প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০১:২১ পিএম
চাকরি বা ব্যবসায় সফল হওয়ার গল্পের আড়ালে অনেক অজানা অধ্যায় থাকে। শুধু পরিশ্রম বা প্রতিভা নয়, সাফল্যের পথে দুটি শক্তিশালী হাতিয়ার হলো নেটওয়ার্কিং এবং মেন্টরশিপ। এগুলো অনেক সময় বইয়ের পাতায় শেখানো হয় না, বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সম্পর্কের মাধ্যমে গড়ে ওঠে।
নেটওয়ার্কিং: সঠিক মানুষের সঙ্গে সঠিক সময়ে যুক্ত হওয়া
নেটওয়ার্কিং মানে শুধু পরিচিতি বাড়ানো নয়; বরং অর্থবহ সম্পর্ক তৈরি করা, যেখানে পারস্পরিক সহযোগিতা ও শেখার সুযোগ থাকে।
- চাকরির সুযোগ: অনেক সময় নিয়োগ বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগেই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুযোগ তৈরি হয়।
- জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি: অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপচারিতা থেকে নতুন ধারণা পাওয়া যায়।
- সহযোগিতা ও প্রজেক্ট: পেশাগত জীবনে নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই দল তৈরি বা যৌথ উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব।
- আত্মবিশ্বাস তৈরি: নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে যোগাযোগ দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো, অনেক শিক্ষার্থী এখনও নেটওয়ার্কিংকে “অপ্রয়োজনীয় পরিচিতি” মনে করে। অথচ ক্যারিয়ারের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, সেমিনার, কনফারেন্স বা অনলাইন কমিউনিটিতে যুক্ত হওয়া ভবিষ্যতের বড় বিনিয়োগ।
মেন্টরশিপ: অভিজ্ঞতার আলোয় পথ চলা
মেন্টরশিপ হলো এমন একটি সম্পর্ক যেখানে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি (মেন্টর) নবীনকে (মেন্টি) দিকনির্দেশনা দেন।
- ক্যারিয়ার পরিকল্পনা: মেন্টররা জানিয়ে দেন কোন খাতে কীভাবে এগোতে হবে।
- ভুল এড়ানোর সুযোগ: নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে মেন্টররা অনেক ব্যর্থতা থেকে রক্ষা করতে পারেন।
- প্রেরণা ও আত্মবিশ্বাস: সমস্যার সময় মেন্টররা অনুপ্রেরণা জোগান।
- পেশাগত মান উন্নয়ন: একজন ভালো মেন্টর শুধু কাজের দিকনির্দেশনা দেন না, বরং শিষ্টাচার, নেতৃত্ব, নৈতিকতা—সবকিছু শেখান।
বাংলাদেশের তরুণদের জন্য মেন্টরশিপ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে ক্যারিয়ার গাইডলাইন সচরাচর পাওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু হলে শিক্ষার্থীরা সঠিক দিকনির্দেশনা পেত।
শিক্ষার্থীদের করণীয়
১. নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন:
- বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, অনলাইন কমিউনিটি, কনফারেন্সে যুক্ত হন।
- লিঙ্কডইন প্রোফাইল তৈরি করে নিয়মিত আপডেট করুন।
২. মেন্টর খুঁজুন:
- আপনার পছন্দের খাতে অভিজ্ঞ সিনিয়র, শিক্ষক বা পেশাজীবীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।
- প্রশ্ন করুন, শিখুন এবং পরামর্শ মেনে চলুন।
৩. দেওয়া-নেওয়ার সংস্কৃতি বজায় রাখুন:
- শুধু সাহায্য চাওয়া নয়, বরং নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যকে সাহায্য করুন।
৪. আত্মউন্নয়ন চালিয়ে যান:
- নেটওয়ার্কিং বা মেন্টরশিপ থেকে পাওয়া পরামর্শগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করুন।
ক্যারিয়ারের সাফল্য একা অর্জন করা যায় না। প্রয়োজন সঠিক মানুষের সঙ্গে সংযোগ এবং অভিজ্ঞতার আলোয় দিকনির্দেশনা। নেটওয়ার্কিং আপনাকে সুযোগ এনে দেবে, আর মেন্টরশিপ শেখাবে সেই সুযোগ কাজে লাগানোর কৌশল।
তাই বলা যায়, নেটওয়ার্কিং ও মেন্টরশিপই হলো ক্যারিয়ার সাফল্যের গোপন হাতিয়ার।