প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০১:০৭ পিএম
বিশ্ব দ্রুত এগোচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), রোবোটিক্স, ডাটা সায়েন্স, ব্লকচেইন, ক্লাউড কম্পিউটিং—এসব প্রযুক্তি শুধু আমাদের জীবনধারাই বদলে দিচ্ছে না, বদলে দিচ্ছে চাকরির বাজারও। এমন বাস্তবতায় ডিজিটাল স্কিল আর বিলাসিতা নয়; এটি হয়ে উঠেছে ভবিষ্যতের চাকরির জন্য অপরিহার্য হাতিয়ার।
কেন ডিজিটাল স্কিল অপরিহার্য?
- চাকরির ধরন বদলাচ্ছে: অনেক ঐতিহ্যবাহী কাজ হারিয়ে যাচ্ছে, নতুন প্রযুক্তিনির্ভর কাজ তৈরি হচ্ছে।
- গ্লোবাল প্রতিযোগিতা: আজকের চাকরি শুধু স্থানীয় নয়, বৈশ্বিক। একজন বাংলাদেশি তরুণ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে ইউরোপ বা আমেরিকার ক্লায়েন্টের সঙ্গেও কাজ করছে।
- অটোমেশন ও AI: যে কাজ মেশিন করতে পারবে, সেখানে মানুষের জায়গা সংকুচিত হবে। তাই মেশিন নিয়ন্ত্রণ ও ডেটা বিশ্লেষণের মতো দক্ষতা প্রয়োজন।
কোন কোন ডিজিটাল স্কিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
১. ডাটা অ্যানালাইসিস ও ডাটা সায়েন্স
চাকরির বাজারে ডেটা হলো নতুন ‘তেল’। ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহার করা এখন যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অপরিহার্য।
২. ডিজিটাল মার্কেটিং
ব্যবসা এখন অফলাইনের চেয়ে অনলাইনে বেশি নির্ভরশীল। SEO, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, ইমেইল মার্কেটিং—এসব স্কিলের চাহিদা ব্যাপক।
৩. প্রোগ্রামিং ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
পাইথন, জাভা, জাভাস্ক্রিপ্ট, সি++—প্রোগ্রামিং দক্ষতা ছাড়া প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে টিকে থাকা কঠিন।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও মেশিন লার্নিং
স্বয়ংক্রিয় গাড়ি থেকে শুরু করে চ্যাটবট পর্যন্ত, AI এখন সবখানেই। এই খাত আগামী দিনের সবচেয়ে বড় চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করবে।
৫. সাইবার সিকিউরিটি
ডিজিটাল যুগে তথ্য সুরক্ষা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের চাহিদা বাড়ছে।
৬. ক্লাউড কম্পিউটিং
ডেটা সংরক্ষণ ও শেয়ারিং এখন ক্লাউডে নির্ভরশীল। ফলে Amazon AWS, Microsoft Azure, Google Cloud জানা জরুরি।
৭. গ্রাফিক ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া
কনটেন্ট-নির্ভর এই সময়ে ভিজ্যুয়াল ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং ও 3D মডেলিংয়ের চাহিদা ব্যাপক।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের তরুণ সমাজ বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং খাতে নিজেদের জায়গা তৈরি করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সার সরবরাহকারী দেশ। তবে বেশিরভাগ তরুণ এখনও মৌলিক ডিজিটাল স্কিলেই সীমাবদ্ধ। উচ্চতর স্কিল যেমন AI, সাইবার সিকিউরিটি, বা ডাটা সায়েন্সে দক্ষ জনবল এখনো স্বল্প।
- সরকারি উদ্যোগে "লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং" প্রকল্প থাকলেও এর পরিসর বাড়ানো প্রয়োজন।
- বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ডিজিটাল স্কিল বিষয়ক বাধ্যতামূলক কোর্স চালু করা যেতে পারে।
- গ্রামীণ অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে হবে, নাহলে শহর-গ্রামের বৈষম্য আরও বাড়বে।
শিক্ষার্থীদের জন্য করণীয়
১. বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার পাশাপাশি অনলাইন কোর্স (Coursera, Udemy, edX) থেকে নতুন স্কিল শেখা।
২. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় প্র্যাকটিস করা—শুধু সার্টিফিকেটের জন্য নয়, বাস্তবে প্রয়োগের জন্য।
৩. ইন্টার্নশিপ ও ফ্রিল্যান্স প্রজেক্টে অংশ নেওয়া, যাতে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা হয়।
৪. একসঙ্গে অনেক কিছু শিখতে গিয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে এক-দুটি নির্দিষ্ট স্কিলে গভীরভাবে দক্ষ হওয়া।
ভবিষ্যতের চাকরির বাজার ডিজিটাল দক্ষতা ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। শিক্ষার্থীরা যদি সময়মতো প্রয়োজনীয় স্কিল অর্জন করতে পারে, তবে তারা শুধু চাকরির বাজারে টিকে থাকবে না, বরং নতুন সুযোগও তৈরি করতে পারবে।
ডিজিটাল স্কিল মানে শুধু প্রযুক্তি শেখা নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য নিজের অবস্থান শক্ত করে তোলা।