ঝাড়ফুঁক করা কি নাজায়েজ?

আপলোড সময় : ৩০-০৬-২০২৫ ০১:২০:১০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ৩০-০৬-২০২৫ ০১:২০:১০ অপরাহ্ন
যারা ঝাড়ফুঁক করে না, একটি হাদিসে যদিও এমন লোকদের প্রশংসা করা হয়েছে, তবে মনে রাখতে হবে, এই হাদিসে সব ধরনের ঝাড়ফুঁক উদ্দেশ্য নয়, জাহেলি যুগে বিশেষ ঝাড়ফুঁক উদ্দেশ্য এবং তা থেকে নিষেধ করার একাধিক কারণ রয়েছে। যথা—

প্রথমত, জাহেলি যুগে মানুষেরা বিভিন্ন অদ্ভুত প্রকারের মন্ত্র মুখস্থ করত। বিভিন্ন রোগের জন্য বিভিন্ন তন্ত্র-মন্ত্র ব্যবহার করত। এসব মন্ত্রে বেশিরভাগ জিন ও শয়তানদের কাছে সাহায্য কামনা করত। আবার কতগুলোতে মূর্তিদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হতো। মোটকথা, এসকল মন্ত্রে প্রথম সমস্যা ছিল এই যে, এগুলোর মাধ্যমে গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হতো। এগুলোতে মিশে ছিল বিভিন্ন শিরকি ভাষ্য।

দ্বিতীয়ত, আরবের লোকেরা সরাসরি এ মন্ত্রগুলোকে কার্যকরী ক্ষমতার অধিকারী মনে করত। তারা মহান আল্লাহকে মূল প্রভাবক বা কার্যকরী ক্ষমতার অধিকারী মনে করত না। তারা বিশ্বাস করত, এই মন্ত্রগুলোই স্বয়ং আরোগ্য দানকারী। যে ব্যক্তি এসব উচ্চারণ করবে, সে আরোগ্য লাভ করবে।

এই দুটি সমস্যা তো ছিলই, এর পাশাপাশি বহুক্ষেত্রে এই মন্ত্রগুলোতে দুর্বোধ্য শব্দের ব্যবহার করা হতো। আবার তাবিজেও এসব শব্দের ব্যবহার করা হতো। এই শব্দগুলোর মাধ্যমে মূলত শয়তান ও জিনদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হতো। বাহ্যতই বুঝা যায়, এসব ছিল শিরক।

আর এজন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) জাহেলি যুগের এসব মন্ত্র ও তাবিজ ব্যবহার করতে বারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে সকল লোকেরা আগের যুগের এসব মন্ত্র ও তাবিজ ব্যবহার করা থেকে বেঁচে থাকবে, মহান আল্লাহ তাদের হিসাব-নিকেশ ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’

মোটকথা, এই হাদিসে যেসব মন্ত্র ও তাবিজ থেকে বেঁচে থাকার ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলো সাধারণ তাবিজ ও ঝাড়ফুঁক নয়। বরং জাহেলি যুগের এমন সব মন্ত্র ও তাবিজ উদ্দেশ্য, যেগুলোতে শিরকের মিশ্রণ ছিল। (ইসলাহি খুতুবাত, খণ্ড : ১৫, পৃষ্ঠা : ৩৮) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) কি ঝাড়ফুঁক করেছেন? 
রাসুলুল্লাহ (সা.) একদিকে যেমন জাহেলি যুগের এসব শিরকপূর্ণ মন্ত্র ও তাবিজের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন; অপরদিকে তিনি নিজে মহান আল্লাহর পবিত্র নামের দ্বারা ঝাড়ফুঁক করেছেন। সাহাবায়ে কেরামকে তা শিখিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের শিখিয়েছেন, যখন কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়বে তোমরা এই দোয়া পড়বে—

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রব্বান নাস, আজহিবিল বাসা ওয়াশ ফি আনতাশ শাফি, লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা শিফাআল লা ইউগাদিরু সাকামা। 
বাংলা অর্থ : হে মানবজাতির রব, যন্ত্রণা দূর করে দিন, আরোগ্য দান করুন, আপনিই আরোগ্যদাতা, আপনার দেওয়া নিরাময়ই যথার্থ নিরাময়, যার পরে আর কোনো রোগ বাকি থাকে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৪৩

আরেকটি দোয়া শিখিয়েছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। দোয়াটি হলো—

বাংলা উচ্চারণ : আসআলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিমি আই ইয়াশফিয়াকা।
বাংলা অর্থ : আমি মহান আরশের মালিক আল্লাহর কাছে তোমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।

তাবিজ ও ঝাড়ফুক বৈধ হওয়ার শর্ত
মহান আল্লাহর নাম ও বিভিন্ন দোয়া কালামের মাধ্যমে যে সকল ঝাড়ফুঁক রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে স্বীকৃত ও সাহাবায়েকেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত, সেগুলো যথার্থ। তবে সেগুলোর ব্যবহারের বৈধতার জন্য বেশকিছু শর্তের প্রতি লক্ষ রাখা অতি জরুরি। অন্যথায় সেগুলোর ব্যবহারও বৈধ হবে না। শর্তগুলো হলো—

১. যেসব দোয়া-কালেমার মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করা হবে, সেগুলোতে এমন শব্দের ব্যবহার থাকা যাবে না, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। তাই যে সকল দোয়ায় কোনো বুজুর্গ বা ব্যক্তির নামের উল্লেখ করে তাদের কাছে প্রার্থনা করা হয়, সেসকল দোয়ার মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করা বা সেগুলোর মাধ্যমে তাবিজ ব্যবহার করা সরাসরি হারাম।

২. ঝাড়ফুঁক ও তাবিজে এমন কোনো শব্দ ব্যবহার করা যাবে না, যেগুলোর অর্থ দুর্বোধ্য বা যেগুলোর অর্থ অনুধাবন করা যায় না। কেননা, সেগুলোতে এমন শব্দ বা বাক্যের ব্যবহার থাকতে পারে, যাতে শিরক রয়েছে। অথবা সেই বাক্যের মাধ্যমে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে। আবার কখনো এজাতীয় শব্দের সাহায্যে শয়তানকে সম্বোধন করা হয়। শয়তানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। তাই ফকিহগণের মতে, এ ধরনের দুর্বোধ্য বাক্য সম্বলিত তাবিজ ব্যবহার করা নাজায়েজ।

তবে যদি কোরআনের আয়াত যথাযথ আদবের সঙ্গে বা মহান আল্লাহর কোনো জিকির বা দোয়া তাবিজ আকারে লিখে ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেটি জায়েজ। তবে এটি বিশেষ কোনো নেক কাজ নয়, যার জন্য আলাদা সাওয়াব পাওয়া যাবে। (যুগজিজ্ঞাসার ইসলামি সমাধান, আল্লামা মুফতি তকি উসমানি, অনুবাদ, মহিউদ্দিন কাসেমী, মাকতাবাতুল খিদমাহ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩৩০-৩৩৮)

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক: মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগ

প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক: রেজাউল করিম

অফিস :

প্রধান কার্যালয়ঃ ২৪/২৫, দিলকুশা, সাধারণ বীমা ভবন, লিফট-৪ (৫ম তলা), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ ।

রেজিঃ নং ডিএ ৬৪৪২।  নিবন্ধিত দৈনিক পত্রিকার অনলাইন নিউজ পোর্টাল নং ৮৪।