জিয়ন রহমান
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০৯:৫০ এএম
পড়াশোনা হলো নিয়মিত অভ্যাস ও ইতিবাচক মনোভাবের এক সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া। সময়ের সঠিক ব্যবহার, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও আত্মবিশ্বাস শিক্ষার্থীদের সফলতার পথে এগিয়ে নেবে।
শিক্ষাজীবন প্রত্যেকের জন্য এক দীর্ঘ ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ যাত্রা। অনেকে মনে করে ভালো রেজাল্ট মানেই ঘন্টার পর ঘন্টা বইয়ে ডুবে থাকা। কিন্তু বাস্তবতা হলো—অধ্যয়ন শুধু সময় নয়, কৌশল, পরিকল্পনা আর আত্ম-অনুপ্রেরণার ওপর নির্ভরশীল। যে শিক্ষার্থী নিজের পড়াশোনাকে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে পারে, সে-ই এগিয়ে যায়। আজকের কলামে আলোচনা করব কয়েকটি কার্যকর অধ্যয়ন টিপস, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাকে আনন্দময় ও ফলপ্রসূ করে তুলতে পারে।
প্রথমেই আসি সময় ব্যবস্থাপনার কথায়। “সময়কে যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তারাই জীবনে সফল হয়”—এই কথাটি প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে রাখা উচিত। দিনের ২৪ ঘণ্টা সবার জন্য সমান, পার্থক্য কেবল ব্যবহারে। পড়াশোনার জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি তৈরি করুন। কোন বিষয় কখন পড়বেন, কতক্ষণ পড়বেন, কখন বিশ্রাম নেবেন—এসব লিখে রাখলে পড়াশোনার চাপ কমবে। উদাহরণস্বরূপ, সকালে নতুন বিষয় মুখস্থ করার চেষ্টা করুন, আর রাতে পুনরাবৃত্তি করুন। এতে মনে থাকবে দীর্ঘদিন।
অনেক সময় পুরো বই বা সিলেবাস দেখে ভীত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এই ভয় কাটানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কাজকে ভাগ করা। বড় লক্ষ্যকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করলে তা সহজ হয়ে যায়। যেমন—“আজ শুধু গণিতের একটি অধ্যায় শেষ করব” বা “আজ ইংরেজির দুইটি নতুন শব্দ শিখব”—এভাবে ধাপে ধাপে এগোলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বজায় থাকে। ছোট ছোট সাফল্য মনকে আনন্দিত করে এবং নতুন করে উদ্যম জাগায়।
শুধু বই পড়ে গেলে আসলে শেখা সম্পূর্ণ হয় না। শেখাকে সক্রিয় করতে হবে। এজন্য কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে—
এভাবে সক্রিয়ভাবে শেখার চেষ্টা করলে শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, জীবনের জন্যও জ্ঞান কাজে লাগবে।
অনেকে মনে করে সারারাত জেগে পড়লেই ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু এ ধারণা ভুল। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করে না। সুষম খাদ্য, হালকা ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান—এসব শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। সুস্থ শরীর মানেই সতেজ মন, আর সতেজ মনই অধ্যয়নের প্রধান সহায়ক।
ডিজিটাল যুগের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জন্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে পারে। অনলাইনে অসংখ্য লেকচার, ভিডিও, কুইজ অ্যাপ রয়েছে। এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করলে পড়াশোনায় অনেক সহায়তা পাওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মোবাইল বা ইন্টারনেট সময় নষ্টের কারণ না হয়ে যায়। তাই প্রযুক্তিকে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করুন, বিভ্রান্তি হিসেবে নয়।
পরীক্ষার সময় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু মনে রাখতে হবে—ব্যর্থতা হলো সাফল্যের সিঁড়ি। একবার খারাপ করলে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোতে হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি চেষ্টা ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সফল মানুষরা কখনোই মাঝপথে হাল ছাড়েন না।
পড়াশোনা কেবল পরীক্ষায় ভালো করার জন্য নয়, বরং সারা জীবনের জ্ঞান অর্জনের জন্য। সঠিক পরিকল্পনা, ধৈর্য ও নিয়মিত প্রচেষ্টা একজন শিক্ষার্থীকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। তাই আজ থেকেই শুরু করুন—সময় ব্যবস্থাপনা, ছোট লক্ষ্য, সক্রিয় শেখা, স্বাস্থ্য রক্ষা ও আত্ম-অনুপ্রেরণার চর্চা।
লেখক পরিচিতি:
জিয়ন রহমান একজন অভিজ্ঞ শিক্ষিকা ও শিক্ষা-গবেষক। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে পড়াচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন, সময় ব্যবস্থাপনা এবং শেখার কৌশল নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।
মাতৃভূমির খবর