শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫
যা যা লাগবে আপনার

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: স্বপ্ন থেকে বাস্তবের পথে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: স্বপ্ন থেকে বাস্তবের পথে

বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন—বিদেশে পড়াশোনা। কেউ কল্পনা করে বরফঢাকা ইউরোপীয় ক্যাম্পাসে বসে লেকচার শুনবে, কেউ আবার চায় আমেরিকার বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে রাত জেগে পড়াশোনা করতে। কিন্তু স্বপ্নটা যতই উজ্জ্বল হোক, সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে মাঝপথেই থেমে যায় অনেকের যাত্রা।

মফস্বলের এক স্কুল থেকে পাশ করা এক শিক্ষার্থী হয়তো ভাবে, “আমিও কি বিদেশে পড়তে যেতে পারব?”—হ্যাঁ, পারবে। তবে এজন্য দরকার সঠিক প্রস্তুতি, সঠিক কাগজপত্র এবং ধৈর্য। বিদেশে পড়াশোনার পথ আসলে শুধু ভিসা পাওয়া বা বিমানযাত্রায় থেমে নেই—এটি শুরু হয় অনেক আগেই, যখন আপনি প্রথমবার গুগলে খুঁজে দেখেন “বিদেশে পড়াশোনার নিয়ম”।

দেশ ও বিষয় নির্বাচন

শুরুটা হয় একটি প্রশ্ন থেকে—কোথায় পড়ব? আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, মালয়েশিয়া—শত শত বিকল্প। কেউ বৃত্তি নিয়ে যায়, কেউ নিজ খরচে। কিন্তু শুধু ‘বিদেশ’ বললেই হবে না, দেখতে হবে শিক্ষার মান। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো আপনাকে কম টাকায় পড়াশোনার সুযোগ দেবে, আবার অস্ট্রেলিয়া বা কানাডায় পড়তে গেলে ভালো স্কলারশিপ না পেলে খরচ বহন করা কঠিন হতে পারে।

বিষয় নির্বাচনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো আপনি চান ইঞ্জিনিয়ার হতে, কিন্তু বিদেশে পড়তে গিয়ে দেখলেন অন্য কোনো চাহিদাসম্পন্ন বিষয় আপনাকে আরও ভালো সুযোগ এনে দিতে পারে। তাই বিষয় বেছে নেওয়ার সময় কেবল স্বপ্ন নয়, ভবিষ্যতের চাকরির বাজার ও চাহিদাকেও বিবেচনায় আনতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন

তারপর আসে বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেওয়া। আপনি কি এমন একটি জায়গায় পড়তে চান যেখানে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য পরিবেশ বন্ধুত্বপূর্ণ? নাকি এমন কোনো শহরে থাকতে চান যেখানে জীবনযাত্রার খরচ কম? র‌্যাংকিং, টিউশন ফি, হোস্টেল সুবিধা, বৃত্তির সুযোগ—সব দিক খতিয়ে দেখা জরুরি।

শর্ত ও প্রস্তুতি

বিদেশে পড়াশোনার অন্যতম বড় শর্ত হলো ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা। ইউরোপের অনেক দেশে শিথিলতা থাকলেও কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে আইইএলটিএস ছাড়া ভর্তি প্রায় অসম্ভব। অনেক শিক্ষার্থী এখানে হোঁচট খায়। তাই শুরুতেই ভাষা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

খরচ ও বৃত্তি

এখানে আসে সবচেয়ে বাস্তব প্রশ্ন—খরচ। কেউ স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যায়, কেউ আবার পারিবারিক সামর্থ্যে। টিউশন ফি, আবাসন, খাবার, বই, ইনস্যুরেন্স—সব মিলিয়ে খরচ কত দাঁড়াবে, আগে থেকেই জেনে নিতে হবে। স্কলারশিপ পেলে সেটি কতদিনের, নবায়নযোগ্য কি না, কোন শর্তে নবায়ন হবে—এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

একজন শিক্ষার্থী বলছিলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম স্কলারশিপ পেলেই সব খরচ চলবে। কিন্তু পরে বুঝলাম, জীবনযাত্রার খরচও বিশাল বিষয়।” তাই বিদেশে যাওয়ার আগে বাস্তব হিসাব না করলে হঠাৎ করেই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

আর্থিক সামর্থ্য ও ভিসা

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য ব্যাংকে টাকা দেখাতে হয়। অনেক সময় মা-বাবার ব্যাংক হিসাবেই সেই প্রমাণ দিতে হয়। এটিকে বলা হয় স্পন্সর বা গ্যারান্টর। অনেক পরিবার এ পর্যায়ে এসে সমস্যায় পড়ে। তাই আগে থেকেই অর্থনৈতিক সামর্থ্যের প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র অবশ্যই লাগবে—

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির অনুমতি (কনফারমেশন অব এনরোলমেন্ট)

  • স্বাস্থ্য বিমার প্রমাণ

  • জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মসনদ

  • পাসপোর্ট (বর্তমান ও আগের ব্যবহৃত পৃষ্ঠা)

  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও কর্ম-অভিজ্ঞতার প্রমাণ

  • স্টেটমেন্ট অব পারপাস (কেন ওই কোর্সে পড়তে চান তার ব্যাখ্যা)

  • আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র (স্পন্সর/গ্যারান্টর)

  • স্পন্সরের আয়ের উৎসের কাগজপত্র

  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন)

  • বিবাহিত হলে বিয়ে ও সন্তানের সম্পর্কিত কাগজপত্র

  • স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট

শেষ কথা

বিদেশে উচ্চশিক্ষা শুধু একটি ডিগ্রি নয়, এটি জীবনের বড় অভিজ্ঞতা। হয়তো দূর দেশের আকাশে একদিন আপনি দাঁড়িয়ে ভাববেন—“আমি পেরেছি।” কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে চাইলে স্বপ্নের পাশাপাশি চাই সঠিক পরিকল্পনা, প্রস্তুতি আর ধৈর্য।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!