শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

জাতীয় পাঠ্যক্রম ২০২৩, শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ও অভিভাবকদের মতামত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১১:১৮ এএম

জাতীয় পাঠ্যক্রম ২০২৩, শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ও অভিভাবকদের মতামত

বাংলাদেশে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর অংশ হিসেবে জাতীয় পাঠ্যক্রম ২০২৩ বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পরীক্ষাভিত্তিক মুখস্থ পড়া থেকে সরে এসে "শেখার মাধ্যমে মূল্যায়ন"—এমন একটি ধারণা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে এই পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে। শিক্ষার্থীরা বইয়ের বাইরে গিয়ে প্রকল্পভিত্তিক কাজ করছে, দলগত আলোচনায় অংশ নিচ্ছে, আর শিক্ষকরা চেষ্টা করছেন পড়াশোনাকে জীবনমুখী করার। তবে এ নিয়ে রয়েছে নানামুখী অভিজ্ঞতা ও মতামত।

শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ বলছে, নতুন পাঠ্যক্রম তাদের চিন্তাশক্তি বাড়াচ্ছে। মুখস্থ বিদ্যা নয়, বরং বিষয়বস্তু বুঝে শেখা যাচ্ছে। ক্লাসে প্রশ্নোত্তর, উপস্থাপনা, আর দলীয় কাজ করার ফলে তারা পড়াশোনায় আরও বেশি আগ্রহ পাচ্ছে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহজাবিন জানায়, "আগে শুধু বই মুখস্থ করতাম, এখন নিজের মতামতও প্রকাশ করতে হয়। এতে ভালো লাগছে, তবে কিছুটা চাপও আছে।"

অভিভাবকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া মিশ্র। কেউ কেউ মনে করেন, নতুন পদ্ধতিতে সন্তানরা বাস্তবমুখী শিক্ষা পাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। তবে অনেকে মনে করেন, পাঠ্যক্রমের সঠিক দিকনির্দেশনা ও শিক্ষক প্রশিক্ষণের অভাবে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, "প্রকল্পভিত্তিক কাজ ভালো, কিন্তু গ্রামে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ বা রিপোর্ট তৈরি করা ছোটদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এতে তাদের বাড়তি চাপ তৈরি হয়।"

শিক্ষকরাও স্বীকার করছেন, নতুন পাঠ্যক্রম আকর্ষণীয় হলেও বাস্তবায়নে নানা সমস্যা রয়েছে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেক শিক্ষকই সঠিকভাবে মূল্যায়ন বা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। তাছাড়া শ্রেণিকক্ষের সীমাবদ্ধতা, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ও অবকাঠামোগত সমস্যাও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন পাঠ্যক্রমের মূল লক্ষ্যই হলো শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা গড়ে তোলা। তাই শুরুতে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও ধীরে ধীরে এর সুফল পাওয়া যাবে।

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, জাতীয় পাঠ্যক্রম ২০২৩ শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন এক ধারা এনেছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক—সব পক্ষের অভিজ্ঞতা ও মতামতের ভেতরেই ফুটে উঠছে এর সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা। এখন প্রয়োজন যথাযথ বাস্তবায়ন, নিয়মিত প্রশিক্ষণ, আর অভিভাবক-শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সমন্বয়। তাহলেই হয়তো এই পাঠ্যক্রম সত্যিকার অর্থে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!