প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
বাংলাদেশে প্রতি বছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসি শেষে উচ্চশিক্ষার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ায়। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, কেউ পেশাগত শিক্ষায়, আবার কেউ বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ খোঁজে। কিন্তু একটি বড় বাস্তবতা হলো—অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জানে না কোন বিষয়ে পড়াশোনা করলে কোন ক্যারিয়ারে যেতে পারবে, কিংবা কোন পেশা তাদের আগ্রহ ও দক্ষতার সঙ্গে মানানসই। ফলাফল হিসেবে অনেক সময় দেখা যায়—ভুল বিষয় নির্বাচন, হতাশা, বেকারত্ব এবং দক্ষতার ঘাটতি। এই জায়গায় ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং হতে পারে একটি কার্যকর সমাধান।
ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং কী?
ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং হলো শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের ভিত্তিতে সঠিক পেশা বা উচ্চশিক্ষার পথ বেছে নিতে সহায়তা করার একটি প্রক্রিয়া। এতে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা, দক্ষতার মূল্যায়ন, এবং অভিজ্ঞ পরামর্শকের দিকনির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
বাংলাদেশের বাস্তবতা
বাংলাদেশে এখনও অধিকাংশ স্কুল-কলেজে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ব্যবস্থা নেই। ফলে—
- শিক্ষার্থীরা অনেক সময় বাবা-মা বা আত্মীয়-স্বজনের ইচ্ছা অনুযায়ী বিষয় বেছে নেয়।
- জনপ্রিয় কিছু পেশায় (ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার) অতিরিক্ত ভিড় হয়, কিন্তু অন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে (কারিগরি, গবেষণা, কৃষি, ডিজিটাল টেকনোলজি) যোগ্য জনশক্তির সংকট থাকে।
- বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে অনেকেই বুঝতে পারে তারা আসলে ভুল পথে এসেছে।
কেন ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং জরুরি
১. সঠিক দিকনির্দেশনা: শিক্ষার্থীরা কোন বিষয়ে ভালো, কোন পেশায় তাদের সম্ভাবনা বেশি—তা স্পষ্ট হয়।
২. বেকারত্ব কমানো: দক্ষতা ও চাকরির বাজারের চাহিদার মিল ঘটানো যায়।
৩. সময় ও অর্থ সাশ্রয়: অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে ভর্তি হয়ে পরে দিক পরিবর্তন করতে হয় না।
৪. মানসিক চাপ কমানো: পেশা নির্বাচনে দোটানা বা হতাশা কমে যায়।
৫. নতুন খাতের সঙ্গে পরিচয়: ডিজিটাল মার্কেটিং, ডাটা সায়েন্স, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ট্যুরিজম ইত্যাদি নতুন খাত সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানে।
স্কুল-কলেজ পর্যায়ে করণীয়
- প্রতিটি স্কুলে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেল গঠন করা।
- বছরে অন্তত দু’বার ক্যারিয়ার সেমিনার ও ওয়ার্কশপ আয়োজন।
- শিক্ষার্থীদের জন্য সাইকোমেট্রিক টেস্ট চালু করা, যাতে তারা নিজের দক্ষতা ও আগ্রহ বুঝতে পারে।
- অভিভাবকদেরও যুক্ত করে সচেতনতা তৈরি করা।
বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশের পথে অগ্রসর হচ্ছে। এই যাত্রায় প্রয়োজন দক্ষ, আত্মবিশ্বাসী ও সঠিক ক্যারিয়ার-নির্বাচিত তরুণ প্রজন্ম। এজন্য শিক্ষার্থীদের শুরু থেকেই সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার বিকল্প নেই। ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং শুধু একজনের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে না, বরং দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।