শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

গাজা ও মুসলিম বিশ্বের নীরবতা: রমজানের শিক্ষা কি আমরা ভুলে গেছি?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৫, ০৮:৪৬ এএম

গাজা ও মুসলিম বিশ্বের নীরবতা: রমজানের শিক্ষা কি আমরা ভুলে গেছি?

গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আজ বিশ্ববাসীর চোখের সামনে স্পষ্ট। শত শত শিশু, নারী ও নিরীহ মানুষ প্রতিদিন শহীদ হচ্ছে, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হচ্ছে, হাসপাতালগুলোর শয্যা আর রক্তে ভিজে যাচ্ছে, অথচ বিশ্ববাসী দেখেও না দেখার ভান করছে। সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে, মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের নীরবতা। এই নীরবতা শুধু রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয়, এটি মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধেরও চরম অবক্ষয়। রমজান আমাদের আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দেয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা দেয়, কিন্তু আমরা কি এই শিক্ষা ভুলে গেছি?

 

রমজান শুধুমাত্র সেহরি-ইফতার আর তারাবিহর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি আত্মশুদ্ধি, সংযম, দানের মাধ্যমে সমাজের দুর্বলদের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। এই মাসে মুসলমানরা নিজেদের সেরা চরিত্র ও মানবিকতাকে জাগ্রত করার প্রতিজ্ঞা করে। তাহলে কেন মুসলিম বিশ্ব গাজায় রক্তের বন্যা দেখেও চুপ করে বসে আছে? কেন ওআইসি, আরব লিগ, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর নেতারা শুধুমাত্র বিবৃতির মধ্যেই নিজেদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখছে? তারা কি ভয় পায়, নাকি স্বার্থের বাঁধনে আটকে গেছে?

 

গাজা আজ এক উন্মুক্ত কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। অথচ মুসলিম বিশ্বের বড় বড় শক্তিধর দেশগুলো নিজেদের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার দোহাই দিয়ে কার্যত চুপ। তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় এতটাই ব্যস্ত যে, লাখো নিরপরাধ ফিলিস্তিনি মারা গেলেও তাদের টনক নড়ে না। অথচ ইসলাম আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বলে, অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে বলে।

 

মুসলিম উম্মাহর এই বিভক্তি আজ আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। যদি মুসলিম বিশ্ব একত্রিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে গাজা পরিস্থিতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতো, তাহলে হয়তো পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতো না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের নেতৃত্ব আজ পশ্চিমাদের রাজনৈতিক ছায়ায় বন্দি, অর্থনীতি তাদের ওপর নির্ভরশীল এবং রাজনৈতিক স্বার্থ এতটাই প্রভাবশালী যে, তারা ফিলিস্তিনের রক্তে স্নাত শিশুগুলোর কান্নাও শুনতে চায় না।

 

রমজান আমাদের শিক্ষা দেয় সংযম, আত্মত্যাগ ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার। নবী মুহাম্মাদ (সা.) এই মাসে যুদ্ধ করেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, মক্কা বিজয় করেছেন, কারণ সত্যের পথে আপস করা যায় না। তাহলে আজ আমরা কেন আমাদের মুসলিম ভাইদের ওপর চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার নই? কেন বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক কাতারে দাঁড়াচ্ছে না?

 

এখনো সময় আছে, মুসলিম বিশ্বকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। যদি আজ আমরা নীরব থাকি, তাহলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। আমাদেরকে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, মানবিক এবং সাংস্কৃতিক সব দিক থেকে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে হবে। মুসলিম বিশ্ব যদি সত্যিকারের ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে নিপীড়কদের ক্ষমতা থাকবে না আমাদের ভাই-বোনদের হত্যা করার।

 

গাজায় শিশুদের রক্তের দাগ লেগে আছে আমাদের নীরবতার ওপর। আমরা যদি আজ এই রক্তের মূল্য না দেই, তাহলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। রমজান আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে, সেটা শুধু নামাজ, রোজা আর ইফতার মাহফিল নয়— এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শিক্ষা। এই শিক্ষা যদি আমরা ভুলে যাই, তাহলে আমাদের মুসলিম পরিচয় শুধুমাত্র নামমাত্র থাকবে, প্রকৃত অর্থে আমরা মুসলিম থাকবো না। এখন আমাদের ভাবার সময় এসেছে, আমরা কি সত্যিই মুসলমান, নাকি শুধুই নামধারী?

 

লেখকঃ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগ (বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং সম্পাদক, দৈনিক মাতৃভূমির খবর) 

 
 
 
 
 

Link copied!