ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত

আপলোড সময় : ২৯-০৬-২০২৫ ০৯:৫৬:২৪ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৯-০৬-২০২৫ ০৯:৫৬:২৪ পূর্বাহ্ন
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহতের হিসাব দিয়ে আসছে উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ নিহতের সংখ্যা অন্তত ১ লাখ বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি হবে বলে আশা করছেন।

আনাদুলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এটি এ উপত্যকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশের সমান। ইসরায়েলের স্থানীয় হারেৎজ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজার স্বাস্থ্য বলছে, গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৩০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।

হারেৎজ বলছে, ইসরায়েলি হামলায় সরাসরি নিহত হওয়ার পাশাপাশি বহু মানুষ পরোক্ষ কারণেও প্রাণ হারিয়েছেন, যেমন অনাহার, ঠান্ডা ও রোগে ভুগে। যুদ্ধের কারণে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। হারেৎজের প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের হোলোওয়ে কলেজের অর্থনীতিবিদ ও সহিংস সংঘাতে মৃত্যুর বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গবেষক অধ্যাপক মাইকেল স্পাগাটের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

পত্রিকাটি লিখেছে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ইসরায়েলি মুখপাত্র, সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালীরা সাধারণত তাচ্ছিল্য প্রকাশ বা এগুলো অতিরঞ্জিত বলে দাবি করেন। তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের ক্রমবর্ধমান একটি অংশ বলছেন, এ তালিকাটি শুধু নির্ভরযোগ্যই নয়; বরং বাস্তবতার তুলনায় হয়তো অনেকটাই রক্ষণশীলও।

গবেষণাটিতে গাজার প্রায় ১০ হাজার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে ২ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালানো হয়। এর ভিত্তিতে জানা গেছে, চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৭৫ হাজার ২০০ মানুষের সহিংস মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। জরিপ অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও ১৮ বছরের কম বয়সি শিশু।

অন্যদিকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এক সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন সময় শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে কঙ্গো-রুয়ান্ডা চুক্তি উদ‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ট্রাম্প, যা অনেককে চমকে দেয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে। ট্রাম্প বলেন, তার বিশ্বাস, গাজায় এখন একটি যুদ্ধবিরতি খুব কাছাকাছি অবস্থায় রয়েছে। যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালানো কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার পর তিনি আশাবাদী হয়েছেন বলেও জানান। যদিও তিনি কার সঙ্গে কথা বলেছেন, তা প্রকাশ করেননি। তবে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা মনে করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই একটি যুদ্ধবিরতি পেতে যাচ্ছি।

আলজাজিরার প্রতিবেদক নূর ওদেহ বলেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অনাহারে থাকা জনগণের জন্য ‘স্বাগত সংবাদ’ হতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এই মুহূর্তে অঞ্চলের কোথাও কোনো বাস্তব আলোচনার প্রক্রিয়া চলছে না।

এদিকে যুদ্ধবিরতি বিষয়ে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বলেছে, যুদ্ধ শেষ করার যেকোনো চুক্তির আওতায় গাজায় থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে তারা প্রস্তুত। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুদ্ধ তখনই শেষ হবে, যখন হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র ও বিলুপ্ত করা যাবে। অবশ্য হামাস অস্ত্র সমর্পণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ট্রাম্পের এই যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যদ্বাণী এমন একসময়ে এসেছে, যখন গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসরায়েলের যুদ্ধনীতি নিয়ে নিন্দা বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাদের অস্ত্রহীন ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের-যারা মানবিক সহায়তা চাইছিল-তাদের গুলি করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল।

গাজার কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের এই প্রতিবেদন প্রমাণ করে যে, ইসরায়েল গাজায় ‘যুদ্ধাপরাধ’ চালাচ্ছে। যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দফতরের একজন মুখপাত্র বলেন, গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আপাতত তাদের কাছে শেয়ার করার মতো কোনো তথ্য নেই। ট্রাম্প জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার আগে উইটকফ সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সহযোগীদের সঙ্গে এক যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি চুক্তি করাতে সহায়তা করেছিলেন। তবে মার্চ মাসে ইসরায়েল একতরফা বোমা হামলার মাধ্যমে সেই যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে।

সূত্র মতে, ইসরায়েলের কৌশল বিষয়কমন্ত্রী রন ডারমার আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করবেন, যেখানে তিনি গাজা, ইরান এবং সম্ভবত নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফর নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক: মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগ

প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক: রেজাউল করিম

অফিস :

প্রধান কার্যালয়ঃ ২৪/২৫, দিলকুশা, সাধারণ বীমা ভবন, লিফট-৪ (৫ম তলা), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ ।

রেজিঃ নং ডিএ ৬৪৪২।  নিবন্ধিত দৈনিক পত্রিকার অনলাইন নিউজ পোর্টাল নং ৮৪।