শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

সফট স্কিল বনাম হার্ড স্কিল, চাকরিতে নিয়োগকর্তারা কী চান?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০১:২৫ পিএম

সফট স্কিল বনাম হার্ড স্কিল, চাকরিতে নিয়োগকর্তারা কী চান?

ছবি: মাতৃভূমির খবর ডিজিটাল

বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে শুধু সার্টিফিকেট বা বইয়ের জ্ঞান নিয়োগ পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বরং নিয়োগকর্তারা খুঁজে থাকেন এমন কর্মী, যারা একদিকে প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ (Hard Skills), আবার অন্যদিকে মানবিক ও আচরণগত গুণাবলীতে সমৃদ্ধ (Soft Skills)। এই দুই দক্ষতার সমন্বয়ই একজন প্রার্থীকে করে তোলে পরিপূর্ণ।

হার্ড স্কিল কী?

হার্ড স্কিল হলো সেই প্রযুক্তিগত বা একাডেমিক দক্ষতা যা পরিমাপযোগ্য এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন করা যায়।

  • কম্পিউটার প্রোগ্রামিং
  • অ্যাকাউন্টিং বা ফাইন্যান্স
  • গ্রাফিক ডিজাইন
  • ডাটা অ্যানালাইসিস
  • বিদেশি ভাষায় দক্ষতা

 উদাহরণস্বরূপ, একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের জন্য প্রোগ্রামিং ভাষা শেখা হার্ড স্কিল।

সফট স্কিল কী?

সফট স্কিল হলো ব্যক্তির আচরণ, মনোভাব, যোগাযোগ এবং দলগতভাবে কাজ করার ক্ষমতা—যা সরাসরি মাপা যায় না, তবে কর্মক্ষেত্রে অপরিহার্য।

  • যোগাযোগ দক্ষতা (Communication)
  • সময় ব্যবস্থাপনা
  • টিমওয়ার্ক
  • নেতৃত্বের গুণ
  • সমস্যার সমাধান করার দক্ষতা
  • মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা (Adaptability)

উদাহরণস্বরূপ, একজন ইঞ্জিনিয়ার ভালো প্রোগ্রামার হলেও যদি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন, তবে তার সাফল্য সীমিত হয়ে যায়।

নিয়োগকর্তারা কী চান?

গবেষণা বলছে—

  • চাকরির প্রথম ধাপে নিয়োগকর্তারা হার্ড স্কিল দেখে, কারণ সেটি নির্ধারণ করে প্রার্থী কাজটি করতে পারবেন কিনা।
  • কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সফলতার জন্য সফট স্কিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

একটি সমীক্ষা অনুযায়ী:

  • ৮৫% নিয়োগকর্তা মনে করেন সফট স্কিলের ঘাটতি কর্মীদের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।
  • মাত্র ১৫% ক্ষেত্রে হার্ড স্কিলের অভাব চাকরির ব্যর্থতা ঘটায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে অনেক তরুণের ডিগ্রি ও টেকনিক্যাল স্কিল থাকলেও কর্মক্ষেত্রে সফট স্কিলের ঘাটতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

  • বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সফট স্কিল উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত কোর্স বা প্রশিক্ষণ নেই।
  • অনেক শিক্ষার্থী শুধু ফলাফলের দিকে মনোযোগ দেয়, কিন্তু দলগত কাজ, নেতৃত্ব বা যোগাযোগ দক্ষতা গড়ে তোলে না।
  • এর ফলে অনেক সময় যোগ্য প্রার্থী হয়েও সাক্ষাৎকার বা বাস্তব কাজে পিছিয়ে পড়ে।

শিক্ষার্থীদের করণীয়

১. দুই ধরনের স্কিলকে সমান গুরুত্ব দেওয়া

  • হার্ড স্কিল শেখার পাশাপাশি যোগাযোগ দক্ষতা, টিমওয়ার্ক, সমস্যা সমাধান শেখা জরুরি।

২. প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা অর্জন

  • ইন্টার্নশিপ, স্বেচ্ছাসেবী কাজ বা ক্লাব অ্যাক্টিভিটিতে অংশ নিলে সফট স্কিল গড়ে ওঠে।

৩. আত্মমূল্যায়ন ও ধারাবাহিক অনুশীলন

  • নিজের শক্তি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করে সফট স্কিল উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

৪. প্রযুক্তি ও মানবিকতার সমন্বয়

  • একদিকে টেকনিক্যাল দক্ষতা অর্জন করতে হবে, অন্যদিকে সহকর্মীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সহযোগিতার মানসিকতা রাখতে হবে।

চাকরির বাজারে সফল হতে হলে হার্ড স্কিল এবং সফট স্কিল—দুটোই অপরিহার্য। হার্ড স্কিল আপনাকে চাকরির দরজায় পৌঁছে দেবে, কিন্তু সফট স্কিল সেই দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দীর্ঘ সময় টিকে থাকার শক্তি দেবে।

নিয়োগকর্তারা আসলে চানপ্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ, আবার মানবিক গুণাবলীতে সমৃদ্ধ এক পরিপূর্ণ কর্মী।

 

 

মাতৃভূমির খবর

Link copied!