শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বনাম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মানগত বৈষম্য কোথায়?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১১:২৬ এএম

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বনাম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মানগত বৈষম্য কোথায়?

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার দুটি প্রধান ধারা হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজসমূহ এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ। উভয় ক্ষেত্রেই প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরেই এই দুই ধারার মধ্যে মানগত বৈষম্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে—একই দেশের শিক্ষার্থীরা কেন এত ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করছে?

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ তুলনামূলকভাবে প্রাণবন্ত। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত তুলনামূলক কম হওয়ায় পাঠদান হয় বেশি মনোযোগী। গবেষণা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ক্লাব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আধুনিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি সাংগঠনিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সুযোগও তৈরি করে।

অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রায় দুই হাজারের বেশি কলেজে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে এখানকার প্রধান সংকট হলো অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও শিক্ষক সংকট। অনেক কলেজে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি নেই। শিক্ষার্থী সংখ্যা বিপুল হলেও শিক্ষক অনুপাত নগণ্য। এর ফলে মানসম্মত পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না।

এছাড়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর পাঠ্যক্রম ও পরীক্ষার সময়সূচি প্রায়ই বিলম্বিত হয়। ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা, সেশনজট এবং প্রশাসনিক জটিলতা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর বিপরীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তুলনামূলক সুসংগঠিত পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ প্রক্রিয়া দেখা যায়।

তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সমস্যা নেই তা নয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সেশনজট, আবাসন সংকট এবং কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কিন্তু তারপরও একাডেমিক পরিবেশ, গবেষণার সুযোগ এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও মানোন্নয়নে বিনিয়োগ ও মনোযোগ অত্যন্ত সীমিত। এর ফলে এই ধারার শিক্ষার্থীরা শ্রমবাজারে পিছিয়ে পড়ছে। অপরদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক বেশি সুযোগ পাওয়ায় কর্মক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

এই বৈষম্য দূর করতে হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে প্রশাসনিক দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।

অন্যথায় একদিকে সীমিত সুবিধাপ্রাপ্ত লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী, অন্যদিকে সুবিধাপ্রাপ্ত তুলনামূলক কম সংখ্যক শিক্ষার্থী—এই বৈষম্য দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করবে।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!