শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫
বাস্তবায়নে সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১১:০৫ এএম

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি যুগান্তকারী দলিল হলো জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০। প্রায় এক দশকের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আজ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে এর বাস্তবায়ন-অবস্থা বিশ্লেষণ করা। এ নীতির মাধ্যমে সমতা, গুণগত মান, শিক্ষায় প্রবেশাধিকার ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। প্রশ্ন হলো—সেই অঙ্গীকার কতটা সফল হলো আর কোথায় সীমাবদ্ধতা রয়ে গেল?

শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষাকে জাতীয় উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। ইতিমধ্যে প্রাথমিক স্তরে ভর্তি হার প্রায় শতভাগে উন্নীত হয়েছে, বিদ্যালয়ত্যাগী শিশুদের হার কমেছে, এবং নারীশিক্ষার হারও বেড়েছে। অনেক এলাকায় বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও অংশগ্রহণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

অন্যদিকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচি শিক্ষাক্ষেত্রে অন্যতম বড় সাফল্য। কোটি কোটি শিক্ষার্থী বছরের শুরুতে হাতে নতুন বই পেয়ে শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত হয়েছে। একইসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার প্রাথমিক অন্তর্ভুক্তি, মাধ্যমিক স্তরে সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।

তবে সীমাবদ্ধতার দিকও কম নয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অবকাঠামোগত সংকট ও শিক্ষক ঘাটতি। শহর-গ্রামের শিক্ষার মান এখনও বৈষম্যমূলক। অনেক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবরেটরি কিংবা প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। শিক্ষকের সংখ্যা বাড়লেও মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের ঘাটতি প্রকট।

এছাড়া, নীতিতে বলা হয়েছিল শিক্ষাকে কর্মমুখী ও দক্ষতাভিত্তিক করা হবে। বাস্তবে এখনও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বের হওয়া অনেক শিক্ষার্থী বেকার হয়ে থাকছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার পরিধি প্রত্যাশার তুলনায় সীমিত, ফলে চাকরির বাজারে দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি কাটছে না।

শিক্ষানীতি ২০১০–এর আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো পর্যাপ্ত বাজেট ঘাটতি। শিক্ষা খাতে জিডিপির তুলনায় বরাদ্দ এখনো ২%–এর আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এটি হওয়া উচিত ৪%–৬%। অর্থের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই থেমে গেছে।

অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাতীয় শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য মহৎ হলেও এর বাস্তবায়ন অর্ধেক পথে থেমে গেছে। এখন প্রয়োজন শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, শিক্ষক প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া, এবং গ্রামীণ ও প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।

আজকের বাস্তবতা আমাদের সামনে এক নতুন প্রশ্ন রাখে—শিক্ষানীতি কি শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি জাতীয় উন্নয়নের রূপরেখা হয়ে উঠবে? এর উত্তর নির্ভর করছে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ এবং নীতি বাস্তবায়নের দৃঢ়তায়।

মাতৃভূমির খবর

Link copied!