প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ১২:৫০ পিএম
শিক্ষা মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার। কিন্তু আজকের যুগে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখা। মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গেমস বা নানা ধরণের বিভ্রান্তি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করছে। অথচ মনোযোগ ছাড়া জ্ঞান অর্জন অসম্ভব।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
“আর বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞান বৃদ্ধি করো।” (সূরা তোয়াহা: ১১৪)
অর্থাৎ, জ্ঞান চাওয়ার পাশাপাশি একাগ্রতা ও মনোযোগ আল্লাহর কাছে দোয়া করারও একটি শিক্ষা রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।” (বুখারি, মুসলিম)
এখানে দ্বীনের জ্ঞানের পাশাপাশি আমরা বুঝতে পারি—জ্ঞান অর্জনের জন্য আল্লাহর নৈকট্য, আন্তরিকতা ও মনোযোগ অপরিহার্য।
বিজ্ঞান ও মনস্তত্ত্বের আলোকে
বিজ্ঞান বলে, মানুষের মস্তিষ্ক একসাথে অনেক কিছুতে মনোযোগ দিতে পারে না। “Multitasking” আসলে মনোযোগকে দুর্বল করে। পড়াশোনার সময় মনোযোগ বাড়ানোর জন্য দরকার:
১। পোমোডোরো টেকনিক: ২৫ মিনিট পড়া, ৫ মিনিট বিরতি।
২। ডিজিটাল ডিটক্স: পড়াশোনার সময় মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া দূরে রাখা।
৩। Active Recall ও Spaced Repetition: মুখস্থ না করে নিজেকে প্রশ্ন করা, এবং নির্দিষ্ট বিরতিতে পড়া পুনরাবৃত্তি করা।
৪। নিয়মিত ঘুম ও পানি পান: পর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণক্ষমতা বাড়ায়।
বাস্তব উদাহরণ
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) অল্প বয়সেই বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি বলতেন, “একাগ্রতা আর পবিত্র জীবনযাপনই হলো জ্ঞানের আলো।”
আবার আধুনিক বিজ্ঞানী আইনস্টাইনও বলেছিলেন, “It’s not that I’m so smart, it’s just that I stay with problems longer.” অর্থাৎ, স্থিরতা ও একাগ্রতাই সফলতার চাবিকাঠি।
করণীয় – শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ কিছু টিপস
১। পড়াশোনার আগে সংক্ষিপ্ত দোয়া করা।
২। শান্ত ও আলো-হাওয়াযুক্ত জায়গায় বসে পড়া।
৩। বড় কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা।
৪। প্রতিদিনের লক্ষ্য লিখে রাখা এবং তা পূরণ হলে নিজেকে উৎসাহ দেওয়া।
৫। শরীরচর্চা ও সঠিক খাবার খাওয়া—যা মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে।
মনোযোগ কোনো জন্মগত ক্ষমতা নয়, বরং এটি অভ্যাসের ফল। ইসলামের শিক্ষা, বিজ্ঞানের কৌশল এবং দৃঢ় মনোবল—এই তিনের সমন্বয় ঘটাতে পারলেই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম হবে। জ্ঞান অর্জন তখন হয়ে উঠবে আনন্দময় এবং সফলতার সিঁড়ি বেয়ে তারা পৌঁছাতে পারবে জীবনের কাঙ্ক্ষিত শিখরে।