প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
শিক্ষাজীবন মূলত জ্ঞান অর্জনের সময়। কিন্তু শুধুমাত্র বইয়ের ভেতরে সীমাবদ্ধ থেকে আজকের প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে টিকে থাকা কঠিন। চাকরির অভিজ্ঞতা ও ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে কার্যকর পথ হলো ইন্টার্নশিপ। একে বলা হয় চাকরির অভিজ্ঞতার প্রথম ধাপ।
ইন্টার্নশিপ কী এবং কেন দরকার?
ইন্টার্নশিপ হলো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিক্ষার্থীদের কাজ করার সুযোগ, যেখানে তারা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এতে শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন কাজের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা পায়, অন্যদিকে নিজেদের যোগ্যতা যাচাই করার সুযোগও তৈরি হয়।
বাংলাদেশে এখনও অনেকেই ইন্টার্নশিপকে কেবল ‘অতিরিক্ত ঝামেলা’ মনে করে। কিন্তু বাস্তবে এটি ক্যারিয়ার গঠনের অন্যতম শক্ত ভিত। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইন্টার্নশিপ প্রায় বাধ্যতামূলক, আর উন্নত বিশ্বের চাকরির বাজারে ইন্টার্নশিপ অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রার্থীদের যোগ্যতা অনেকাংশেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
ইন্টার্নশিপের প্রধান উপকারিতা
১. কাজ শেখা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন
ক্লাসে শেখা তত্ত্ব যখন বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়, তখন শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে আসল কাজ কীভাবে চলে। যেমন—অ্যাকাউন্টিং-এর শিক্ষার্থী যদি ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ করে, তবে সে শুধু বইয়ের হিসাব নয়, বরং সফটওয়্যারের ব্যবহার, গ্রাহকসেবা, এবং নথি ব্যবস্থাপনার কাজও শিখতে পারে।
২. ক্যারিয়ার পছন্দের নিশ্চয়তা পাওয়া
অনেক সময় শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট পেশার প্রতি আকৃষ্ট হয়, কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখে সেটি তাদের জন্য উপযুক্ত নয়। ইন্টার্নশিপ সেই দ্বিধা দূর করে। যদি পছন্দের কাজ বাস্তবে মানানসই না হয়, তবে আগে থেকেই বিকল্প পরিকল্পনা করার সুযোগ মেলে।
৩. পেশাগত নেটওয়ার্ক তৈরি
ইন্টার্নশিপ চলাকালে শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হয়। এই যোগাযোগ ভবিষ্যতে চাকরির সুযোগ পেতে সহায়তা করে।
৪. রেজুমেতে বাড়তি মূল্য যোগ করা
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে নিয়োগকর্তারা শুধু ভালো গ্রেড নয়, বরং ব্যবহারিক অভিজ্ঞতাও খোঁজেন। ইন্টার্নশিপ সেই অভিজ্ঞতা হিসেবে রেজুমেকে শক্তিশালী করে তোলে।
৫. আত্মবিশ্বাস ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি
অফিসের পরিবেশে কাজ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে। সময়মতো কাজ শেষ করা, দায়িত্ব নেওয়া, দলগত কাজ করা—এসব দক্ষতা চাকরির জীবনে অপরিহার্য।
বাংলাদেশে ইন্টার্নশিপের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে ইন্টার্নশিপ সংস্কৃতি ধীরে ধীরে বাড়লেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে—
- অনেক প্রতিষ্ঠান ইন্টার্নশিপকে গুরুত্ব দেয় না, ফলে শিক্ষার্থীরা কেবল কাগজে-কলমে ইন্টার্নশিপ সার্টিফিকেট পায়, বাস্তব অভিজ্ঞতা নয়।
- বেশিরভাগ ইন্টার্নশিপই অবৈতনিক, ফলে মেধাবী হলেও অনেক শিক্ষার্থী অর্থের অভাবে অংশ নিতে পারে না।
- বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পক্ষেত্রের মধ্যে সঠিক সমন্বয়ের অভাব আছে।
- গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সুযোগের অভাবে পিছিয়ে থাকে।
করণীয়
১. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও স্নাতক পর্যায়ে ইন্টার্নশিপকে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি শেষ করার আগেই অন্তত একবার চাকরির অভিজ্ঞতা অর্জন করবে।
২. প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলতা
সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামকে গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনা করতে হবে। শুধু সার্টিফিকেট নয়, বরং বাস্তব কাজের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
৩. অবৈতনিক ইন্টার্নশিপ কমানো
অন্তত ভাতা বা যাতায়াত খরচ দেওয়ার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে, যাতে সব শিক্ষার্থী সুযোগ নিতে পারে।
- অনলাইন ও রিমোট ইন্টার্নশিপ চালু
ডিজিটাল বাংলাদেশে বসে এখন অনেক কাজ অনলাইনে সম্ভব। গ্রাম বা শহর—যেখানেই থাকুক না কেন, শিক্ষার্থীরা অনলাইন ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।
শিক্ষাজীবনে ইন্টার্নশিপ হলো ভবিষ্যৎ চাকরির অভিজ্ঞতার প্রথম ধাপ। এটি শুধু একটি সার্টিফিকেট নয়, বরং আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা ও দিকনির্দেশনার পথপ্রদর্শক। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে যদি দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করতে হয়, তবে ইন্টার্নশিপ সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
কারণ আজকের ইন্টার্নশিপই আগামী দিনের কর্মদক্ষ পেশাজীবী তৈরির মূল চাবিকাঠি।