প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
শিক্ষা সবার অধিকার—এটি সংবিধান প্রদত্ত নিশ্চয়তা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের অনেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী এখনো শিক্ষার মূল স্রোত থেকে পিছিয়ে রয়েছে। সরকার বিভিন্ন জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে—বিশেষ শিক্ষা নীতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কর্মসূচি, স্টাইপেন্ড, বিশেষ বিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র—কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে, এগুলো কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে?
গ্রামীণ ও পাহাড়ি অঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও অনেক সময় শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ না থাকা এবং দারিদ্র্যের কারণে ঝরে পড়ার হার বেশি। ইউনিসেফের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও প্রান্তিক পরিবারের প্রায় অর্ধেক শিশু পঞ্চম শ্রেণির আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও চিত্র প্রায় একই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী বা শারীরিকভাবে অক্ষম শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের অনেক জায়গায় বিশেষায়িত শিক্ষক ও শিক্ষাসামগ্রী নেই। যদিও কিছু বিশেষ বিদ্যালয় ও ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশন সেন্টার চালু হয়েছে, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে এসব শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরকার জাতীয় পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিলেও বাজেট বরাদ্দ ও মনিটরিং দুর্বল। স্কুলভিত্তিক সহায়ক সরঞ্জাম, যেমন ব্রেইল বই, শ্রবণযন্ত্র, হুইলচেয়ার—এসব পৌঁছায়নি অধিকাংশ বিদ্যালয়ে। শিক্ষক প্রশিক্ষণেও বিশেষ প্রয়োজনভিত্তিক বিষয়গুলো এখনো পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
তবে ইতিবাচক কিছু দিকও রয়েছে। বর্তমানে কিছু সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রান্তিক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটি নির্ভর শিক্ষা, অনলাইন কোর্স এবং মাতৃভাষায় শিক্ষা উপকরণ তৈরি হচ্ছে। শহরাঞ্চলের কিছু বিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণিকক্ষ চালু হয়েছে, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরাও একসঙ্গে পড়াশোনা করছে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর জাতীয় পরিকল্পনা মানে শুধু নীতি প্রণয়ন নয়, বরং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এজন্য প্রয়োজন যথেষ্ট বাজেট বরাদ্দ, বিশেষ প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ, প্রান্তিক অঞ্চলে বিদ্যালয় অবকাঠামো উন্নয়ন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
দিনের শেষে শিক্ষা যদি সবার জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত না হয়, তবে উন্নয়ন টেকসই হবে না। প্রান্তিক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সুযোগ না পেলে সমাজ আরও বৈষম্যমূলক হয়ে উঠবে। তাই এখনই সময়—জাতীয় পরিকল্পনাগুলোকে কাগজ থেকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার।