শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

বাংলা, ইংরেজি ও মাদরাসা, তিন ধারার শিক্ষার্থীদের একই পথে আনা সম্ভব কি?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১১:১২ এএম

বাংলা, ইংরেজি ও মাদরাসা, তিন ধারার শিক্ষার্থীদের একই পথে আনা সম্ভব কি?

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই বহুমাত্রিক ধারা বিদ্যমান—বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম এবং মাদরাসা শিক্ষা। প্রতিটি ধারারই রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য, সুযোগ এবং সীমাবদ্ধতা। কিন্তু এই বহুধাবিভক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয় জীবনে বৈষম্য সৃষ্টি করছে—এমন অভিযোগ বহুদিনের। তাই প্রশ্ন উঠছে, দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা কতটা সম্ভব এবং এর প্রয়োজনীয়তা কতটা জরুরি।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভিন্ন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভাজন তৈরি হচ্ছে। বাংলা মাধ্যমে পড়া শিক্ষার্থী যেমন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি পেলেও অনেক সময় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে, তেমনি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা অনেকটা এলিট শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অন্যদিকে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা মূলধারার কর্মসংস্থানে প্রবেশ করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়।

সরকার ইতোমধ্যেই নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২৩ বাস্তবায়ন শুরু করেছে, যেখানে কিছুটা হলেও একীভূত পাঠ্যক্রমের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। যেমন প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি, বিজ্ঞান ও আইসিটি শেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; একইসঙ্গে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা অন্তত একটি সাধারণ কাঠামোর ভেতরে আসছে।

তবে পুরোপুরি একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পথে অনেক বাধা রয়েছে। প্রথমত, অবকাঠামোগত বৈষম্য। শহরের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর সাথে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলনা করলে ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও মানোন্নয়নের অভাব। একটি সাধারণ পাঠ্যক্রম চালু হলেও সব প্রতিষ্ঠানে দক্ষ শিক্ষক নিশ্চিত না হলে শিক্ষার্থীরা সমান সুযোগ পাবে না।

এছাড়া রয়েছে সামাজিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা। অনেক অভিভাবক এখনো ইংরেজি মাধ্যমকে "ভালো" আর মাদরাসাকে "ধর্মীয়" হিসেবে আলাদা করে ভাবেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

তবুও ইতিবাচক দিকও কম নয়। একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা হলে শিক্ষার্থীরা একই পাঠ্যভিত্তি থেকে বেড়ে উঠবে, যা সমাজে বিভাজন কমাবে। একইসঙ্গে শিক্ষার মান নির্ধারণে একটি জাতীয় মানদণ্ড তৈরি হবে। মাদরাসা শিক্ষার্থীরাও আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় যুক্ত হতে পারবে, আবার ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরাও দেশীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে জানবে।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ধাপে ধাপে সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে কোর সাবজেক্টগুলোতে একীভূত পাঠ্যক্রম চালু করা যেতে পারে। যেমন: বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, আইসিটি এবং নৈতিক শিক্ষা। পরবর্তীতে উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ধীরে ধীরে মানসম্মত পাঠ্যক্রম প্রবর্তন করা যাবে।

শেষ পর্যন্ত, একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, বরং দেশের সামাজিক ঐক্য, জাতীয় উন্নয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের জন্য অপরিহার্য। তবে এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, পর্যাপ্ত বাজেট, প্রশিক্ষিত শিক্ষক এবং সামাজিক সচেতনতা।

প্রশ্ন একটাই—আমরা কি প্রস্তুত সেই বড় পদক্ষেপ নিতে?

মাতৃভূমির খবর

Link copied!