শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল, ইতিবাচক না নেতিবাচক প্রভাব?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১১:২২ এএম

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল, ইতিবাচক না নেতিবাচক প্রভাব?

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন এসেছে কয়েক বছর আগে—প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) বাতিল। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পরীক্ষা দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় মানসিক চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের পর থেকে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ, নাকি এর মাধ্যমে তৈরি হলো নতুন সমস্যা?

অভিভাবকদের একাংশ মনে করেন, পিইসি বাতিল হওয়ায় ছোট্ট শিশুদের ওপর থেকে অযথা চাপ কমেছে। মাত্র ১০ বা ১১ বছরের শিক্ষার্থীর জন্য জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা অযৌক্তিক ছিল বলেই তাদের ধারণা। এখন তারা স্কুলভিত্তিক মূল্যায়নে অংশ নিচ্ছে, যা তুলনামূলকভাবে চাপমুক্ত। ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, “আগে বাচ্চাদের সারাবছর শুধু পরীক্ষার ভয় নিয়ে পড়তে হতো, এখন অন্তত পড়াশোনায় আগ্রহটা বেড়েছে।”

অন্যদিকে অনেক শিক্ষাবিদ ও অভিভাবক মনে করেন, পরীক্ষা বাতিলের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমেছে। আগে জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের মধ্যেই এক ধরনের দায়বদ্ধতা ছিল। এখন সেই জায়গায় শিথিলতা এসেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে যেখানে শিক্ষক সংকট ও অবকাঠামোগত সমস্যা আছে, সেখানে শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্তর শেষে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠছে।

শিক্ষক সমাজও এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। কেউ বলছেন, পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় পাঠদান এখন অনেক বেশি শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক হয়েছে, শিশুদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ বেড়েছে। আবার কেউ মনে করেন, সমাপনী পরীক্ষার অভাবে শিক্ষার্থীদের শেখার মান যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, পিইসি বাতিলের মূল উদ্দেশ্যই ছিল শিশুদের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমানো এবং সৃজনশীল শিক্ষা নিশ্চিত করা। তবে এর বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী ও মানসম্পন্ন নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়ন ব্যবস্থা (Continuous Assessment) চালু করতে হবে। নাহলে দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে যেমন শিক্ষার্থীরা স্বস্তি পেয়েছে, তেমনি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের প্রশ্নে তৈরি হয়েছে নতুন চ্যালেঞ্জ। এখন সরকারের দায়িত্ব হলো স্কুলভিত্তিক মূল্যায়নকে কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা, যাতে পরীক্ষা না থাকলেও শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্তর শেষে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!