাবন ও সমালোচনামূলক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা মানুষেরই।

৩. ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়ন

  • ইংরেজি, চাইনিজ বা আরবির মতো আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষতা থাকলে গ্লোবাল চাকরির বাজারে সুযোগ পাওয়া সহজ হয়।

৪. লাইফ-লং লার্নিং মানসিকতা গড়ে তোলা

  • একবার ডিগ্রি নিলেই চলবে না; বরং নিয়মিত নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

৫. ইন্টার্নশিপ ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত হওয়া

  • কর্মক্ষেত্রের বাস্তব অভিজ্ঞতা, টিমওয়ার্ক, লিডারশিপ—এসব গুণাবলী ভবিষ্যতের চাকরির জন্য অপরিহার্য।

৬. উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা

  • শুধু চাকরির জন্য নয়, বরং নতুন ব্যবসা বা উদ্যোগ গড়ার জন্যও প্রস্তুতি নিতে হবে। এআই ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য অসীম সুযোগ এনে দিচ্ছে।

অটোমেশন ও এআই যুগ ভয় পাওয়ার বিষয় নয়, বরং নতুন সম্ভাবনার দ্বার। যারা প্রযুক্তিকে শিখবে, কাজে লাগাবে এবং নিজেদের দক্ষ করে তুলবে, তাদের জন্য চাকরির বাজার আরও বড় হয়ে উঠবে।

শিক্ষার্থীদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবেযাতে তারা শুধু চাকরিপ্রার্থী নয়, বরং ভবিষ্যতের চাকরি-স্রষ্টা হতে পারে।

 

মাতৃভূমির খবর

Link copied!