প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১১:৩৩ এএম
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দুটি বড় ধারা হলো সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উভয় ক্ষেত্রেই লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তবে মান ও খরচের দিক থেকে দুটি ব্যবস্থার মধ্যে বৈষম্য দিন দিন আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
সরকারি স্কুল-কলেজগুলো দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক। ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন তুলনামূলকভাবে খুব কম হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা মূলত এখানে পড়াশোনা করে। ঢাকা কলেজ, নটরডেম কলেজ কিংবা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের মতো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান এখনও উচ্চমানের বলে ধরা হয়। তবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক সরকারি স্কুলে রয়েছে অবকাঠামো সংকট, শিক্ষক ঘাটতি ও শিক্ষার মান বজায় রাখতে ব্যর্থতা।
অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার খরচ অনেক বেশি। এখানে ভর্তি ফি, মাসিক বেতন, বইপত্র ও কোচিংয়ের খরচ মিলে পরিবারগুলোকে বড় আর্থিক চাপ বহন করতে হয়। তবে তুলনামূলকভাবে ছোট ক্লাসরুম, শিক্ষকের ব্যক্তিগত মনোযোগ, উন্নত সুযোগ-সুবিধা ও অতিরিক্ত কার্যক্রমের কারণে অভিভাবকদের বড় একটি অংশ সন্তানদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে আগ্রহী। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোই বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
মানের দিক থেকেও বৈষম্য রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে অনেক সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বেশি থাকে, সেখানে বেসরকারি স্কুলে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকায় পাঠদান তুলনামূলক মনোযোগী হয়। তবে সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মান সমান নয়। অনেক প্রতিষ্ঠান শুধু উচ্চ ফি নিচ্ছে, কিন্তু মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে পারছে না।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষার মধ্যে বৈষম্য দূর করা জরুরি। সরকার যদি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো ও শিক্ষক প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ বাড়ায়, তবে সাধারণ মানুষ আরও বেশি আস্থা নিয়ে সন্তানদের সরকারি স্কুলে পাঠাবে। একইসঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ফি কাঠামো নিয়ন্ত্রণ এবং মান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
দিনের শেষে শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার। তাই সরকারি-বেসরকারি বিভাজন যত কমবে, ততই দেশের প্রতিটি শিশু সমান সুযোগে শিক্ষার আলো পাবে।