শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

ছাত্রশিবির, ‘গুপ্ত রাজনীতি’ ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০২:১৯ পিএম

ছাত্রশিবির, ‘গুপ্ত রাজনীতি’ ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ছাত্ররাজনীতি ঘিরে। বিশেষ করে আসন্ন ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলোতে বাড়ছে বিতর্ক, আশঙ্কা ও বিক্ষোভ। সূর্যসেন হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান মনে করেন, ছাত্ররাজনীতি ফিরলে আবারও ফিরতে পারে ‘গেস্টরুম’ সংস্কৃতি। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, “এক বড় ভাই প্রথমে আমাকে আলাদা রুমে নেয়। তারপর আমার বাম হাত চেপে ধরে বারবার কান ও গালে থাপ্পর দিতে থাকে। এত জোরে চড় মারছিল যে আমার কান থেকে রক্ত বের হয়ে আসে।” ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অনিয়মিত থাকার কারণে ২০২৪ সালের শুরুতে এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি।

তবে গত বছরের আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর এই সংস্কৃতি আপাতত বন্ধ হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের একাংশ আশঙ্কা করছেন, হলে রাজনীতি ফিরলে আবারও শুরু হতে পারে গণরুম ও গেস্টরুমের ভয়ঙ্কর সংস্কৃতি। অন্যদিকে ছাত্রদল, ছাত্রইউনিয়নসহ একাধিক সংগঠন হলে প্রকাশ্য রাজনীতির পক্ষে জোর দিচ্ছে। তাদের যুক্তি, হলে সংগঠন না থাকলে ডাকসু নির্বাচনে কাজ করা সম্ভব নয়। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী বলেন, “আমরা তো কোনও গুপ্ত সংগঠন নই। প্রকাশ্য সাংগঠনিক কাঠামো দরকার, তাই হল কমিটি দিয়েছি।”

প্রথমে জগন্নাথ হলে কমিটি দিয়ে আলোচনায় আসে ছাত্রইউনিয়ন। সংগঠনটির সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, “হলের সংকট মোকাবেলায় কমিটি অপরিহার্য। বাইরে থেকে প্রশাসনিক কমিটির লোকেরা এসে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।”
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যদি হলে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকে, তবে গোপন রাজনীতি কি আরও সক্রিয় হবে? বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা মনে করেন, গোপন রাজনীতি ঠেকাতে হলে প্রশাসনকেই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, “সবাই বলছে শিবির গোপন রাজনীতি করছে। কিন্তু প্রশাসনের অবস্থান কী? প্রশাসন কঠোর না হলে এই প্রবণতা রোধ করা সম্ভব নয়।”

এমন প্রেক্ষাপটে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অবস্থান অনেকটা ‘অপেক্ষার’। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, “আমাদের কার্যক্রম কারও অজানা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আমাদের টিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করেছে, সবাই আমাদের চেনে।”

অন্যদিকে অভ্যুত্থানের নেতাদের নতুন সংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)’ ক্যাম্পাসে রাজনীতির পক্ষে হলেও হলে রাজনীতি না করার পক্ষপাতি। আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, “হলে কমিটি ফিরলে আবার শিক্ষার্থীদের জোর করে প্রোগ্রামে নেওয়া হবে। আমরা চাই রাজনীতি ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ থাকুক।”

সব মিলিয়ে ডাকসু নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতির অঙ্গনে তৈরি হয়েছে জটিল সমীকরণ। প্রকাশ্য রাজনীতি বনাম গুপ্ত রাজনীতি, হলে রাজনীতি বনাম ক্যাম্পাস রাজনীতি—এসব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে টিএসসি থেকে শুরু করে আবাসিক হলের করিডর জুড়ে।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!