প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১২:৫০ পিএম
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির বিকাশ শুধু আমাদের জীবনধারাই বদলে দেয়নি, বদলে দিয়েছে কাজের ধরনও। একসময় যেখানে চাকরি মানেই অফিসে নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত থেকে কাজ করা, এখন সেখানে বাড়িতে বসে বা ক্যাফেতে বসেই কাজ করা সম্ভব। এই পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হলো ফ্রিল্যান্সিং ও গিগ ইকোনমি। বিশেষ করে বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য এটি হয়ে উঠছে নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র।
ফ্রিল্যান্সিং ও গিগ ইকোনমি কী?
ফ্রিল্যান্সিং হলো স্বাধীনভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মী না হয়েও প্রজেক্টভিত্তিক কাজ করা। যেমন—গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি।
অন্যদিকে গিগ ইকোনমি হলো এমন একটি অর্থনৈতিক কাঠামো যেখানে ছোট ছোট কাজ (গিগ) ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। উবার, আপওয়ার্ক, ফাইভার, টপটাল ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম এর বাস্তব উদাহরণ।
কেন শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি?
১. অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ
পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করতে পারে। এতে তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয় এবং পরিবারকেও সহযোগিতা করতে পারে।
২. ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন
শুধু একাডেমিক পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষার্থীরা বাজারচাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করতে পারে। যেমন—ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি।
৩. গ্লোবাল মার্কেটে কাজ করার সুযোগ
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিশ্ববাজারে প্রবেশাধিকার। একজন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে বসেই আমেরিকা বা ইউরোপের ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করতে পারে।
৪. ক্যারিয়ারের প্রস্তুতি
ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পেশাদারিত্ব, সময় ব্যবস্থাপনা ও ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করার দক্ষতা শিখে ফেলে, যা ভবিষ্যতের চাকরি বা ব্যবসায় কাজে লাগে।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা
বাংলাদেশ বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং ও গিগ ইকোনমি খাতে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি।
- আইসিটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৬.৫ লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার আছে।
- ফ্রিল্যান্সাররা প্রতিবছর দেশকে অন্তত এক বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিচ্ছে।
- সবচেয়ে বেশি কাজ হচ্ছে—গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডাটা এন্ট্রি, ডিজিটাল মার্কেটিং ও কনটেন্ট রাইটিংয়ে।
এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শুধু বাড়তি আয়ের মাধ্যম নয়, বরং জাতীয় অর্থনীতিতেও বড় অবদান রাখতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা
তবে সবকিছুর মতো ফ্রিল্যান্সিংয়েরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে—
- ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা: গ্রামাঞ্চলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট এখনও নিশ্চিত নয়।
- অভিজ্ঞতার অভাব: অনেক শিক্ষার্থী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়।
- অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা: গিগ ইকোনমিতে নির্দিষ্ট বেতন নেই, ফলে আয় অনিয়মিত।
- ভাষাগত দুর্বলতা: ইংরেজি যোগাযোগ দক্ষতার অভাবে আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
করণীয়
১. প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বৃদ্ধি
সরকার ও বেসরকারি খাতকে আরও বেশি প্রশিক্ষণ কর্মশালা চালু করতে হবে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে।
২. ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতার উন্নয়ন
শিক্ষার্থীদের শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতা নয়, ইংরেজি ভাষায় সাবলীলতা অর্জনও জরুরি।
৩. ইন্টারনেট সুবিধা বিস্তৃত করা
প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে হবে।
৪. নিয়মিত গাইডলাইন ও কাউন্সেলিং
শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এবং অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।
ফ্রিল্যান্সিং ও গিগ ইকোনমি বাংলাদেশের তরুণদের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি আয়, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জনের এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে তরুণরা শুধু নিজেদের জীবনমান উন্নত করতে পারবে না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।
আজকের শিক্ষার্থী যদি দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হয়ে গড়ে ওঠে, তবে আগামী দিনের বাংলাদেশ পাবে বিশ্বমানের মানবসম্পদ।