প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১১:৪১ এএম
শিক্ষা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো শিক্ষক। কারণ শিক্ষকের হাত ধরেই একটি প্রজন্মের জ্ঞান, চরিত্র ও ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষক সংকট ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ঘাটতি।
বর্তমানে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অনেক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে একসঙ্গে দুই থেকে তিনটি শ্রেণি পড়াতে হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন সঠিকভাবে পাঠ গ্রহণ করতে পারছে না, তেমনি শিক্ষকও মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও একই অবস্থা। বিশেষ করে বিজ্ঞান, ইংরেজি ও গণিতের মতো বিষয়ে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সংকট প্রকট।
শিক্ষকের সংখ্যার পাশাপাশি বড় সমস্যা হলো মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের অভাব। অনেক শিক্ষক নিয়োগ পেলেও তারা আধুনিক শিক্ষণপদ্ধতি, ডিজিটাল টুলস বা সৃজনশীল মূল্যায়ন সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখেন না। নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২৩ চালুর পর এই সংকট আরও স্পষ্ট হয়েছে। প্রকল্পভিত্তিক কাজ ও জীবনমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, তার অনেকটাই মাঠপর্যায়ে পৌঁছেনি।
অন্যদিকে, গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষক সংকট আরও গুরুতর। মেধাবী শিক্ষকেরা ভালো সুযোগের খোঁজে শহরমুখী হন, ফলে গ্রামের শিশুরা বঞ্চিত হয় মানসম্মত শিক্ষার আলো থেকে। এতে শহর-গ্রামের বৈষম্যও আরও বেড়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষক সংকট দূর করতে হলে প্রথমত দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। একইসঙ্গে প্রশিক্ষণকে নিয়মিত ও হালনাগাদ করতে হবে, যাতে শিক্ষকরা যুগোপযোগী পদ্ধতিতে পাঠদান করতে পারেন। শুধু প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নয়, সারাজীবন ধরে চলমান প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়া চালু করা জরুরি।
তাছাড়া, শিক্ষকদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত প্রয়োজন। বর্তমানে অনেক শিক্ষক কম বেতনে কাজ করেন, ফলে তারা পেশার প্রতি পূর্ণ নিষ্ঠা দেখাতে পারেন না। মর্যাদা ও প্রণোদনা বাড়ানো গেলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসতে উৎসাহিত হবেন।
দিনের শেষে শিক্ষা ব্যবস্থার মান নির্ভর করে শিক্ষকের মানের ওপর। শিক্ষক সংকট ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি দূর না করা গেলে জাতীয় শিক্ষার লক্ষ্য পূরণ অসম্ভব। তাই এখনই প্রয়োজন শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।